ইউরোপে সুদিনের স্বপ্ন ভেস্তে সিলেটের যুবক সহ ১৯ জনের - সময়ের সংলাপ24
DHAKA WEATHER

Post Bottom Ad

খুব শীগ্রই আমরা Somoyersonglap24.com ওয়েবসাইট নিয়ে আসছি..

ইউরোপে সুদিনের স্বপ্ন ভেস্তে সিলেটের যুবক সহ ১৯ জনের

Share This
স্ত্রী, তিন ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে রাশেদ মিয়ার অভাবের সংসার। মাছের ব্যবসার আয় দিয়ে সংসার টেনে নিতে বেশ কষ্ট হয়। শেষে সচ্ছলতা ফেরাতে এক ছেলে অন্তর মিয়াকে ইতালি পাঠানোর উদ্যোগ নেন। অবৈধ পথে ইতালি পাড়ি দিতে গিয়ে ভূমধ্যসাগরে লিবিয়ার কোস্টগার্ডের হাতে অনেকের মতো অন্তর মিয়াও আটক হন।

২৬ দিন জেল খেটে গত ২৮ নভেম্বর দেশে ফিরে আসেন অন্তর। এখন বাবা রাশেদ চোখেমুখে অন্ধকার দেখছেন। চড়া সুদে ঋণ নিয়ে দালালকে দেওয়া চার লাখ টাকা এখন কীভাবে পরিশোধ করবেন, এ নিয়ে দুশ্চিন্তার শেষ নেই তাঁর।

রাশেদ মিয়া কিশোরগঞ্জের ভৈরব পৌর শহরের লক্ষ্মীপুর এলাকার বাসিন্দা। তাঁর ছেলে অন্তরের মতো একই দিন ভৈরবের আরও ১৮ যুবক আশাহত হয়ে দেশে ফিরে আসেন। রাশেদ বলেন, ‘অভিভাবক হিসেবে সব সময় সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তায় থাকতাম। মনে হতো, নিজের চেষ্টায় সংসারে সচ্ছলতা আনতে পারলাম না, সন্তানকে দিয়ে ফেরানো যায় কি না। সেই কাজ করতে গিয়ে আজ আমি সর্বস্বান্ত হয়ে গেছি।’ অন্তর এখন নিজেকে আড়াল করে চলছেন। কথাও কম বলছেন। কিছু জানতে চাইলে এককথায় জবাব দেন, ‘সব শেষ হয়ে গেছে। মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এলাম।’

রাশেদের মতো ভৈরবের ওই ১৮ যুবকের পরিবারগুলোরও সুদিন ফেরানোর স্বপ্ন ম্লান হয়ে গেছে। পরিবারগুলো বলছে, দালার চক্র শুধু লিবিয়ায় পৌঁছানো বাবদ কারও থেকে চার লাখ, কারও কাছ থেকে তার চেয়ে বেশি টাকা নিয়েছে। ইতালি পৌঁছানোর পর আরও দুই লাখ টাকা দেওয়ার কথা ছিল।

ইতালি পৌঁছাতে গত ৩০ অক্টোবর লিবিয়া থেকে ভূমধ্যসাগর দিয়ে ১৫২ জনের একটি দল পাঠায় দালাল চক্র। কিছু দূর যেতেই লিবিয়ার কোস্টগার্ডের হাতে ধরা পড়ে যায় দলটি। পরে তাঁদের লিবিয়ার ত্রিপোলিতে কারাগারে কাটে ২৬ দিন। অবশেষে লিবিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রচেষ্টা এবং আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) সক্রিয় সহযোগিতায় তাঁদের দেশে ফেরত আনা হয়েছে।

ভৈরবের ভাগ্যহত অন্য ১৮ যুবক হলেন পৌর এলাকার জগন্নাথপুরের মনিরুজ্জামান, মারুফ মিয়া, শান্ত মিয়া, মেহেদী হাসান, পৌর এলাকার লক্ষ্মীপুরের মো. ইমরান, আমিনুল ইসলাম, তুহিন মিয়া, মোহাম্মাদ মিয়া, জোনায়েদ আহমেদ, ভৈরবপুর এলাকার সাব্বির মিয়া, ওলি উল্লাহ, উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের ছনছাড়া গ্রামের সুজন আহমেদ, শম্ভুপুর গ্রামের রনি মিয়া, মঈন খান, রঘুনাথপুর গ্রামের উজ্জ্বল মিয়া, বড় রাজাকাটা গ্রামের রিমন মিয়া, জীবন মিয়া এবং ভাটিকৃষ্ণগর গ্রামের সাগর মিয়া।

স্বপ্ন ভঙ্গ হওয়ার পর মনিরুজ্জামান বলেন, ‘অবৈধ পথে ইউরোপ যেতে গিয়ে পদে পদে বাধা আর জীবনের ঝুঁকি ছিল। এত ঝুঁকির পরও মনকে আশ্বাস দিয়েছি, কোনো রকম গন্তব্যে পৌঁছাতে পারলে টাকা রোজগার করা যাবে। দেশে টাকা পাঠাব। ওই টাকা পেয়ে পরিবারের সদস্যরা খুশি হবেন। পরিবারের সচ্ছলতা ফিরবে।’ ছনছাড়া গ্রামের সুজন আহমেদ বলেন, দালালের মুখের কথা আর বাস্তবে রাত-দিন ফারাক ছিল। সবকিছুতেই বাড়তি কষ্ট করতে হয়েছে। নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে। বাবা ধারদেনা করে আনা টাকার ক্ষতি কীভাবে পুষিয়ে উঠবেন, এখন চিন্তা বলতে এটিই। রঘুনাথপুর গ্রামের উজ্জ্বল মিয়া জানালেন, পুলিশের হাতে ধরা পড়ার পর তাঁরা শারীরিকভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।

জগন্নাথপুর এলাকার মারুফ মিয়া বলেন, ‘শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নিজেদের সবচেয়ে বেশি অসহায় মনে হচ্ছিল। অন্যদের আচরণে আমরা মানুষ কি না, সন্দেহ জাগছিল। অনেক সমস্যার মধ্যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় দেশে ফিরতে পেরেছি, এতেই স্বস্তি।’

ভৈরব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লুবনা ফারজানা বলেন, কারও উচিত নয় অবৈধ পথে বিদেশে যাওয়া। ফেরত আসা যুবকেরা যদি আবার বিদেশ যেতে চান, তাহলে অবশ্যই বৈধ পথে যাওয়া উচিত এবং প্রশিক্ষণ নিয়ে যাওয়া উচিত। সে ক্ষেত্রে উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতা করার সুযোগ রয়েছে।

-সময়ের সংলাপ২৪/ডি-এইচ

কোন মন্তব্য নেই: