প্রেম, ভালোবাসা কিংবা বিয়ে- একসঙ্গে থাকা,হাতে হাত ধরে পথচলা- এই স্বপ্নটুকু নিয়ে বেঁচে আছেন অনেক মানুষ। আবার কেউ এসবের ধার না ধরে একলা চল রে নীতিতে বিশ্বাসী। কিন্তু দিনশেষে লাভ-ক্ষতির হিসেবে কে জয়ী সেই তর্ক বোধহয় এবার এগিয়েই যাবেন “একলা চল”র দল- কারণ সম্প্রতি বেশ কিছু গবেষণায় জানা গেছে যে, যারা কোন ধরনের রোমান্টিক সম্পর্কের সাথে জড়িত, তাঁদের ওজন বাড়ার ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে বেশি! বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে এই হার পুরুষের চাইতে অনেকটাই উচ্চ। আর বাড়তি ওজন মানেই বাড়তি স্বাস্থ্য ঝুঁকি ও স্বাস্থ্যহানি।
যারা বিবাহিত তাঁদের মাঝে স্বাস্থ্যগত অবস্থা ভালো ও আয়ু বেশি এটা বেশ অনেক আগে থেকেই পরিলক্ষিত হয়েছে, কিন্তু একজন পুরুষ সঙ্গীর উপস্থিতি ও ক্রমাগত সঙ্গ নারীদের ওজন বৃদ্ধিতে সহায়ক হিসেবে কাজ করে। গত কিছুদিনের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৭,০০০ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মাঝে একটি পরীক্ষা করা হয়। পর্যবেক্ষণে দেখা যায় সেখানে সম্পর্ক নির্বিশেষে সকল নারী পুরুষই ওজন বৃদ্ধির ঝুঁকিতে রয়েছেন কিন্তু সেইসাথে যেসব নারী বিবাহিত বা প্রেমের সম্পর্কে জড়িত রয়েছেন, ওজন বৃদ্ধির হার তাঁদের মাঝে তুলনামূলকভাবে বেশি। যারা বিবাহিত নন কিন্তু সঙ্গীর সাথে একত্রে বাস করেন শতকরা ৬৩ ভাগ নারী ও ৩০ ভাগ পুরুষের ওজন ক্রমাগত বেড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বিবাহিত যুগলে এই হার ভয়াবহভাবে বেশি, পুরুষে শতকরা ১০৭ ভাগ ও নারীতে ১২৭ ভাগ!
বেশ কিছুদিন আগে অস্ট্রেলিয়াতে নারী স্বাস্থ্যের উপর প্রায় দশ বছর ধরে করা একটি গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হয়। সেই গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্যাদি বিশ্লেষণ করে তাঁরা দেখেন যে, তাঁদের গবেষণায় থাকা নারীদের মাঝে যারা একলা থাকেন তাঁদের ওজন বৃদ্ধি পেয়েছে ১১ পাউন্ড, বিয়ে করেননি কিন্তু সঙ্গীর সাথে থেকেছেন এমন নারীদের ক্ষেত্রে তা ১৫ পাউন্ড এবং বিয়ে করে বাচ্চার মা হয়েছেন এমন নারীদের জন্য তা ২০ পাউন্ড পর্যন্ত!
অবশ্য এক্ষেত্রে বিজ্ঞানীরা স্বীকার করেছেন যে, যারা মা হয়েছেন, তাঁদের শরীরে হরমোন এবং অন্য অনেক পরিবর্তন এসেছে এবং ওজন বৃদ্ধি পাওয়ার ব্যাপারটি এক্ষেত্রে স্বাভাবিক ও প্রয়োজনীয়। কিন্তু যারা শুধুই প্রেম করেন, অথবা মা হননি তারপরেও তুলনামূলকভাবে ওজন বৃদ্ধি পেয়েছে তাদের ক্ষেত্রে এর কারণ ব্যাখ্যা করতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে বিজ্ঞানীদের। কারণ হিসেবে তাঁরা বলেছেন, হয়তো বা সঙ্গীর সাথে কাজ ভাগাভাগি করায় কম শারিরীক পরিশ্রম, রেগুলার ডেটে গিয়ে ভারী খাবার খাওয়া, সঙ্গী একে অপরের নিয়মিত খোঁজ রাখায় খাবারের অনিয়ম কম হওয়া ইত্যাদি। আবার অনেকে বলেছেন, নির্দিষ্ট সঙ্গী পেয়ে গেলে ওজন কমিয়ে নতুন কাউকে আকৃষ্ট করার প্রবণতা কমে যাওয়াটাও ওজন বৃদ্ধির কারণ হতে পারে।
কিন্তু ওজন বাড়ার ভয়ে প্রেম করবেন না, তাই কী হয়। যারা এ নিয়ে শংকিত হচ্ছেন, তাঁদেরকে আশার বানী শুনিয়েছেন জীবন শৈলীর কারিগরেরা। তাঁদের মতে একজন চমৎকার সঙ্গী হতে পারেন আপনার ওজন কমানোর হাতিয়ার। এক সঙ্গে জিমনেসিয়াম বা সাঁতারে গিয়ে, স্বাস্থ্যের প্রতি পরস্পরকে সচেতন করে, নিজের খাবার ভাগাভাগি করে দুজনেই হতে পারেন চমৎকার স্বাস্থ্যের অধিকারী। পারস্পরিক যত্নে নিয়ম মতো চলুন, আর দুজনে হাতে হাত ধরে ওজন নিয়ন্ত্রণ করে এই এত্তসব গবেষণাকে বুড়ো আঙুল দেখান। তখন সঙ্গী আর সৌন্দর্য দুই-ই থাকবে আপনার হাতে।
-সময়ের সংলাপ২৪/ডি-এইচ