অসাম্প্রদায়িক ও মুক্তমনা ব্যক্তিদের লেখা পাঠ্যপুস্তক থেকে বাদ দেওয়ার মধ্য দিয়ে জঙ্গিবাদীদের চাওয়ার বাস্তবায়ন ঘটেছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে কয়েকটি সংগঠনের পক্ষ থেকে।
“এসব যারা করছে, তারা বাংলাদেশকে ভবিষ্যতে জঙ্গিবাদের অভয়ারণ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত,” বলেছেন ওই সংগঠনগুলোর অন্যতম উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর সভাপতি সফিউদ্দিন আহমদ।
পাঠ্যপুস্তকে সাম্প্রদায়িক ও ধর্মীয় বৈষম্যমূলক বিষয় অন্তর্ভুক্তি, গুরুত্বপূর্ণ ও প্রগতিশীল লেখকদের লেখা বাদ দেওয়াসহ নানা অসঙ্গতির প্রতিবাদে কর্মসূচি ঘোষণার এক সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন তিনি।
‘প্রগতিশীল গণসংগঠনগুলো’ ব্যানারে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ওই সংবাদ সম্মেলন থেকে আগামী ১৫ জানুয়ারি রোববার সকালে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়। একইসঙ্গে প্রতিটি জেলায় শিক্ষা অফিসারের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান সমাবেশ পালন করা হবে।
পাঠ্যপুস্তকে ভুল নিয়ে অব্যাহত সমালোচনার মধ্যে এই সংবাদ সম্মেলনে এই সংগঠনগুলো বলেছে, সাম্প্রদায়িক, লিঙ্গ বৈষম্যমূলক মানসিকতার প্রকাশও ঘটেছে সরকারের বিনামূল্যে বিতরণের এই বইগুলোতে।
উদীচী সভাপতি অধ্যাপক সফিউদ্দিন বইগুলোর মলাটের পেছনে সরকার প্রধানের বন্দনার সমালোচনাও করেছেন।
তিনি বলেন, “মলাটের পেছনে দলীয় চাটুকারিতার নির্লজ্জ নজির রেখে পুরো পাঠ্যপুস্তককে দলীয় প্রচারপত্র বানানো হয়েছে।”
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে উদীচীর সাধারণ সম্পাদক জামসেদ আনোয়ার তপন বলেন, “বর্তমানে এক ভয়ানক সাম্প্রদায়িক বিষে আক্রান্ত আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা। পাঠ্যপুস্তকের ঝকঝকে মলাটের ভেতরে বীভৎস মৌলবাদী পরিকল্পনায় ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে সম্প্রদায়গত, জাতিগত এবং নারী-পুরুষের বৈষম্য।”
পাঠ্যপুস্তক থেকে লালন শাহের দর্শন, সত্যেন সেন ও রণেশ দাশগুপ্তের মানব দর্শন, এস ওয়াজেদ আলী ও অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদের মতো প্রগতিশীল লেখকদের লেখা বাদ দেওয়ার সমালোচনাও করা হয় সংবাদ সম্মেলনে।
হেফাজতে ইসলাম পাঠ্যপুস্তকের যে লেখাগুলো বাদ দেওয়ার দাবি তুলেছিল, সেগুলোই বাদ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
তপন বলেন, সরকার পাঠ্যপুস্তকে জঙ্গিবাদের ‘সুপ্ত উপাদান ঢুকিয়ে দিচ্ছে’। পাঠ্যপুস্তকগুলোতে হেফাজত-চরমোনাই পীরের পাকিস্তানি দর্শন ‘প্রতিফলিত’ হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলন থেকে অবিলম্বে ‘সাম্প্রদায়িক, বৈষম্যমূলক ও ভুলে ভরা’ পাঠ্যপুস্তক প্রত্যাহার এবং এতে জড়িতদের শাস্তি; রাষ্ট্রের চার মূলনীতি গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদের আদর্শের ভিত্তিতে পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন; প্রগতিশীল লেখকদের লেখা সংযোজনসহ আট দফা দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন চলচ্চিত্রকার মসিউদ্দিন শাকের, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সাবেক ডিন চিত্রশিল্পী অধ্যাপক মতলুব আলী, কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসরের সাধারণ সম্পাদক মোখলেসুর রহমান সাগর, প্রগতি লেখক সংঘের সংগঠক কবি সাখাওয়াত টিপু, যুব ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হাফিজ আদনান রিয়াদ, ছাত্র ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক সুমন সেনগুপ্ত, ঢাকা মহানগর সংসদের সভাপতি অনিক রায় প্রমুখ।
সময়ের সংলাপ24/ডি-এইচ
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন