ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে যাত্রীদের কাছে এনা বাস তার বেপরোয়া গতির কারণে বেশি পরিচিত। সড়কটিতে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনায়ও এনা বাসকে দায়ী করছেন যাত্রীরা। দুর্ঘটনা নিয়ে কাজ করা একটি বেসরকারি সংস্থার পর্যবেক্ষণেও দুর্ঘটনা প্রবণ হিসেবে এনার নাম রয়েছে এক নম্বরে।
‘এনা বাস দেখা মাত্রই নিরাপদ দূরত্বে গাড়ি সাইড করি। বাস চলে যাওয়ার পর আবার রওয়ানা দেই’ – নিয়মিত নিজের প্রাইভেটকারে চলাচলকারী সাফওয়ান রহমান নামের এক ব্যবসায়ী একথা বলেছেন।
এ বাসে উঠে নিরাপদে নামতে পারলেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন যাত্রীরা। ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-ময়মনসিংহ দুই মহাসড়কেই রীতিমতো আতঙ্ক এনা বাস।
সেন্টার ফর ইঞ্জুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ বাংলাদেশ (সিআইপিরবি) নামে সংগঠনটি সড়কের প্রকৌশলগত ত্রুটি, এডুকেশন এবং অ্যাডভোকেসি নিয়ে কাজ করে।
তাদের পর্যবেক্ষণেও দেখা গেছে, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ৩০ থেকে ৩৫ ভাগ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী দূরপাল্লার বাস। আর সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছে এনা বাস। মহাসড়কে এ বাসের গতি যেখানে ৮০ থাকার কথা, সেখানে ১০০ থেকে ১২০ গতিতে ছুটে চলে।
সিআইপিরবি’র গবেষক প্রকৌশলী আরিফ উদ্দিন জানান, এনা বাসের দুর্ঘটনার কারণ তার বেপরোয়া গতি। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের হবিগঞ্জ, আশুগঞ্জ থেকে সিলেট পর্যন্ত ১৫টি ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্ট সহ এ মহাসড়কে অন্তত ৩০ ঝুঁকিপূর্ণ স্পট রয়েছে। যেগুলো ব্লাকস্পট হিসেবে এখনও চিহ্নিত নয়।
যাত্রীরা জানান, ঢাকা-সিলেট রুটে এনা বাসের চালক অন্য বাসের সঙ্গে যেন প্রতিযোগিতায় মেতে ওঠেন। কত দ্রুত পৌঁছাতে পারেন গন্তব্যে সেই চেষ্টায় থাকেন সব সময়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মাশুরুর বলেন, বাড়িতে যাওয়ার জন্য এনা বাসে উঠি। কয়েকবার গিয়ে আর যাবো না শপথ করেছি। কারণ এনা বাসের চালক যাত্রীদের জীবনকে তুচ্ছ মনে করে। মহাখালী থেকে উত্তরা হয়ে টঙ্গী পেরিয়ে ঢাকা-সিলেটে মহাসড়কে ওঠে এনা। আর তখনই গতি বেড়ে যায় বাসের। সড়ক পথে না আকাশ পথে বাসটি চলছে, তা কেবল বাসের যাত্রীরাই বুঝতে পারেন।
ঢাকা-সিলেট রুটে গত ঈদে এনার বাসচাপায় একই পরিবারের ৭ জন নিহত হয়েছিলেন। কয়েক মাস আগে খিলক্ষেতে একইভাবে প্রাইভেটকারকে চাপা দিলে একই পরিবারের তিনজন নিহত হন।
এনা বাসের মালিক খন্দকার এনায়েতুল্লাহ বলেন, ‘কোনো মালিক চায় না দুর্ঘটনা ঘটুক’।
তবে, ঈদের সময় চালকরা বেপরোয়া গতিতে ছুটেছে। ওই সময় স্পিড লিমিট ভেঙে ফেলেছিলো ড্রাইভাররা। ঈদের পরে আবার কঠোরভাবে সর্বোচ্চ গতি ৮০ কিলোমিটার মানা হচ্ছে।’
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানান, ‘এখন রাস্তা ভালো। এ কারণে গাড়ির ট্রিপ বাড়ানোর জন্য চালকরা বেপরোয়া গতি ছুটে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছে। সাম্প্রতিক দুর্ঘটনায় বিবেচনায় এনে মালিক শ্রমিক সহ সবপক্ষ নিয়ে বৈঠক হয়েছে। বৈঠকের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হবে।-সময়ের সংলাপ24/ডি-এইচ
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন