করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে দেশে চলছে অঘোষিত লকডাউন। গত ২৬ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে সব ধরনের যানচলাচল। সীমিত আকারে খোলা রয়েছে ওষুধ ও নিত্যপণ্যের দোকান। এভাবে অতিবাহিত হয়েছে এক সপ্তাহ।
পরিস্থিতির পর্যবেক্ষণ করে সরকার ছুটি বাড়িয়েছে আরও এক সপ্তাহ। করোনার উপসর্গ অনেক সময় ব্যক্তির মধ্যে আট থেকে ১০ দিন সুপ্ত থাকে।
এরপর হঠাৎ করোনার লক্ষণ ও উপসর্গ দৃশ্যমান হয়। তাই এসময় আক্রান্ত ও সুস্থ ব্যক্তির গৃহে অবস্থান নিশ্চিত করা না গেলে ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
তাই বলা হচ্ছে, করোনা সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকিপূর্ণ সপ্তাহে পা রেখেছে দেশের লকডাউন। করোনা ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকিপূর্ণ সময় অতিক্রম করছে এই মর্মে পাড়া-মহল্লায় মাইকিং করা হচ্ছে।
কিন্তু তবুও রাজধানীর অলিগলিতে মানুষের জটলা লক্ষ্য করা গেছে। চায়ের দোকান বন্ধ থাকলেও বাসা থেকে নেমে সড়কে অলস আড্ডায় মত্ত থাকতে দেখা গেছে। বাচ্চারা খেলতে নেমেছে উন্মুক্ত সড়কে।
মাসের পয়লা দিনে অনেকে আবার বাসা বদলও সেরেছে। রাজধানীর অলিগলি থেকে মূল সড়কে বেড়েছে মোটর বাইক ও ব্যক্তিগত গাড়ির দৌরাত্ম্য। পুলিশ ও সশস্ত্রবাহিনী এই দৌরাত্ম্য বন্ধে মোড়ে মোড়ে টহলও বসিয়েছে।
আগের মতো লাঠিচার্জ করেনি পুলিশ। আবার মামলায়ও জর্জরিত করেনি। করোনার ঝুঁকির কথা বুঝিয়ে বাড়ি পাঠিয়েছে এসব গাড়ির আরোহীদের। অনেক জায়গায় জরিমানা এবং মামলা দিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ ও সশস্ত্রবাহিনীর যৌথ টহল গাড়ি কোনো জায়গা ছেড়ে চলে যাওয়ার পর মানুষ আবার রাস্তায় নেমে এসেছে। এমন চিত্র রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, শনির আখড়া, পোস্তগোলা, গেন্ডারিয়া, কোতোয়ালি, বাংলাবাজার, ইসলামপুর, নবাবপুর, গুলিস্তান, মতিঝিল, ধোলাইখাল, আজিমপুর, কমলাপুর ও লালবাগ এলাকায় দেখা গেছে।
পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়ায় বাসা বদল করছিলেন এমন এক পরিবার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, করোনা ভাইরাসের এই সময়ে আমরাও বাসা ছাড়তে চাইনি।
কিন্তু যেখানে উঠবো তাদের অ্যাডভান্স টাকা পরিশোধ করেছি। তাদের ফ্ল্যাটও আজ (বুধবার) ফাঁকা হচ্ছে। এক মাস পরে উঠলে এই মাসের ভাড়ার টাকা তাদের দিতে হবে। এখন উপায় না পেয়ে বাসা বদল করছি।
যাত্রাবাড়ীর ধলপুর বউ বাজার এলাকায় সড়কে শিশুদের দল বেঁধে ক্রিকেট খেলতে দেখা গেছে। শিশুদের পরিবারগুলোর এ ভ্রুক্ষেপ নেই। ভাইরাস সংক্রমিত হওয়ার এই সময়ে শিশুরা এভাবে জড়ো হয়ে রাস্তায় খেলছে বাধা দিচ্ছেন না কোনো অভিভাবক।
সেখানে সিফাত নামের এক শিশুর মা বলেন, বাচ্চারা কি এভাবে ঘরে আটকা থাকতে চায় বলেন? কি করবো দূরে যেতে দেই না বাসার নিচেই একটু খেলাধুলা করে। বাধা দিলেও শোনে না।
জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, করোনার ভাইরাস সংক্রমণের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ সময় হলো আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে ভাইরাস অবস্থানের সময় যখন প্রথম সপ্তাহ অতিক্রম করে।
সেই হিসেবে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনের আমরা এক সপ্তাহ পার করে ফেলেছি। ঝুঁকিপূর্ণ দ্বিতীয় সপ্তাহে রয়েছি। এ সময়ে সবার হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করা না গেলে ভাইরাস নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
এদিকে গতকালও দেশে তিন ব্যক্তির শরীরে করোনার উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়েছে। এ নিয়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৪ জনে।
এদের মধ্যে নতুন করে আরও একজন মারা গেছেন। ফলে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ছয়জনে। ভাইরাসটি থেকে সুস্থ হয়েছেন আরও একজন। মোট সুস্থ হয়েছেন ২৬ জন।
গতকালকের সরকারি ব্রিফিংয়ে বলা হয়েছে, গতকাল পূর্বের ঘণ্টায় আরও ১৫৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। ৯ জনকে আইসোলেশনে নেয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত আইসোলেশনে আছেন ৭৩ জন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সাইফ উল্লাহ মুন্সী বলেন, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে ঘরে অবস্থানের বিকল্প নেই। সরকার সবাইকে ঘরে থাকতে নির্দেশ দিচ্ছে। আমরা বলছি ১৪ দিনের গৃহে অবস্থানের নির্দেশনার মাত্র এক সপ্তাহ অতিক্রান্ত হয়েছে।
আগামী এক সপ্তাহ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ এসময় অনেকের উপসর্গগুলো দৃশ্যমান হতে পারে। তাই সাধারণ মানুষ যদি বাসায় অবস্থান না করে বের হয়ে আসে তাহলে ভাইরাসের আক্রমণ ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ এটা বলে আমরা আতঙ্ক ছড়াতে চাই না। আমরা বলতে চাই নিজের ও পরিবারের স্বাস্থ্য ঝুঁকি এড়াতে সবার এখন ঘরে থাকা প্রয়োজন।
সরকার ছুটি বাড়িয়ে দিয়েছে। অসহায়দের পাশে দাঁড়িয়েছে এরপরও রাস্তায় বেরিয়ে আসা দুঃখজনক। এই সময়ে কেউ কোয়ারেন্টাইন না মানলে নিজের ও পরিবারের ক্ষতি হতে পারে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, করোনা ভাইরাস সংক্রমণরোধে সরকার জনগণকে অত্যাবশ্যকীয় প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হতে নিষেধ করলেও অনেকে এ নির্দেশনা মানছেন না।
রাজধানীসহ সারা দেশে অনেকেই রাস্তায় বের হচ্ছেন, বাজারে ঘোরাফেরা করছেন ও চায়ের স্টলে আড্ডা মারছেন। বিশেষ করে ঢাকা থেকে যারা গেছেন তারাই ঘোরা-ফেরা বেশি করছেন। দেশকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলবেন না। ঘরে থাকুন, নিরাপদে থাকুন। -আমারসংবাদ
-সময়ের সংলাপ২৪/ডি-এইচ
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন