সিলেটে তিন সন্তানের জন্য পঙ্গু বাবার আকুতি… - সময়ের সংলাপ24
DHAKA WEATHER

Post Bottom Ad

খুব শীগ্রই আমরা Somoyersonglap24.com ওয়েবসাইট নিয়ে আসছি..

সিলেটে তিন সন্তানের জন্য পঙ্গু বাবার আকুতি…

Share This
‘করোনা আওয়ার পর তাকি ওডল (হোটেল) বন (বন্ধ)। এর লাগি মিশুক ছালানির লাগি বাড়া (চালানোর জন্য ভাড়া) আনছিলান। ইকটাও (এটি) ছালাইতে (চালাতে) দেয়না ফুলিশ (পুলিশ) আর বিডিআরে (বিজিবি)। এখন বাড়াও (ভাড়া) দিতে পারিনা, আর টেকাও (টাকা) নাই। তিন হরুতা আর বউ (সন্তান ও স্ত্রী) লইয়া কুব খস্টে (খুব কষ্টে) দিন কাটের। ঘরও খাওয়া নাই; ফকেটও টেকা নাই। আমি লেঙ্গড়া মানুষ, আর কোন খামও (কাজ) পারিনা। এখন হরুতাইনতরে কিলান খাওয়াইতাম আর কিলান তারারে বাছাইতাম (বাঁচাবো)। চাইরদিন ধরি প্রায় উপাস দিন কাটে। হুরুতাইনতরে তুড়া তুড়া (অল্প অল্প) করি কোনরকম খাওয়া দেই। আর আমরা খালি পেটে তাকি।’

এভাবেই নিজের অসহায়ত্বের কথা বলছিলেন সিলেটের সীমান্তবর্তী কানাইঘাট উপজেলার সুরইঘাট কালীনগর গ্রামের অলিউর রহমান। করোনা সংক্রমণ রোধে বাজার বন্ধ করে দেওয়ায় তার ‘টং’ দোকানটি বন্ধ করে। সুরইঘাট রেখেছেন। বাজারে ওই দোকানে তিনি চানা-পেঁয়াজু-বেগুনী বিক্রি করতেন। আর তা থেকেই কোন রকমে পরিবার চালিয়ে নিচ্ছিলেন। তবে দোকান বন্ধ হওয়ায় তিনি বিপাকে পড়েছেন। এখন স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে বেঁচে থাকার সংগ্রাম চালাতেও পারছেন না তিনি, অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে সহযোগিতার।

অলিউর রহমান বলছিলেন, ‘দুই ছেলে আর এক মেয়ে তার। তিনিসহ পরিবারের সদস্য সংখ্যা পাঁচজন। তিনি জন্মের পঙ্গু নন। ২০১৫ সালে একটি দুর্ঘটনা তার জীবনের কাল হয়ে দাঁড়ায়। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় তিনি প্রাণে রক্ষা পেলেও তার ডান পা কেটে ফেলতে হয়। তখন তার চিকিৎসায় কয়েক লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এরপর থেকেই তার জীবনে টানাপোড়েনের শেষ হচ্ছে না। নুন আনতে পান্তা ফুরায়, এই অবস্থায় চলছে তার জীবন। তবে করোনার কারণে এখন সেই অবস্থাও নেই।’

তিনি বলেন, তিনি কাজ করে খেতে ভালোবাসেন, এজন্য বাজারের একটি টং দোকান দিয়েছিলেন। কিন্তু টং বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর তিনি বিকল্প হিসেবে একটি মিশুক ভাড়া নেন। মনে করেছিলেন, তা থেকে ২০০-৩০০ টাকা পেলে কোন রকমে পরিবার চালিয়ে যেতে পারবেন। কিন্তু পুলিশ ও বিজিবি রাস্তায় গাড়ি চলাচল পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছে। যে কারণে মিশুকের মালিককে ভাড়া দেওয়াও তার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। এখন তিনি একদম নিরুপায়।

ইউনিয়ন থেকে কয়েকদিন আগে ৬ কেজি চাল দিয়েই কাজ শেষ করা হয়েছে। এরপর কেউ আর খোঁজ নেয়নি তার পরিবারের। এ কারণে এখন বেশিরভাগ সময়ই ঘরে বসে থাকেন খাবারের অপেক্ষায়। তার সন্তানেরা খাবারের জন্য অনেক সময় কান্নাকাটিও করে, কিন্তু সেভাবে তিনি তাদের খাবার তুলে দিতে পারছেন না। তিনি বলছিলেন, অবস্থা এমন হয়েছে যে করনা (করোনা) হওয়ার আগে না খেয়েই আমাদের মরে যেতে হবে।’

বৃহস্পতিবার দুপুরে তার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, একটি মাটির ছোট ঘরেই ছেলে-মেয়ে স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে থাকছেন তিনি। এই গ্রামের বেশিরভাগ লোকই হতদরিদ্র এবং দিনমজুর। এ কারণে ইচ্ছে থাকলেও গ্রামের প্রতিবেশী কেউ তার সহায়তায় এগিয়ে আসতে পারছেন না। এজন্য তিনিসহ গ্রামের অনেকেই সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতার দিকে পথ চেয়ে আছেন।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য সিরাজ আহমদ বলেন, ‘অলিউর রহমানের বিষয়টি তার জানা আছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে পরিষদের সীমাবদ্ধতার কারণে সেভাবে সহযোগিতা দেওয়া যাচ্ছেনা। ’

তবুও তিনি চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলে আরও সহযোগিতার ব্যবস্থা করা যায় কি না, তা দেখবেন। -সুরমা নিউজ

-সময়ের সংলাপ২৪/ডি-এইচ

কোন মন্তব্য নেই: