দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাস রোধে বন্ধ করা হয় সবকিছু। সেই লকডাউন উপেক্ষা করে খ্যাতিমান ও দেশবরেণ্য ইসলামী আলোচক আল্লামা মাওলানা যুবায়ের আহমদ আনসারীর জানাজায় লাখো মানুষের সমাগম ঘটেছে।
লকডাউনের মধ্যে এমন জমায়েত নিয়ে আলোচনা চারপাশে। কারা অনুমতি দিয়েছে। কিভাবে এতো লোক একসঙ্গে জমায়েত হয়েছে এ নিয়ে চলছে সমালোচনা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশ্ন উঠেছে এভাবে জানাজার আয়োজন হলে সারা দেশে লকডাউন দিয়ে লাভ কি? মানুষকে ঘরবন্দি করে রাখার মানে কী?
করোনা পরিস্থিতিতে জেলার লকডাউন উপেক্ষা করে সামাজিক দূরত্ব বজায় না রেখেই শনিবার (১৮ এপ্রিল) সকালে লাখো মানুষ জানাজায় অংশগ্রহণ করেন।
এ অবস্থায় স্থানীয় প্রশাসন অনেকটা নীরবতা পালন করেছে। তবে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে ঝুঁকি থাকায় করোনা ছড়ানোর আশঙ্কা তো থেকেই যাচ্ছে। দেশব্যাপী করোনা মহামারী পরিস্থিতিতে লকডাউন উপেক্ষা করে বিপুল সংখ্যক মানুষ তার জানাজায় অংশ নেন।
শনিবার সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জামিয়া রহমানিয়া বেড়তলা মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে এই জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। তবে মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে জায়গা সংকুলান না হওয়ায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের দুই পাশেও হাজার হাজার মানুষ জানাজায় শরিক হন।
একদিকে বিশ্বরোড মোড় হয়ে সরাইলের মোড় পর্যন্ত অন্যদিকে আশুগঞ্জে কাছাকাছি গিয়ে ঠেকে লোকজন। এছাড়া ওই এলাকার বিভিন্ন ভবনের ছাদেও মানুষের উপস্থিতি দেখা গেছে। জেলার শীর্ষ আলেম ওলামা ছাড়াও মাদ্রাসার ছাত্র এবং সাধারণ মানুষ জানাজায় অংশ নেন।
সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহাদাৎ হোসেন টিটু লাখো মানুষের সমাগমের বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ছাড়াও ঢাকা থেকে লোকজন এসেছেন। আমরা চিন্তাও করতে পারি নি যে এত লোকসমাগম হবে। লোকজন আসতে শুরু করার পর আমাদের আর কিছু করার ছিল না। তবে বলার পর উপস্থিত লোকজন সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়ান বলে দাবি করেছেন ওসি।
এদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সিভিল সার্জন ডা. একরাম উল্লাহ বলেন, যেখানে করোনা ঝুঁকির কারণে একসঙ্গে মসজিদে নামাজ আদায় না করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। সেখানে কীভাবে এতো লোকসমাগম হল বোধগম্য নয়। এই লোক সমাগমের কারণে করোনা ঝুঁকির মাত্রা বেড়ে যাবে।
এদিকে জনসমাগমের ব্যাপারে সরাইল উপজেলা নির্বাহী অফিসার এএস মুছা বলেন, এক্ষেত্রে আমার কোনো বক্তব্য নেই। জেলার উপরমহল থেকে বক্তব্য নেন।
এদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন জানান, সকাল থেকে বেড়তলা মাদ্রাসার কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ রাখছিলাম। আমাদের পক্ষ থেকে উনাদের বুঝানোর চেষ্টা করা হয়। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার জন্যে বার বার বলা হয়। এ নিয়ে এলাকায় মাকিংও করা হয়েছে। কিন্তু আমরা শেষ চেষ্টা করেও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে পারিনি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খান বলেন, উনারা (মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ) আমাদের বলেছিলেন সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করবেন। কিন্তু সেটা তারা কেন করেননি তা ক্ষতিয়ে দেখা হবে।
উল্লেখ্য, গতকার শুক্রবার (১৭ এপ্রিল) বিকেল ৫.৪৫ মিনিটে বি-বাড়িয়ার মার্কাজপাড়ার আনছারি মঞ্জিলে হাফিজ মাওলানা জুবায়ের আহমদ আনছারি ইন্তেকাল করেন। দেশ-বিদেশে খ্যাতিসম্পন্ন ইসলামি সুবক্তা হাফিজ মাওলানা জুবায়ের আহমদ আনছারী দীর্ঘদিন থেকে দুরারোগ্য ব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন। তিনি দেশ-বিদেশে চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন। চিকিৎসকদের পরামর্শমতে তিনি মার্কাজপাড়ার আনছারি মঞ্জিলে গত কয়েক মাস থেকে অবস্থান করছিলেন।
অসুস্থতার কারণে সকল ইসলামি প্রোগ্রাম বাতিল করে দিয়েছিলেন। গত কয়েক দিন ধরে শারিরীক অবস্থা খারাপ থাকার পর গতকাল বিকেল ৫.৪৫ মিনিটে তিনি নিজ বাড়িতেই শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে জুবায়ের আহমদ আনছারীর বয়স ছিলো ৫৮ বছর। তিনি স্ত্রী, ৩ ছেলে ও ২ মেয়ে এবং অসংখ্য ছাত্র ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
-সময়ের সংলাপ২৪/ডি-এইচ
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন