সন্তানসম্ভবা স্ত্রীর পাশে থাকতে এখন সুদূর যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন বাংলাদেশ সেরা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। তবে প্রিয় স্বদেশ ও মানুষের প্রতি নিজের দায়িত্ববোধ ভুলে যাননি তিনি।
করোনাভাইরাসের প্রকোপে বিপর্যস্ত গোটা দেশ। উদ্ভূত সংকটময় পরিস্থিতি মোকাবেলায় ‘দ্য সাকিব আল হাসান ফাউন্ডেশন’ গড়ে দুস্থ-অসহায় মানুষের কষ্ট লাঘবের চেষ্টা করছেন সাকিব। প্রায় মাসখানেক ধরে তার এ প্রাণান্তকর চেষ্টা অব্যাহত আছে। এর মাঝেই নেতিবাচক সংবাদের শিরোনাম হয়েছেন তিনি।
সাতক্ষীরায় রয়েছে সাকিবের এগ্রো ফার্ম। চার মাসের বেতন বকেয়া দাবি করে সম্প্রতি তুমুল বিক্ষোভ করেন সেখানকার শ্রমিকরা। মুহূতেই এ খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।
যদিও সমাধান করতে সময় নেননি ফার্মের অন্য অংশীদাররা। সাকিবের নির্দেশনায় ৩০ এপ্রিলের মধ্যে তাদের সব বেতন পরিশোধ করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তারা। ফার্মের অন্যতম মালিক ও ব্যবস্থাপক সগির হোসেন পাভেল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
অবশ্য এ প্রসঙ্গে গণমাধ্যমে কিছু বলেননি সাকিব। তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্টে তিনি তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন সামগ্রিক বিষয়টি।
বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার জানিয়েছেন, কোম্পানির লভ্যাংশ থেকে নয়, নিজের পকেট থেকেই শ্রমিকদের বকেয়া বেতন দেবেন। এ নিয়ে ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড পেজে স্ট্যাটাস দিয়েছেন তিনি। যুগান্তর অনলাইন পাঠকদের জন্য তার পূর্ণাঙ্গ পোস্ট অনুবাদ করে দেয়া হলো-
দেরিতে সাড়া দেয়ার জন্য ক্ষমা চাচ্ছি। আমি সব তথ্য ও চিন্তাভাবনা একটু গুছিয়ে নিতে চেয়েছিলাম। আপনাদের কাছে সত্যটা তুলে ধরার কারণেই এটি করা। ওই এগ্রো ফার্মের সঙ্গে আমার নাম সরাসরি সম্পৃক্ত। ব্যস্ততার কারণে আমার অন্যান্য কোম্পানির মতো এটিও পার্টনাররা পরিচালনা করেন। আমি এগুলোর নিয়মিত খোঁজ রাখার কিংবা ঘুরে দেখার সুযোগ কম পাই।
আপনারা জানেন, বছরের বড় একটা সময় আমি দেশের বাইরে থাকি। আমাদের দ্বিতীয় সন্তান আসছে। এ পুরো সময়টায় আমি এগ্রো ফার্মের ব্যবসার ব্যাপারে কিছুই জানতাম না। মিডিয়ার মাধ্যমে শ্রমিকদের বিষয়টি জেনেছি। তবে আমার ব্যবসায়িক অংশীদাররা আমাকে জানাননি, শেষ কয়েক মাসে কী হয়েছে?
কিন্তু তারা কিছু শ্রমিককে ৩০ এপ্রিলের মধ্যে বেতন দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। যদিও সব শ্রমিকের কাজ জানুয়ারিতেই শেষ হয়ে গেছে। তারা এ সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করার কথা জানিয়েছিল। তবু শ্রমিকরা রাস্তায় নেমে এলো, বিক্ষোভ করল। সম্ভবত নিচু মনমানসিকতার কিছু মানুষের হীন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য এটি করেছে তারা।
যাই হোক, বিষয়টি জানার সঙ্গে গুরুত্ব অনুধাবন করে তা সমাধানের উদ্যোগ নিয়েছি। তাদের বেতন আমার নিজের আয় থেকে পরিশোধ করে দেব। কোম্পানির প্রদত্ত অর্থ বা আমার অংশীদারদের থেকে নিয়ে নয়। আমি মনে করি, এটি কোম্পানির অভ্যন্তরীণ বিষয়, যা অভ্যন্তরেই থাকা উচিত ছিল।
তবে আমি খুবই মর্মাহত হয়েছি। কারণ তারা মাসের শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারেনি। তারা নিজেরাই এ বিষয়ে রাজি হয়েছিল। আরও অনেকের মতো আমিও অসহায় মানুষের জন্য অর্থ সংগ্রহ করছি। তাই অবাক হচ্ছি, মানুষ এটি কীভাবে ভাবল, এত বিপুলসংখ্যক শ্রমিককে আমি বঞ্চিত করব। যাদের গত তিন বছর ধরে নিয়মিত বেতন দিয়ে আসছি।
আমি বুঝতে পারছি, এটি মিডিয়ার কোনো একটি অংশের কাজ। যারা ব্যাপারটি খুব ভালোভাবে খোঁজখবর নিয়ে দেখেনি। ভালো হতো যদি তারা সত্যটা খুঁজে দেখত। কিন্তু তারা কী করেছে, চটকদার হেডলাইন বানানোর দিকে মনোযোগ দিয়েছে। যেটির কিছু অংশ মিথ্যা এবং পুরোপুরি ভিত্তিহীন।
আমি মনে করি, সত্য যাচাই করতে মিডিয়ার শক্তিশালী ভূমিকা আছে এবং সঠিক তথ্যের ওপর প্রতিবেদন তৈরি করার সামর্থ্য আছে। তা না হলে তারা আরও অনেককেই আমার মতো আঘাত করবে। পুরো বিষয়টিতে ভালোভাবে নজর দিয়ে বাকি অংশীদারদের নামও আনতে পারত ওরা। আশা করি, মিডিয়া ও সাংবাদিকরা প্রতিবেদন করার ক্ষেত্রে আরও যত্নবান হবেন।
আমি মনে করি, আমাদের মনোযোগ দেয়ার আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে। আমাদের উচিত– মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্যের ব্যাপারে সতর্ক থাকা এবং কঠোর হওয়া। আমার মনে হয়, আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের দিকে আমাদের এখন নজর দেয়া উচিত।
সবাই নিরাপদে থাকুন, ভালো থাকুন।
-সময়ের সংলাপ২৪/ডি-এইচ
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন