দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের(শাবি) তৃতীয় সমাবর্তনকে ঘিরে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। দীর্ঘ ১২ বছর পরে আগামী ৮ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে শাবির তৃতীয় সমাবর্তন। এর এই সমাবর্তনকে ঘিরেই চলছে শেষ মুহূর্তের ব্যস্ততা।
সরেজমিনে দেখা যায়,আসন্ন তৃতীয় সমাবর্তনকে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছে সমাবর্তনের সাথে জড়িত দপ্তর গুলো। রাস্তা মেরামত করা, ফাঁকা জায়গায় ফুলের গাছ লাগানো, বিল্ডিংয়ে নতুন রং করাসহ গোল চত্বরের সৌন্দর্য্য বর্ধনের কাজ শেষ পর্যায়। কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে মঞ্চ ও প্যান্ডেল তৈরির কাজও চলছে। সমাবর্তনের জন্য গ্র্যাজুয়েটদের সনদ তৈরির কাজও শেষ করেছে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তর। জানা যায়, সমাবর্তন আয়োজনের জন্য ১৭টি আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হয়েছে। প্রতিটি কমিটি সমাবর্তনের সকল প্রস্তুতি সম্পূর্ণ করতে দিনভর কাজ করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে সমাবর্তনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের জন্য স্মরণিকা, কস্টিউম সামগ্রী(গাউন, ক্যাপ) গিফ্ট, ব্যাগসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের হাতে পৌছেছে।
এবারের সমাবর্তনে রেজিস্ট্রেশন করেছে মোট ৬ হাজার ৭৫০ শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে স্নাতক ৪ হাজার ৬১৭ জন, স্নাতকোত্তর ১ হাজার ১২৭ জন, পিএইচডি ২ জন, এমবিবিএস ৮৭৮ জন, এমএস ও এমডি ডিগ্রিধারী ৬ জন এবং নার্সিংয়ের ১২০ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করবে। ২০০১-০২ শিক্ষাবর্ষ থেকে ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষে স্নাতকে সর্বোচ্চ রেজাল্টের জন্য ১০ জন শিক্ষার্থী, স্নাতকোত্তরে ৫ সেরা শিক্ষার্থীকে রাষ্ট্রপতি স্বর্ণপদক দেওয়া হবে। এছাড়াও ২য় সমাবর্তনে বাকি থাকা ৫ স্বর্ণপদকও এই সমাবর্তনে প্রদান করা হবে। এনিয়ে মোট ২০টি রাষ্ট্রপতি স্বর্ণপদক প্রদান করা হবে। অন্যদিকে ফ্যাকাল্টি প্রথম হওয়া মোট ৮৯ জন শিক্ষার্থীকে উপাচার্য অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হবে বলে জানা যায়।
এদিকে তৃতীয় সমাবর্তনে অংশগ্রহণকারী গ্র্যাজুয়েটদের কস্টিউম, গিফট ও আমন্ত্রণপত্র ৬ জানুয়ারি সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত এবং ৭ জানুয়ারি সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত বিভাগ ও কলেজভিত্তিক আলাদাভাবে বিতরণ করা হবে জানান সমাবর্তন প্রচার উপ-কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. ফয়সল আহমেদ।
তিনি জানান, সমাবর্তনে গ্র্যাজুয়েটদের কস্টিউম, গিফট এবং আমন্ত্রণপত্র সংগ্রহের সময় অবশ্যই সমাবর্তন নিবন্ধন নিশ্চিতকরণ কপি সঙ্গে নিয়ে আসতে হবে। সমাবর্তন নিবন্ধন নিশ্চিতকরণ কপি সমাবর্তনের ওয়েবসাইট (sustconvocation.edu) থেকে সংগ্রহ করা যাবে। এছাড়া কোনো গ্র্যাজুয়েট নিজে উপস্থিত হয়ে এগুলো নিতে না পারলে নমিনীকে অবশ্যই সমাবর্তনে নিবন্ধন নিশ্চিতকরণ কপিসহ তার পিতা/মাতা, স্বামী অথবা স্ত্রী অথবা বিভাগীয় শিক্ষক (শুধুমাত্র শাবিপ্রবির বিভাগসমূহের শিক্ষক, অধিভুক্ত কলেজ নয়) তার পক্ষে গ্র্যাজুয়েট কর্তৃক প্রদত্ত লিখিতপত্র এবং নমিনীর জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি/পাসপোর্টের ফটোকপি নিয়ে আসতে হবে। সমাবর্তন গ্র্যাজুয়েটদের কস্টিউম, গিফট ও আমন্ত্রণপত্র কোনো কিছুই ফেরত দিতে হবে না। তবে গ্র্যাজুয়েট ছাড়া অংশগ্রহণকারী শিক্ষক, একাডেমিক কাউন্সিল সদস্য, সিন্ডিকেট সদস্যদের গাউন ও হুড ফেরত দিতে হবে এবং হ্যাট গিফটের অন্তর্ভুক্ত হবে। সমাবর্তনে অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণপত্র সঙ্গে আনতে হবে। ৮ জানুয়ারি সাড়ে ১১টায় প্রধান ফটক খুলে দেওয়া হবে এবং আড়াইটার মধ্যে সমাবর্তনস্থলে প্রবেশ করতে হবে। এছাড়া মোবাইল ফোন, হাত ব্যাগ, ছাতা ও পানির বোতল, ব্রিফকেস, ক্যামেরা বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইস সঙ্গে নিয়ে অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ করা যাবে না। মূল সনদপত্র সমাবর্তনের দিন সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত এবং পরের দিন ৯ জানুয়ারি সারাদিন নির্ধারিত কাউন্টার থেকে বিতরণ করা হবে। বিস্তারিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট (sustconvocation.edu) থেকে জানা যাবে।
শাবির তৃতীয় সমাবর্তনে সভাপতিত্ব করবেন বিশ্ববিদ্যালয়ে আচার্য ও মহামান্য রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। সমাবর্তন বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বিশিষ্ট লেখক অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। ১৯৯১ সালে একাডেমিক কার্যক্রম শুরুর পর দীর্ঘ ২৮ বছরে মাত্র দু’টি সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছিলো এই বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৯৯৮ সালের ২৯ এপ্রিল বিশবিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তন এবং এর নয় বছর পর ২০০৭ সালের ৬ ডিসেম্বর দ্বিতীয় সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবর্তনকে ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এবিষয়ে শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা উপকমিটির আহ্বায়ক এবং শাবি প্রক্টর অধ্যাপক জহীর উদ্দীন আহমদ বলেন, সমাবর্তনের প্রস্তুতি প্রায় শেষের দিকে। সমাবর্তন সফল করতে সমাবর্তন সংশ্লিষ্ট শিক্ষক, কর্মকর্তা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেক টি ইউনিট নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। মহামান্য রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ গুরুত্বপুর্ণ ব্যক্তিত্ব। উনার নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বিধানে রাষ্ট্রের বিভিন্ন সংস্থা ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পূর্ণ তৎপর।
শাবি উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, সমাবর্তন কেন্দ্রিক আমাদের যা যা পরিকল্পনা ছিল তা সুন্দরভাবে কাজ হচ্ছে। সমাবর্তনের অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে কোনোরকম ঘাটতি থাকবেনা। আশা রাখছি আমরা শিক্ষার্থীদের সুন্দর একটি সমাবর্তন উপহার দিবো।
-সময়ের সংলাপ২৪/ডি-এইচ
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন