ধেয়ে আসছে প্রবল ঘূর্ণিঝড় 'ফেনি' - সময়ের সংলাপ24
DHAKA WEATHER

Post Bottom Ad

খুব শীগ্রই আমরা Somoyersonglap24.com ওয়েবসাইট নিয়ে আসছি..

ধেয়ে আসছে প্রবল ঘূর্ণিঝড় 'ফেনি'

Share This

বৈশাখের দ্বিতীয় সপ্তাহে দেশে গরম থাকাটাই স্বাভাবিক। এটিই আবহমান বাংলার চিরায়ত আবহাওয়া পরিস্থিতি। কিন্তু বর্তমানে স্বাভাবিকের চেয়ে গড়ে দুই থেকে তিন ডিগ্রি তাপমাত্রা বেশি হওয়ায় জনজীবনে নাভিশ্বাস উঠেছে। স্থানভেদে কোথাও সাত ডিগ্রি পর্যন্ত বেশি গরম অনুভূত হচ্ছে।

এর সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাড়তি উষ্ণতা, বাতাসে জলীয় বাষ্পের আধিক্য যুক্ত হয়েছে। এ ভয়াবহ গরম থেকে দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে ইতিমধ্যে সুস্পষ্ট লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে; যা ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। ইতিমধ্যে ঝড়টির নাম দেয়া হয়েছে ‘ফেনি’।

জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ও আবহাওয়া বিভাগের (বিএমডি) কর্মকর্তারা চানিয়েছেন, প্রচণ্ড শক্তি সঞ্চয় করে ‘ফেনি’ ৪-৫ মে বাংলাদেশে আঘাত হানতে পারে।

বুয়েটের পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক ড. একেএম সাইফুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে সাধারণত এপ্রিল-মে মাসে গরম একটু বেশিই থাকে। বিশেষ করে এপ্রিলে কম বৃষ্টি, বেশি গরম আর মে মাসে বৃষ্টি ও গরম দুটিই থাকে। কিন্তু এবার উল্টো। কয়েক দিন ধরে যে তাপমাত্রা লক্ষ্য করা গেছে, তা মোটেও স্বাভাবিক নয়। এক্ষেত্রে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব একটা ভূমিকা রাখছে। পাশাপাশি এল নিনো মডোকির প্রভাবও আছে।

তবে আশার খবর হল- বঙ্গোপসাগরে শ্রীলঙ্কার দিকে একটি সুস্পষ্ট লঘুচাপের রেখা দেখা যাচ্ছে। এটি পরিণতি পেলে হয়ত গরম কমবে। তবে আতঙ্কের দিক হল- এটি ১১৫-১২০ কিলোমিটার বেগে বাতাসসহ ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। এর গতিপথ এত আগে নির্দিষ্ট করা সম্ভব নয়। কিন্তু এন্টি ক্লকওয়াইজ (ঘড়ির বিপরীত দিক) পদ্ধতির হিসাবে এর গতি বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের আরাকান মনে হচ্ছে।

যদিও ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগ (আইএমডি) বলছে, ভারতের দক্ষিণের তামিলনাড়ু থেকে মিয়ানমার পর্যন্ত বিস্তৃত উপকূলে কম-বেশি এর প্রভাব পড়বে। আগামী ৪-৫ মে নাগাদ এটি উপকূল অতিক্রম করতে পারে। তার আগে পর্যন্ত এ গরম অব্যাহত থাকতে পারে।

অধ্যাপক ইসলাম আরও বলেন, সমুদ্রের পানির তাপমাত্রা ছাড়িয়েছে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিছুদিন ধরে প্রশান্ত মহাসাগরের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি উষ্ণ হচ্ছে। সেখানকার গড় তাপমাত্রা ইতিমধ্যে দশমিক ৫ ডিগ্রি ছাড়িয়েছে। বর্তমানে এল নিনো মডোকি পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এমনটি হলে সাধারণত প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিম উপকূলে খরা বা কম বৃষ্টিপাত হয়। সেই হিসাবে বাংলাদেশে এবার মৌসুমে বৃষ্টিপাত কম হতে পারে। ২১ এপ্রিল সর্বশেষ কুষ্টিয়ার কুমারখালীর দিকে বৃষ্টিপাত হয়েছে। ওই দিন ঢাকায়ও সামান্য বৃষ্টি হয়। এরপর আর বৃষ্টির দেখা নেই। এপ্রিলে সাধারণত দিনের চেয়ে রাতের ব্যাপ্তিকাল কম। এ কারণে সূর্যের অনুপস্থিতিতে পৃথিবীকে শীতল করার পর্যাপ্ত সময় পাচ্ছে না প্রকৃতি। বায়ুমণ্ডল শীতল না হতেই গরম নিয়ে আসছে নতুন দিনের সূর্য। ফলে দিন দিন পুঞ্জীভূত হয়েছে উষ্ণতা। এ কারণে দেশের আবহাওয়ার এ অস্বাভাবিক ও রুঢ় আচরণ সইতে হচ্ছে।

অসহনীয় গরমে অনেকটাই থমকে গেছে জনজীবন। সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছেন খেটে খাওয়া মানুষ। গরমে রাতেও ঘুমাতে পারছে না মানুষ। দাবদাহে স্কুল-কলেজে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও কমছে। তীব্র গরমে কোথাও স্কুল-কলেজে কম ক্লাস নিয়ে আগেই ছুটি দেয়া হচ্ছে। অসহ্য গরমে প্রায় সবারই হাঁসফাঁস অবস্থা।

আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, প্রায় সারা দেশেই তাপপ্রবাহ বয়ে গেলেও ঢাকায় অনুভূতিটা বেশি। এর কারণ ৮টি। এগুলো হল- দিনের ব্যাপ্তিকাল রাতের তুলনায় বড়। রাত তাপ বিকিরণ করে পৃথিবী ঠাণ্ডা করতে পারে না; সর্বোচ্চ ও সর্বনিু তাপমাত্রার পার্থক্য কম; বাতাসে জলীয় বাষ্পের আধিক্য; জলীয় বাষ্প শুষ্ক বাতাস ছেড়ে দেয়ায় বাতাস আরও উত্তপ্ত হয়; অতিমাত্রায় এসির ব্যবহার; গাড়ির কার্বন বা কালো ধোঁয়া; ঢাকার আশপাশের ইটভাটার কার্বন; ঢাকাকেন্দ্রিক শিল্প প্রতিষ্ঠানের নিঃসরিত দূষিত পদার্থ।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, তাপমাত্রার সর্বোচ্চ অবস্থাটি সাধারণত বিকিরণের মাধ্যমে হ্রাস পায় রাতে। কিন্তু এপ্রিলের ছোট রাত সেটি পারছে না। আবহাওয়া বিভাগের বৃহস্পতিবার সকালের বিজ্ঞপ্তিও তাই বলছে। এতে দেখা যায়, বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৬ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, আর সর্বনিম্ন ছিল ২৭ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অপরদিকে দিনের বেলায় ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস আর সর্বনিম্ন ২৭ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অর্থাৎ দিনে-রাতে সমান উত্তাপ বিরাজ করছে। এসব মিলে জীবনযাত্রা অসহনীয় হয়ে উঠছে। সাধারণত ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে তাপমাত্রা থাকলে সেটিকে মৃদু তাপপ্রবাহ, ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থাকলে সেটিকে মাঝারি এবং ৪০ ডিগ্রির বেশি হলে সেটিকে তীব্র তাপপ্রবাহ বলা হয়।

-সময়ের সংলাপ২৪/ডি-এইচ