ভয়াবহ আগুনের ঝুঁকিতে সিলেট : বিপজ্জনক অবস্থায় ৫৫ মার্কেট - সময়ের সংলাপ24
DHAKA WEATHER

Post Bottom Ad

খুব শীগ্রই আমরা Somoyersonglap24.com ওয়েবসাইট নিয়ে আসছি..

ভয়াবহ আগুনের ঝুঁকিতে সিলেট : বিপজ্জনক অবস্থায় ৫৫ মার্কেট

Share This

মধুবন সুপার মার্কেট; নগরীর বন্দরবাজারস্থ প্রাচীন মার্কেটগুলোর অন্যতম এটি। ছয় তলা বিশিষ্ট এ মার্কেটের তৃতীয় তলা পর্যন্ত দোকান কোঠা রয়েছে দুই শতাধিকের ওপরে। এ মার্কেটে শাড়ি কাপড়ের দোকান ছাড়াও রয়েছে প্রসাধনী সামগ্রী, খেলনা ও খাবারের দোকান।

এছাড়া ছয় তলা ওই ভবনটিতে ব্যাংক, বীমা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ রয়েছে আরো শতাধিক ব্যক্তি মালিকানাধীন ও স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান। তবে, আশঙ্কার কারণ হচ্ছে নগরীতে অগ্নিকাণ্ডের অতি ঝুঁকিপূর্ণ ২৩ টি মার্কেটের তালিকায় স্থান পেয়েছে মধুবন সুপার মার্কেটের নামও। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স’র এক প্রতিবেদনে সামনে এসেছে এমন আশঙ্কার চিত্র।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, মেয়াদোত্তীর্ণ ফায়ার এক্সটিংউইজার, অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র না থাকা, অদক্ষ জনবল, জলাধারের অভাব, গমনাগমনের রাস্তা না থাকা, সিঁড়ির রাস্তার অপ্রশস্ততা, ত্রুটিপূর্ণ বৈদ্যুতিক ক্যাবল, বালি ভর্তি প্রয়োজনীয় বালতি ব্যবস্থা না থাকা, প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা না থাকাসহ সচেতনতার অভাব।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সিলেটের আওতাধীন নগরীর মোট ৫৮টি ভবন পরিদর্শন শেষে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন মার্কেট, সুপারমার্কেট ও শপিংমল রয়েছে।

এর মধ্যে ২৩ টি ভবনকে খুবই ঝুঁকিপূর্ণ, ৩২ টিকে ঝুঁকিপূর্ণ এবং ৩ টিকে সন্তোষজনক বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

সিলেট ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ-সহকারী পরিচালক দিনামনি শর্মা জানান, সিলেটের অধিকাংশ বিপনীবিতানগুলোতে নেই পর্যাপ্ত পরিমাণ অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা। আর যেগুলোতে রয়েছে তাও নিম্নমানের। যেসব অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রপাতি রয়েছে সেগুলো যথারীতি পরীক্ষা করা হয় না।

প্রতিষ্ঠানগুলোতে আগুণ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য নেই দক্ষ জনবলও। এসব কারণ বিবেচনায় বিষয়টি তদারকি করতে আবারো মাঠে নেমেছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স। এ বিষয়ে কয়েকটি টিম গঠন করা হয়েছে। এসব টিমের সমন্বয়ক হিসেবে কার্যক্রম তদারকি করবেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মকর্তারা।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স’র ৩০ জানুয়ারি ২০১৭ ইংরেজিতে ১ম দফা ও একই বছরের ৫ জুনের ২য় দফা পরিদর্শন তালিকা অনুযায়ী নগরীর অতি ঝুঁকিপূর্ণ ২৩ টি মার্কেটের মধ্যে রয়েছে- লালদীঘি পুরাতন হকার্স মার্কেট,বন্দরবাজারের মধুবন সুপার মার্কেট,সিটি সুপার মার্কেট,ব্রহ্মময়ী মার্কেট,হাসান মার্কেট, দক্ষিণ সুরমার কদমতলিস্থ আল বারাকাত ম্যানশন,আনন্দ বিপনী মার্কেট, জিন্দাবাজারস্থ জালালাবাদ হাউস, ইদ্রিস মার্কেট, প্রীতিরাজ রেস্টুরেন্ট, স্কাইভিউ শপিং কমপ্লেক্স, আহমদ ম্যানশন, বায়তুল আমান মসজিদ মার্কেট, মিতালী ম্যানশন, শুকরিয়া মার্কেট, সবুজবিপনী মার্কেট নেহার মার্কেট, হক সুপার মার্কেট, জল্লারপাড় রোডস্থ লিয়াকত ভবন ও পানসী রেস্টুরেন্ট । তবে, নগরীর মার্কেট নিয়ে তাদের এই প্রতিবেদন রিপোর্ট এখনো অপরিবর্তিত বলে দাবি করেন দিনামনি শর্মা।

৩২টি ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেটের মধ্যে রয়েছে কুদরত উল্লাহ মার্কেট বন্দর বাজার, গুলিস্থান কমপ্লেক্স, লালদীঘির পাড়,ওয়েস্ট ওয়ার্ল্ড শপিং সিটি, মিলেনিয়াম শপিং কমপ্লেক্স, এলিগেন্ট শপিং মল, জল্লারপাড়, বু-ওয়াটার শপিং সিটি, লন্ডন ম্যানশন,সিলেট প্লাজা, আল-হামরা শপিং সিটি জিন্দাবাজার, সবুর ম্যানশন, শাপলা ম্যানশন, শাহজালাল মার্কেট ফেঞ্চুগঞ্জ রোড, মঞ্জিল কমপ্লেক্স ফেঞ্চুগঞ্জ রোড, রমনা সুপার মার্কেট, ফুলকলি হুমায়ুন চত্বর, গ্রীণ সুপার মার্কেট ভার্ত্থখলা, বাদল ম্যানশন ভার্ত্থখলা, শামছুদ্দিন হাউস ভার্ত্থখলা,ফেমাস মার্কেট ভার্ত্থখলা, জাদীগার প্লাজা, দক্ষিণ সুরমা, পয়েন্ট ভিউ শপিং সেন্টার, চায়না মার্কেট, সামস সুপার মার্কেট, এম ফি জায়গীরদারস কর্ণার আম্বরখানা, মাহমুদ কমপ্লেক্স, হক ম্যানশন, খাঁন বাজার, মদিনা মার্কেট, সেন্ট্রাল প্লাজা আম্বরখানা, আবু হুয়াররা ম্যানশন আম্বরখানা, খয়রুন ভবন মীরবক্সটুলা ও আড়ং নয়া সড়ক।

তবে প্রতিবেদনে সন্তোষজনক হিসেবে ৩টি মার্কেটকে দেখানো হয়েছে। মার্কেটগুলো যথাক্রমে বন্দরবাজারস্থ মেসার্স করিমউলাহ মার্কেট,দক্ষিণ সুরমার ভার্ত্থখলাস্থ স্টারভিউ টাওয়ার ও নেওয়া কর্ণার কদমতলী।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, প্রতিরোধ ব্যবস্থা না থাকায় মার্কেকগুলো থেকে আগুণের সূত্রপাত হলে গোটা সিলেটে আগুণের ভয়াবহতা দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাছাড়া, মার্কেটের ভবন ঘেঁষা আরো ভবন থাকায় বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে নগরী। মেয়াদোত্তীর্ণ এক্সটিং উইজার রয়েছে প্রতিটি বিপনীবিতানে। প্রতি বছরই যেখানে ক্যামিকেল পাউডার পরিবর্তন করা দরকার, সেখানে অধিকাংশ মার্কেটগুলোতে তা পরিবর্তন করা হয়না বছরের পর বছর।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে অগ্নিকাণ্ডের অতিঝুঁকিপূর্ণ মধুবন সুপারমার্কেট দোকানকোটা মালিক ও ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ আলী আখিক জানান,ফায়ার সার্ভিসের এই প্রতিবেদন আমাদের জানা নেই। মার্কেটে থাকা অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র বা এক্সটিং উইজার এ বছর পরিবর্তন করা হয়নি বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, বিষয়টি কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরে এ বিষয়ে সচেতনতা গ্রহণ করা হবে। তাছাড়া, অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে মার্কেটে প্রশিক্ষিত জনবল নেই বলেও জানালেন তিনি।

অগ্নিকাণ্ডের অতি ঝুঁকিতে থাকা নগরীর জিন্দাবাজারস্থ মিতালী মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ওলিউর রহমান চৌধুরী বলেন, ফায়ার সার্ভিসের লোকজন কয়েকবারই মার্কেট পরিদর্শন করেছে। এ বিষয়ে মার্কেট কর্তৃপক্ষও অবগত আছেন। তিনি মিতালী ম্যানশনে অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে সব ব্যবস্থাই রয়েছে বলে দাবি করেন।

মার্কেটের হিসাব রক্ষক শাহাদত হোসেন বলেন, অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি মোকাবেলায় সব উপাদানই মার্কেটের রয়েছে। তবে, গমনাগমন রাস্তা এবং সিঁড়ির অপ্রশস্থতা স্বীকার করেন তিনি।

এ ব্যাপারে সিসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিধায়ক রায় চৌধুরী জানান, তিনি কর্মস্থলে নবাগত। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ ও করণীয় নির্ধারণ করবেন।

-সময়ের সংলাপ২৪/ডি-এইচ

কোন মন্তব্য নেই: