ইনিংসের ৪৭তম ওভারের শেষ বলে বদলে গিয়েছিল চিত্রনাট্য! প্রধান নির্বাচকের বক্তব্যকে মিথ্যে প্রমাণ করে এক হাতে ব্যাট ও অন্য হাতে চোট নিয়ে মাঠে নামেন তামিম ইকবাল।
এশিয়া কাপে মাঠে নামার আগেই চোটে জর্জরিত ছিল বাংলাদেশ দল। প্রস্তুতি ক্যাম্প চলাকালীন আঙুলে চোট পেয়েছিলেন তামিম ইকবাল। বাঁহাতি এই ওপেনারের ডান হাতের অনামিকায় ধরা পড়েছিল চিড়। আর সংযুক্ত আরব আমিরাতে পৌঁছানোর পর মুশফিকুর রহিমেরও পুরানো পাঁজরের ব্যথা হঠাৎ করেই মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে।
চোটের কাছে হার মানেননি বাংলাদেশের কোনো ক্রিকেটার। আঙুলের চোট পুরোপুরি সেরে ওঠার আগে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে উদ্বোধনী ম্যাচে মাঠে নামেন তামিম। পুরানো পাঁজরের ব্যথা মাথাচাড়া দিয়ে উঠলেও মাঠে নামেন মুশফিক। এখানেই শেষ নয়। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে বাম হাতে নতুন করে পাওয়া চোট নিয়েও ব্যাটিং করেন তামিম।
তামিম-মুশফিকের দেশপ্রেম ও সাহসিকতার অনন্য দৃষ্টান্ত এখনো ক্রিকেটপ্রমীদের মুখে মুখে। সেই দৃষ্টান্ত এবার উঠে এলো এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে। ২০১৯ সালের বাংলা প্রথম পত্রে বহুনির্বাচনী প্রশ্নের একটি উদ্দীপকে স্থান পেয়েছে মুশফিক-তামিমের বীরত্ব।
ওই উদ্দীপকে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের এশিয়া কাপের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল ২ রান করে কব্জিতে প্রচণ্ড আঘাত পেয়ে মাঠের বাইরে চলে যান। মাঠে মুশফিক যেন একাই রুখে দাঁড়ান শ্রীলঙ্কার বোলাদের বিরুদ্ধে। ক্রিজের অন্যপ্রান্তে যখন শেষ ব্যাটসম্যান আউট হন, তখন পুরো বিশ্বকে অবাক করে দিয়ে হাতে ব্যান্ডেজ বেঁধে মাঠে নামেন তামিম ইকবাল। এক হাতে ব্যাট চালিয়ে দেশের জয়ের আশা বাঁচিয়ে রাখেন।
এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র। ছবি: সংগৃহীত |
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এশিয়া কাপের উদ্বোধনী ম্যাচের দ্বিতীয় ওভারেই চোট নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছিল তামিমকে। মাঠ থেকে সরাসরি হাসপাতালে নেওয়া হয় বাঁহাতি এই ওপেনারকে। সেখান থেকে ফেরেন দুঃসংবাদ সঙ্গী করে। স্ক্যান রিপোর্টে জানা যায়, তামিমের বাম হাতের কব্জিতে চিড় ধরা পড়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরার থেকে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু জানান, কমপক্ষে ৬ সপ্তাহ মাঠের বাইরে থাকতে হবে বাঁহাতি এই ওপেনারকে।
তামিম চোট পাওয়ার আগে প্রথম ওভারে বিদায় নেন টপঅর্ডারের দুই ব্যাটসম্যান লিটন কুমার দাস ও সাকিব আল হাসান। এরপর দিকহারা বাংলাদেশকে পথ দেখান মোহাম্মদ মিঠুন ও মুশফিকুর রহিম। তৃতীয় উইকেটে দুজন মিলে গড়েন ১৩১ রানের রেকর্ড জুটি। মিঠুনকে ফিরিয়ে এই জুটি ভাঙেন লাসিথ মালিঙ্গা।
মিঠুনের পর বিদায় নেন আরও পাঁচ ব্যাটসম্যান। তাতে যেন আরও তাঁতিয়ে ওঠেন মুশফিক। শুরু থেকেই দায়িত্বশীল ব্যাট করা মুশফিক একাই সচল রাখেন দলের রানের চাকা। লঙ্কান বোলাদের গতি ও ঘূর্ণির মুখে দাঁড়িয়ে নিজের ইনিংসটিকে রূপ দেন সেঞ্চুরিতে।
বিপত্তি দেখা দেয় মুস্তাফিজুর রহমান আউট হওয়ার পর। ৪৭তম ওভারের পঞ্চম বলে নবম ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হন মুস্তাফিজ। তখন বাংলাদেশের সংগ্রহ ৯ উইকেটে ২২৯ রান। এমন সময় সবাইকে চমকে দিয়ে ব্যান্ডেজ হাতে মাঠে নামেন তামিম।
মাঠে নেমেই ক্ষান্ত হননি! ব্যাট চালান লঙ্কান বোলারদের বিপক্ষেও। বাম হাতের কব্জিতে চোট পাওয়া তামিম ব্যাট করেছেন কেবল ডান হাত দিয়ে। এক হাত দিয়ে মোকাবিলা করেছেন ৪৭তম ওভারে সুরাঙ্গ লাকমালের করা শেষ বলটি।
সবচেয়ে বড় কথা, নন-স্ট্রাইকিং প্রান্তে দাঁড়িয়ে সঙ্গ দেন মুশফিকুর রহিমকে। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশকে ২৬১ রানের লড়াকু সংগ্রহ এনে দেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। ২৬২ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ১২৪ রানেই থামে লঙ্কানরা। তাতে ১৩৭ রানের বড় ব্যবধানে জয় পায় মাশরাফি বিন মুর্তজার দল।
-সময়ের সংলাপ২৪/ডি-এইচ
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন