পাকিস্তানের অভ্যন্তরে ভারতের বিমান হামলার ঘটনায় ইসলামাবাদের প্রতি ‘পূর্ণ সমর্থনে’র আশ্বাস দিয়েছে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেস। এদিকে মঙ্গলবারের বিমান হামলায় ভারতের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
বুধবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) এক বিবৃতিতে এ কথা জানিয়েছেন পাক পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশি। ফোনালাপে জাতিসংঘ মহাসচিবের সাথে কথা বলেন পাক পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
টাইমস অব ইন্ডিয়া ও দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, প্রতিবেশী দেশ দুটির নতুন এ সংঘাত আফগান শান্তি প্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলতে পারে। নিয়ন্ত্রণ রেখা পার হয়ে পাকিস্তানে হামলা চালানোয় ভারতের প্রতি নিন্দা জানিয়েছে মুসলিম দেশগুলোর সংগঠন ওআইসি। সেই সঙ্গে নতুন করে সংঘাতে জড়ানোর ক্ষেত্রে উভয় পক্ষকে সংযমের আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।
এদিকে মঙ্গলবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) মঙ্গলবার ভোরে পাকিস্তানের ৮০ কিলোমিটার ভেতরে ঢুকে অন্তত তিনটি অবস্থানে হামলা চালায় ভারতীয় বিমান বাহিনী।
এ হামলাকে ‘ভারতের আগ্রাসন’ হিসেবে অভিহিত করে বুধবার জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন পাক পররাষ্ট্রমন্ত্রী কুরেশি।
ফোনালাপ শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে কুরেশী বলেন, ‘আগে থেকেই উদ্বেগ ছিল, রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের লক্ষ্যে আঞ্চলিক শান্তি বিঘ্নিত করতে পারে ভারত। আমাদের সেই উদ্বেগই সত্য হয়েছে। ভারত পাকিস্তানে আগ্রাসন চালিয়েছে।’
কুরেশি বলেন, ‘ভারতের দায়িত্বজ্ঞানহীন আগ্রাসী কর্মকাণ্ড জাতিসংঘ সনদ ও আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক বিধির সম্পূর্ণ লঙ্ঘন। কুরেশি বলেন, ‘সাম্প্রতিক ঘটনায় পাকিস্তানের প্রতি সম্পূর্ণ সমর্থন ও সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব।’
এ সময় আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বেগ জানাতে জাতিসংঘ মহাসচিবকে দুটি চিঠি পাঠানো হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
অন্যদিকে বসে নেই ভারতও। সমানে কূটনৈতিক তদবির চালিয়ে যাচ্ছে নরেন্দ্র মোদির প্রশাসন। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ মঙ্গলবারই বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, সিঙ্গাপুর ও আফগানিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন। চীন এবং রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করেন।
ভারতীয় গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, ফোনালাপে সুষমা স্বরাজ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওকে জানিয়েছেন, কেন ভারতকে এই হামলা চালাতে হয়েছে।
টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, ভিয়েতনামের হ্যানয় থেকে সুষমার সঙ্গে কথা বলেন পম্পেও। ‘সন্ত্রাসবাদবিরোধী লড়াইয়ে’ ভারতের পাশেই থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। এছাড়া বুধবার পৃথক এক বিবৃতিতে বিমান হামলাকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট উত্তেজনায় দুই দেশকেই যে কোনো মূল্যে উত্তেজনা এড়িয়ে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানান পম্পেও।
বাংলাদেশ, সিঙ্গাপুর ও আফগানিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদেরও তিনি জইশ-ই-মোহাম্মদের ঘাঁটিতে হামলা চালানোর বিষয়ে ভারতের অবস্থান তুলে ধরেন। তবে এ ব্যাপারে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখনও কিছু জানায়নি।
এসব দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা ছাড়াও ভারতের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, ফ্রান্স এবং যুক্তরাজ্যের মতো প্রভাবশালী দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। সুষমা স্বরাজ ভারতের বিরোধী দলের নেতাদেরও হামলার বিষয়ে অবহিত করেছেন।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) কাশ্মিরের পুলওয়ামাতে বিশেষায়িত বাহিনীর‘সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্সের’ গাড়ি বহরে আত্মঘাতী বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। এতে বাহিনীটির কমপক্ষে ৪৯ জন সদস্য প্রাণ হারিয়েছে। এর প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) ভারতীয় বিমান বাহিনী পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরে বোমাবর্ষণ করে। এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হয়।
-সময়ের সংলাপ২৪/ডি-এইচ
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন