মিয়ানমারে ২৪ হাজার রোহিঙ্গা নিহত, ৪০ হাজার গুলিবিদ্ধ - সময়ের সংলাপ24
DHAKA WEATHER

Post Bottom Ad

খুব শীগ্রই আমরা Somoyersonglap24.com ওয়েবসাইট নিয়ে আসছি..

মিয়ানমারে ২৪ হাজার রোহিঙ্গা নিহত, ৪০ হাজার গুলিবিদ্ধ

Share This

মিয়ানমারের সেনাদের গুলিতে ২০১৭ সালের আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত ২৪ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে। রোহিঙ্গাদের ১ লাখ ১৫ হাজার ২৬টি ঘর-বাড়ি আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছে মিয়ানমারের সেনারা। বর্বরতার আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে বেঁচে থাকার শেষ অবলম্বন, মাথা গোঁজার নিরাপদ আশ্রয়স্থল। পাশাপাশি ১ লাখ ১৩ হাজার ২৮২টি ঘরবাড়ি ভাঙচুর করেছে, বাড়িতে লুটপাট করেছে।

মিয়ানমারের সেনারা ১৭ হাজার ৭১৮ জন রোহিঙ্গা নারীকে ধর্ষণ করেছে। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ৪১ হাজার ১৯২ জন মানুষ সেনাদের গুলিতে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন, বুলেটের আঘাতে আহত হয়েছেন। ৩৪ হাজার ৪৩৬ জনকে আগুনে পোড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া ১ লাখ ১৪ হাজার ৮৭২ জন রোহিঙ্গা সেনাদের হাতে নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার এসব মজলুমদের পিটিয়ে রক্তাক্ত করা হয়েছে। তাদের মধ্যেও অনেকের মৃত্যু হয়েছে। 

‘ফোর্সড মাইগ্রেশন অন রোহিঙ্গা: দ্য আনটোল্ড এক্সপেরিয়েন্স’ অর্থাৎ ‘জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা: অব্যক্ত অভিজ্ঞতা’- শীর্ষক গবেষণায় এমন ভয়াবহ তথ্য জানিয়েছে কানাডার অন্টারিওতে নিবন্ধিত বেসরকারি সাহায্য সংস্থা ওন্টারিও ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি (ওআইডিএ)। যুক্তরাজ্যের কুইন্স কলেজে টেকসই উন্নয়ন ইস্যুতে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হয়। এ ছাড়া ১৫ আগস্ট অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত ‘রোহিঙ্গা সঙ্কট: বহুমাত্রিক প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক এক বিশেষ অধিবেশনে কানাডার অন্টারিও ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এজেন্সির সহায়তা গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হয়। 

অস্ট্রেলিয়া, বাংলাদেশ, কানাডা, নরওয়ে এবং ফিলিপাইনের গবেষকরা এ প্রতিবেদন তৈরি করেছেন। এটি লেখা ও সম্পাদনার কাজটি করেছেন অস্ট্রেলিয়ার সুইনবার্ন ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির অধ্যাপক ক্রিস্টিন জুব ও ড. মোহসিন হাবিব, অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া প্রদেশের পরিবেশ, ভূমি, পানি পরিকল্পনা বিভাগের গবেষক সালাহউদ্দিন আহমেদ, কানাডার লরেন্টিয়ান ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক হেনরি পিলার্ড এবং নরওয়ের ইউনিভার্সিটি অব নরডল্যান্ডের সহযোগী অধ্যাপক মাসুদুর রহমান। দ্য আশা ফিলিপাইন ফাউন্ডেশন, অন্টারিও ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি, ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (আইডিইবি), এডুকেশন ফর স্কিল ডেভেলপমন্ট (ইএসডি) ও ফিল্ম ফর পিস ফাউন্ডেশন (এফফোরপি) গবেষণা কর্ম সম্পাদনা ও প্রকাশে সহায়তা করে।

কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়া ৩ হাজার ৩০০ রোহিঙ্গা পরিবারের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে গবেষণাগ্রন্থটি তৈরি করা হয়েছে। গবেষণার মূল লক্ষ্য ছিল ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর থেকে ২০১৮ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া সাড়ে ৬ লাখ রোহিঙ্গার অভিজ্ঞতা। চলতি বছরের জানুয়ারিতে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার ৩৩টি শিবিরের প্রতিটি থেকে ১০০ পরিবারের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে। সাক্ষাৎকারে অংশ নেয়া রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের ২৩ মহকুমার ১ হাজার ৩০৬ গ্রামের অধিবাসী।

এবছরের জানুয়ারিতে কক্সবাজারের শিবিরে রোহিঙ্গাদের ওপর গবেষণা চালানোর সময় ৫টি বিষয়ে জোর দেওয়া হয়। এগুলো হচ্ছে ১.মিয়ানমার থেকে তাদের বাংলাদেশে আসার কারণ আর যাত্রাপথের বর্ণনা। ২.মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের জীবনযাত্রা কেমন ছিল আর জীবিকার ক্ষেত্রে তাদের দক্ষতা কোথায়। ৩.বাংলাদেশের শিবিরে তাদের অভিজ্ঞতা। ৪.বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আর্থসামাজিক অবস্থা এবং তাদের ক্ষতিপূরণের পরিকল্পনা। ৫. ফেরার ক্ষেত্রে রোহিঙ্গাদের মৌলিক চাহিদা কী কী। সাক্ষাৎকারে অংশ নেওয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে ৮০ শতাংশই বলেছেন, তারা মৌখিক কিংবা শারীরিকভাবে লাঞ্ছনা ও গ্রেফতারের শিকার হয়েছেন। রোহিঙ্গাদের মধ্যে ৯৩ ভাগই বঞ্চনার শিকার হওয়ার কথা বলেছেন। তাঁরা সবচেয়ে বেশি বঞ্চনার শিকার হন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গিয়ে—৭৯ শতাংশ। এমনকি তাঁরা স্কুল (৭৬ শতাংশ), থানা (৬৩ শতাংশ) ও ব্যাংকে (২৭ শতাংশ) বঞ্চনার শিকার হয়েছেন। 

এর আগে ওন্টারিও জানায়, গত বছরের ২৫ আগস্ট থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মিয়ানমার সেনাদের নির্যাতনে ৯ হাজার ৪০০ রোহিঙ্গার প্রাণহানি ঘটে। আর তাদের হামলায় ৭৯০ জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে, যাদের বয়স ৫ বছরেরও কম।

জাতিসঙ্ঘ সম্প্রতি ঘোষণা করেছে, মিয়ানমারের সেনারা দেশটির মুসলিম অধ্যুষিত রাখাইন প্রদেশে ‘জাতিগত শুদ্ধি’ অভিযান চালিয়েছে। গত বছরের ২৫ আগস্ট থেকে রাখাইন প্রদেশে মুসলমানদের বিরুদ্ধে নতুন করে ব্যাপক গণহত্যা, ধর্ষণ ও লুটপাটের অভিযান শুরু করে। রোহিঙ্গা মুসলমানরা প্রাণে বাঁচতে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী বসবাস করছেন।

-সময়ের সংলাপ২৪/ডি-এইচ