গুলশান অভিজাত পাড়ায় মধ্যরাতে দেখা মেলে সুন্দরীদের। যারা টাকার বিনিময়ে নানান অনৈতিক কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত হন। মাদক সেবন, মাদক বিক্রি, দেহ ব্যবসা অনেকটা ওপেন সিক্রেট হয়ে উঠেছে। এই চক্রে নাম লেখাচ্ছে টিনেজার থেকে শুরু করে বৃদ্ধ নারীরাও।
তাদেরই একজন ১৯ বছর বয়সী ইডেন ডি’সিলভা ওরফে রামিসা সিমরান। অনেকে তাকে ইয়াবা সুন্দরী নামেও ঢেকে থাকেন। ভার্চুয়াল জগতে তার ইয়াবা সেবনের ছবিও রয়েছে।
তিনি থাকেন বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায়। আড্ডা দেন গুলশান অভিজাত পাড়ায়। ধনাঢ্য ব্যক্তিদের সঙ্গে পরিচিত হয়ে বিভিন্ন সময় তাদের থেকে নানান সুবিধা নিয়ে থাকেন। সুযোগ পেলে ব্ল্যাক মেইলও করেন।
মূলত মাদকের সঙ্গে তার সরাসরি সংশ্লিষ্টতা থাকলেও গুলশান থানা পুলিশের জালে ধরা পড়েছেন চুরির মামলায়।
২ সেপ্টেম্বর গুলশান থানায় ৩৮০/৫০৬ ধারায় (মামলা নং-১, তারিখ ২/৯/১৮ইং) মামলার প্রেক্ষিতে তাকে শুক্রবার (৭ সেপ্টেম্বর) ভোর রাতে আটক করা হয়।
পুলিশের কাছে অভিযোগ রয়েছে এই ইয়াবা সুন্দরী প্রেমের জালে ফাঁসিয়ে অনেক ব্যক্তির কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
পুরান ঢাকার এক সংসদ সদস্যের ছেলে তার ফাঁদে পড়ে অনেক কিছু হারিয়েছেন এবং মাদকের খপ্পড়ে পড়েছেন বলেও পুলিশের কাছে অভিযোগ এসেছে।
রাজধানীর গুলশান, বনানী ও মিরপুরসহ একাধিক থানায় তার নামে মামলা ও জিডি রয়েছে। তার চক্রের বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা সম্ভব হলেও ইডেন ডি সিলভা বরাবরই আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নাগালের বাইরে থেকে গেছেন। অবশেষে শুক্রবার পুলিশের জালে সে গ্রেফতার হয়।
এ ব্যাপারে গুলশান থানার এসআই মো. জাহাঙ্গীর আলম যুগান্তরকে বলেন, গুলশানে প্রায় সময় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সে আসে। সারারাত বিভিন্ন জাগায় সময় কাটায়। শুক্রবার ভোর ৫টায় গুলশান ১৭ নম্বর সড়ক থেকে তাকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়।
তিনি বলেন, শুক্রবার গ্রেফতার করেই তাকে কোর্টে পাঠিয়ে রিমান্ডের জন্য আবেদন করেছিলাম। কিন্তু রিমান্ড নামুঞ্জুর করে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেয় আদালত। আগামী ১১ সেপ্টেম্বর তাকে কোর্টে তোলা হবে এবং আমরা আবারও রিমান্ড চেয়ে আবেদন করে রেখেছি।
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, রাজধানীর বিভিন্ন থানায় তার নামে মামলা রয়েছে। মামলার নথিগুলো আমরা শিগগির সংগ্রহ করবো।
চুরির মামলার বিবরণীতে জানা যায়, গুলশানের এক ধনাঢ্য পরিবারের সঙ্গে গত বছর জুলাই মাসে ইডেন ডি’সিলভার পরিচয় হয়। পরিচয়ের সুবাদে তিনি বিভিন্ন সময় ওই পরিবারে যাওয়া আসা করতেন।
গত ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে ওই বাসা থেকে তিন লাখ টাকা মূল্যের একটি ডায়মন্ডের আংটি হারিয়ে যায়। এরপর মার্চ মাসে ২৮ লাখ টাকা মূল্যের সুইজারল্যান্ডের তৈরি হাবলট ব্র্যান্ডের ঘড়িও খুঁজে পাওয়া যায়নি।
মামলার বাদি জানান, ঘড়ি সম্পর্কে ইডেন ডি’সিলভাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি অস্বীকার করেন। পরে গুলশানের বিভিন্ন সামাজিক ও পারিবারিক অনুষ্ঠানে ইডেন ডি’সিলভার হাতে ঘড়িটি তিনি দেখতে পান।
এ বিষয়ে তখন জিজ্ঞেস করা হলে তিনি জানান, ঘড়িটি ব্যবহার করার জন্য নিয়েছিল পরে ফেরত দিয়ে দেবে।
মামলার বিবরণীতে আরও অভিযোগ করে লেখা হয়েছে, মামলার বিবাদী বিভিন্ন সময়ে ব্যবহারের কথা বলে অনেক মূল্যমান ব্র্যান্ডের জুতা, কাপড়-চোপড় ইত্যাদি নিয়ে আর ফেরত দেয়নি।
যার আনুমানিক মূল্য পাঁচ লাখ টাকা। সব মিলে ৩৬ লাখ টাকার মালামাল ‘লুণ্ঠন’ করা হয়েছে বলে মামলার বিবরণীতে উল্লেখ করা হয়েছে।
মামলার বাদী শেষাংশে উল্লেখ করেছেন, বর্ণিত বিবাদী একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য।
তারা দীর্ঘদিন ধরে গুলশান ধনাঢ্য ব্যক্তিদের সঙ্গে সুসম্পর্ক করে সু-কৌশলে মূল্যবান জিনিসপত্র হাতিয়ে নিয়ে যায়। তাদের থেকে আমার মালামাল ফেরত চাইলে আমাকে হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে।
মামলায় ইডেন ডি’সিলভা ও নিশাত মিমের নাম উল্লেখ করা হলেও পুলিশ শুধুমাত্র ইডেনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছেন।
মামলাটির তদন্ত অফিসার এসআই মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ইডেন ডি’সিলভা যেসব জিনিসপত্র নিয়েছে সেগুলো উদ্ধার করার চেষ্টা করছি। সে খুব চতুর। কোনো কিছুই সহজে স্বীকার করতে চাচ্ছেন না।
-সময়ের সংলাপ২৪/ডি-এইচ