ত্রিদেশীয় সিরিজের আগে বাংলাদেশের প্রথম অনুশীলন পি সারা ওভালে। ড্রেসিং রুম থেকে বেরিয়ে সামনেই রাখা কিটব্যাগ নিয়ে মাঠে ঢুকছিলেন মাহমুদউল্লাহ। হাঁটতে হাঁটতেই কুশলাদি জিজ্ঞাসার পর্ব চলল। ভিভ রিচার্ডসের সঙ্গে সময় কেমন কাটল? জিজ্ঞেস করতেই বাংলাদেশের অধিনায়কের মুখে হাসি। থমকে দাঁড়িয়ে মুগ্ধতা জাগানিয়া হাসিতে বললেন, “অসাধারণ…এতটা ভালো যে বলে বোঝানোর নয়।”
মাত্রই পাকিস্তান সুপার লিগ (পিএসএল) খেলে এলেন। শনিবার ম্যাচ খেলে ঢাকায় ফিরে পরিবারের সঙ্গে কয়েক ঘণ্টা কাটিয়ে রোববার দলের সঙ্গে এসেছেন কলম্বো। ভিভিয়ান রিচার্ডসের সঙ্গ পেয়েছেন পিএসএলেই। মাহমুদউল্লাহর দল কোয়েটা গ্ল্যাডিয়েটর্সের ‘মেন্টর’ সর্বকালের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও সেরা ব্যাটসম্যানদের একজন রিচার্ডস।
এমন কিংবদন্তির সামান্য সাহচর্যও অনেকের মনে অনেক রোমাঞ্চ জাগায়। আনুষ্ঠানিকভাবে তাদেরকে নিয়ে ভালো ভালো কথা বলাটাও অলিখিত নিয়ম। তবে রিচার্ডসকে নিয়ে মাহমুদউল্লাহর ভালোলাগাটা যে স্রেফ ক্রিকেটীয় ভব্যতা ও আনুষ্ঠানিকতাই নয়, সেটা বোঝা যাচ্ছিল বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়কের উচ্ছ্বাসের মাত্রা দেখে।
রিচার্ডসের প্রসঙ্গ উঠতেই মাহমুদউল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে শোনালেন একগাদা ভালো লাগার কথা।
“ভিভ সত্যিই অসাধারণ। এমন একজন মহাতারকা, আমাদের মত ক্রিকেটারদের কাছে তিনি আরাধ্য একজন, কিন্তু তার কথায়, আচরণের একটুও তারকাসুলভ ব্যাপার নেই। দারুণ মিশুক ও প্রাণবন্ত। প্রাণশক্তিতে ভরপুর বলা যায়। সবচেয়ে বড় ব্যাপার, খুব আন্তরিকভাবে মিশেছেন আমাদের সঙ্গে। মনে হয় না মেকি। অনেক কথা বলেন, উৎসাহ দেন। গতবারও কিছুটা দেখেছিলাম, এবারও দেখেছি। আমি সত্যি বলতে মুগ্ধ।”
অনেকের মতেই, আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের শেষ কথা রিচার্ডস। এমন একজনকে নিজেদের দলে পেয়ে যতটুকু পারা যায়, শেখার চেষ্টা করেছেন মাহমুদউল্লাহ। সুযোগ পেলেই গিয়ে কথা বলেছেন।
“কথা তো অনেকই বলেছি। ব্যাটিং নিয়ে সুনির্দিষ্ট করে বললে, পুল শট নিয়ে অনেক কথা বলেছি। পুল-হুকে তো ভিভের জুড়ি ছিল না। এই শটে ব্যালান্সটা খুব গুরুত্বপূর্ণ, যেটা অনেক সময়ই হয়ত আমি রাখতে পারিনি। সেটা কিভাবে ভালো করা যায়, তা নিয়ে কথা বলেছি। অনুশীলনে সেভাবে করার চেষ্টা করেছি।”
“উনার অনেক অভিজ্ঞতাও আমাদের সঙ্গে ভাগাভাগি করেছেন। অনেক স্মৃতি মনে করেছেন। দারুণ মজার মানুষ তিনি।”
আজীবন লালন করার মতো একটি স্মৃতিও এসেছেন মাহমুদউল্লাহ। নিজের প্রশংসার কথা বলতে গিয়ে যেন একটু লজ্জাও পেলেন। পাশাপাশি চোখে-মুখে ফুটে উঠল তৃপ্তির আভাও।
“চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে আমার সেঞ্চুরির কথা বলেছেন ভিভ। ইনিংসটি উনি দেখেছেন, চাপের মধ্যে নেমে যেভাবে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করে মোমেন্টাম পাল্টে দিয়েছিলাম, সেটির কথা বললেন যে তার খুব ভালো লেগেছে। ভিভের মত একজনের এমন প্রশংসা আমার অন্যতম বড় প্রাপ্তি। (বুকে হাত দিয়ে দেখিয়ে) আমার হৃদয়কে স্পর্শ করেছে। আজীবন মনে থাকবে।”
বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক জানালেন, বাংলাদেশ ক্রিকেটের খোঁজখবরও খুব ভালো রাখেন রিচার্ডস।
“বাংলাদেশের ক্রিকেটের কথা বেশ ভালোই জানেন। ভিভ অনেক কথা বলেছেন। বিশেষ করে তামিমের ব্যাটিংয়ের কথা বলেছেন যে ভালো লাগে। মুশফিক, সাকিব, মুস্তাফিজের কথা বলেছেন। পিএসএলে মুস্তাফিজকে দেখে ভালো লেগেছে। আমাদেরকে শুভকামনা জানিয়েছেন।”
সেই শুভকামনাকে সঙ্গী করেই নামছেন মাহমুদউল্লাহ। সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ। কিন্তু অনুপ্রেরণার উৎসও অনেক বড়। রিচার্ডসের আশিস যখন সঙ্গী, তখন আর ভয় কিসে!
-সময়ের সংলাপ২৪/ডি-এইচ