নারীর সম্মান সমাজের সম্মান- আবহমান কাল থেকে মুসলিম সমাজে এ ধারনাটির চর্চা হয়ে আসছে। সামাজিক ভাবে আমরা মুসলিমগণ নারীদের শ্রদ্ধার সর্বোচ্চটুকু দেই। আমাদের সংস্কৃতি ও হিন্দু ধর্মীয় সংস্কৃতি এক নয়। গতকাল হোলি খেলার নামে যেভাবে হিজাবী-নন হিজাবী মুসলিম নারীদের শ্লীলতাহানি করা হল, তা অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়। লেখকের অবস্থান থেকে আমরা এর নিন্দা ও যৌক্তিক প্রতিবাদটুকু করতে পারি। কিন্তু অবাক হই তখন, যখন দেখি মুসলিম নারীদের সামাজিক অধিকার লঙ্ঘন হতে দেখেও পাশ দিয়ে চলে যাওয়া মুসলিম যুবকরা প্রতিবাদ করার ভাষা হারিয়ে উদ্ভ্রান্তের মত হাসেন। একটি ভিডিও অনলাইনে ছড়িয়েছে। এখানে হিজাবধারী এক মেয়ে কান্না করছিলেন। আরেকজন হিজাবধারী স্বাক্ষাৎকারের শুরুতে হোলির আবহে আত্মসম্মান বিরোধী উদ্ভ্রান্ত হাসির পরিসমাপ্তি টানলেন 'চরম অপমানিত হয়েছেন' উল্লেখ করে! ভিডিও টেলিকাস্টের সময় জোর করে রঙ মাখাতে কার্পূণ্য করেনি এক তরুন হাত!
সামজিক ভাবে মুসলিম সেন্টিমেন্ট ও চর্চাকে শ্লীলতাহানি ঘটিয়ে যারা পার পেয়ে গেলো প্রশাসনের কাছে তারা কি পার পাওয়া উচিৎ ছিলো? আগামী বৎসর এর রুপ ঠিক কতটা ভয়াবহ হতে পারে তার আশংকা করতে গা শিওরে উঠছে! এরপর কি বোরকা খুলে হোলি পালন শুরু হবে??
ধর্ম যার যার কথাটা মানা যায়, উৎসব সবার হলে কুরবানীর দিন গরুর সামনে চা চক্র করে তাদেরও জানান দেয়ার দায়টুকু চলে আসে। আর যদি ধর্মীয় সেন্টিমেন্ট ও বৈচিত্রের স্বীকৃতির কথা আসে তাহলে অবশ্যই ধর্ম বিরোধী ও স্বতন্ত্র সংস্কৃতি বিরোধী অবস্থান গুলোকে ফাইন্ড আউট করা রাষ্ট্রীয় দ্বায়িত্বে পড়ে। ধর্মীয় অধিকার সকলের সমান- এই সুন্দর কথাটা উপলব্ধি করে সংখ্যালঘু সংস্কৃতির ছাড়িয়ে যাওয়া বাড়ন্তকে পানিশড বা ক্রিটিসাইজড করা সকল মুক্তচর্চাকারীর দ্বায়িত্ব। এই দ্বায়িত্ব থেকে পার পাওয়ার উপায় কোথায়?
অনেকেই বলতে পারেন, ওদের ভেতর মুসলিম যুবগ থাকতে পারে। তাদের বলবো, যুবকের সাম্প্রদায়িকীকরনের আগে উতসবের সাম্প্রদায়িকীকরনের গুরুত্বটুকু উপলব্ধি করুন। তাহলেই ভিন্ন সম্প্রদায়ের এই লজ্জাজনক অবস্থা পর্দায় ভেসে ওঠেনা।
বহু বছর থেকেই এদেশে সাম্প্রদায়িক নিপীড়ন চলে আসছে। প্রশাসন কী বিশেষ কারনে দেখেও না দেখে চুপ করে থাকে তার ব্যাখ্যা দেয়াটা শোভন বা আইনত দৃষ্টিনন্দনও নয়। এক্ষেত্রে সামাজিক প্রতিবাদের বিকল্প কী হতে পারে? ধরে নিলাম এসব উগ্র যিবকদের বেশির ভাগই উচ্ছন্নে যাওয়া মুসলিম তরুন, ধরে নিলাম আমাদের অসাম্প্রদায়িক অঙ্গন নিশ্চুপ থেকে যথার্থই মানবাধিকার চর্চা করছেন। কিন্তু আগামী বছর মুসলিম সেন্টিমেন্ট থেকে জাগ্রত কিছু সামাজিক তরুন যদি দল বেধে এসব উদ্ভ্রান্ত তরুনদের ধাওয়া দেয়, সামাজিক আত্মরক্ষা করতে চায়! সে কি খুব সুন্দর হবে? তখনও কি মানবাধিকারের ধ্বজাধারী পরম আত্মীয় বন্ধুরা নিশ্চুপ থাকবার উপাদান খুঁজে পাবেন? ছেলেবেলা থেকে চমৎকার এ কথাটি শুনে আসছি- ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন