বিশ্ব ভালোবাসা দিবস আজ। ঘৃণা বিদ্বেষ যুদ্ধ সহিংসতা ছাপিয়ে আজ উদ্যাপিত হবে দিবসটি। মানুষে মানুষে বন্ধুত্ব, মমতা ছড়িয়ে দেওয়ার প্রত্যয়ে নানা আয়োজনে বাংলাদেশসহ বিশ্বে পালিত হবে দিনটি। এ বছর পহেলা ফাল্গুন ও ভালোবাসা একই দিন হওয়ায় বিশেষভাবে উদযাপন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ঘৃণা নয় মমতা, যুদ্ধ নয় শান্তি, সহিংসতা নয় ভালোবাসার বিজয় ঘোষণা করা হবে আজ শুক্রবার। ভালোবাসার শর্ত হলো বিশ্বাস, আস্থা ও বন্ধুত্ব। এছাড়া চিন্তুা রুচি ও স্বার্থের ঐক্যই হলো ভালোবাসার আরেক শর্ত।
এই দিনে স্থান ও ব্যক্তিভেদে রয়েছে ভালোবাসার রকমফের থাকলেও মানবজীবনে এর আবেদন শাশ্বত। কী প্রাচ্য, কী পাশ্চাত্য- কবিতা, গান আর পঙ্ক্তিমালায় অব্যক্ত ভালোবাসা প্রকাশের পথ খুঁজে নেয় শাশ্বত প্রেম। হৃদয়ের ব্যাকুলতা জানানোর যেমন রয়েছে বিভিন্ন উপলক্ষ, তেমনি ভিন্নতা রয়েছে প্রকাশ ভঙ্গিতেও। পাশ্চাত্যে রোমিও জুলিয়েট, জিম ও ডেলা, অর্ফিয়ুস-ইউরিডিস, মধ্যপ্রাচ্যে সিরিন-ফরহাদ, লাইলি-মজনু, ইউসুফ জোলেখার প্রেম কাহিনি এখনো ভালোবাসার উদাহরণ হয়ে আছে। বাংলায় চন্ডিদাস ও রজকীনি, বেহুলা ও লক্ষিন্দরের গল্প ভালোবাসার মিথ।
ভালোবাসা নিয়ে অজস্র কবিতা আর গান সুরে-বেসুরে শোনানো হবে প্রিয়জনকে। প্রিয়তমার হাত ধরে কিংবা পাশে বসে অনেকেই রচনা করবে নিজেদের ভবিষ্যৎ। হয়তো এদিনেই বিভেদ ভুলে মিলন হবে দুই বন্ধুর। কেউবা অণুপ্রাণিত হবে সৃষ্টির প্রতি ভালোবাসায়। মুঠোফোনের মেসেজ, ই-মেইল অথবা ফেসবুকের চ্যাটিংয়ে খুঁজে পাবে নতুন দিনের ঠিকানা।
এ দিনে চকলেট, পারফিউম, বই ইত্যাদি শৌখিন উপঢৌকন প্রিয়জনকে উপহার দেওয়া হয়। তবে ভালোবাসা প্রকাশে সবার আগে জায়গা নিয়ে এসেছে ফুল। কথিত আছে, ২৬৯ কিংবা ২৭০ খ্রিস্টাব্দে রোমান সম্রাট ক্লডিয়াস মৃত্যুদণ্ড দেন সেন্ট ভ্যালেইন্টাইনকে। কারো মতে, অন্ধপ্রেমিকার চোখের দৃষ্টি ফেরাতেই জীবন দিতে হয়েছে তাকে। কেউ বলে, বিয়ে প্রথা নিষিদ্ধের বিরুদ্ধে নিজে বিয়ে করে বিদ্রোহী হন তিনি। আবার কারো মতে, রোগীর সেবা আর খ্রিস্টধর্ম প্রচারের অপরাধে জীবন দিতে হয় চিকিৎসক ভ্যালেন্টাইনকে।
জীবনের পরিসমাপ্তির মধ্য দিয়ে প্রেমের প্রতীক হয়ে উঠেন সেইন্ট ভ্যালেন্টাইন। ৪৯৬ খ্রিস্টাব্দে প্রথম পোপ জুলিয়াস ঘোষণা করেন ভ্যালেন্টাইন ডে। তখন থেকে ক্রমেই বাড়ছে ভালোবাসা দিবস পালনের পরিধি। প্রতিনিয়তই ভালোবাসার সংজ্ঞা বের করছেন যে যেমন উপলব্ধি করেন। চিরায়ত বন্ধন আর বিশ্বাসের সম্পর্কের নামই ভালোবাসা। ভালোবাসার শুভেচ্ছা শুধু প্রেমিক-প্রেমিকাই নয়, প্রযোজ্য বাবা-মা-ভাইবোন, বন্ধু সবার ক্ষেত্রেই।
দিনটিকে ঘিরে ঢাকাসহ সারা দেশেই বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। রাজধানীর শাহবাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর, বইমেলা চত্বর থেকে শুরু করে এর আশপাশের এলাকায় থাকছে দিনভর নানা অনুষ্ঠান। পহেলা ফাল্গুন এবং ভালোবাসা দিবস একই দিন হওয়ায় আজ বইমেলা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর সেজে উঠবে নতুন আঙ্গিকে।
দিনটিকে খুবই ঘটা করে উদযাপন করতে পার্ক ও বিনোদন কেন্দ্রগুলো ভালোবাসার মানুষদের দ্বারা পরিপূর্ণ থাকবে। এই দিবসটি যুক্তরাষ্ট্র বা পাশ্চাত্য সমাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। যুক্তরাজ্যে মোট জনসংখ্যার অর্ধেক প্রায় ১০০ কোটি পাউন্ড ব্যয় করে এই ভালোবাসা দিবসের জন্য কার্ড, ফুল, চকলেট, অন্যান্য উপহারসামগ্রী ও শুভেচ্ছা কার্ড ক্রয় করে এবং আনুমানিক প্রায় ২ দশমিক ৫ কোটি শুভেচ্ছা কার্ড আদান-প্রদান করা হয়।
-সময়ের সংলাপ২৪/ডি-এইচ
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন