এম এ কাদির চৌধুরী ফারহান: মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার ধলাই নদীর ইজারার মেয়াদ গত ১৩এপ্রিল (৩০সে চৈত্র) শেষ হলেও অবৈধভাবে প্রায় ১৭ টি ঘাট থেকে বালু উত্তোলন করছে প্রভাবশালী একটি মহল ।
ফলে রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার এবং হুমকির মুখে পড়েছে এই বালু ঘাটগুলোর পার্শ্ববর্তী ব্রীজ ও বসতি বাড়ীসহ ফসলি জমি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কমলগঞ্জ পৌরসভা, ১নং রহিমপুর ইউনিয়ন, ৩নং মুন্সিবাজার ইউনিয়ন, ৫নং কমলগঞ্জ ইউনিয়ন ও ৮নং মাধবপুর ইউনিয়নের মধ্যদিয়ে বয়ে যাওয়া ধলাই নদীর বালুমহাল থেকে বালু উত্তোলনে পুরাতন ইজারাদারের মেয়াদ শেষ হয় ১৩ এপ্রিল (৩০শে চৈত্র) ও নতুন ইজারার সরকারের রাজস্ব পরিশোধ না করেই অবাধে চলছে বালু উত্তোলন।
২০১০ সালে প্রণীত বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইনের চার নম্বর ধারার (খ) উপধারায় বলা আছে সেতু, কালভার্ট, ড্যাম, ব্যারেজ, বাঁধ, সড়ক, মহাসড়ক, বন, রেললাইন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনা হলে অথবা আবাসিক এলাকা থেকে সর্বনিম্ন এক কিলোমিটার বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত সীমানার মধ্যে হলে বালু উত্তোলন করা যাবে না। (গ) উপধারায় বলা আছে, বালু বা মাটি উত্তোলন বা বিপণনের উদ্দেশ্যে ড্রেজিংয়ের ফলে কোনো নদীর তীর ভাঙনের শিকার হতে পারে এরূপ ক্ষেত্রেও বালু উত্তোলন করা যাবে না।
নদীর দুই পাশের স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বছরের পর বছর ধরে নিয়ম উপেক্ষা করে অবৈধভাবে বালু তুলছে একটি প্রভাবশালী একটি মহল, তাতে করে আমাদের বসতি বাড়ি ও ফসলি জমি হুমকির মুখে। স্থানীয় প্রশাসন অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ করার নির্দেশ দিলেও তারা তাতে কর্নপাত করেনি। ট্রাক চালকরা জানায়, তারা প্রতি ট্রাক ২৫০০ টাকা থেকে ৩০০০ টাকা করে বালু কেনে জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করে থাকে।
১নং রহিমপুর ইউনিয়নের ধর্মপুর গ্রামের এক কৃষক জানায়, এখানে বালু উত্তোলনের ফলে আমাদের অনেক ফসলি জমি ইতোমধ্যে নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে।
১নং রহিমপুর ইউনিয়নের আওয়ামীলীগ সভাপতি জুনেল আহমদ তরফদার জানান, ধলাই নদীর বালুমহালের ইজারার মেয়াদ গত ১৩ এপ্রিল (৩০শে চৈত্র) শেষ হয়েগেলেও স্থানীয় প্রভাবশালী মহল আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েই সকল ঘাট থেকে নিয়মিত বালু উত্তোলন করছে। নতুনভাবে যারা ইজারা পেয়েছেন আমার জানামতে তারা এখনও সরকারের রাজস্ব আদায় করেনি বলে প্রশাসন এখনও তাদের ঘাটগুলো বুঝিয়ে দেয়নি, এর পরও তারা কেমনকরে বালু উত্তোলনের সাহস পায়? এমন প্রশ্ন তোলেন তিনি।
আগের ইজারার মালিক জিল্লুল আহমদ বলেন, আমার ইজারার মেয়াদ সদ্য শেষ হলেও আমি নতুন ইজারাদার থেকে ১৫ দিনের সময় নিয়েছি, সাথেকরে আমি কোর্ট থেকে আরও ২ মাসের সময় নিয়ে এসেছি।
কোর্টের অনুমতি পত্রটি দেখতে চাইলে তিনি বলেন, আর দেখে কি করবেন, অনুমতি পত্রটি এখন অন্যজনের কাছে আছে।
নুতন ইজারা প্রাপ্ত আনোয়ার এন্টারপ্রাইজের সত্যাধিকারী আনোয়ার হোসেন বলেন, এইবারের ইজারায় ঘাটগুলো আমি পেলেও করোনা ভাইরাসের কারনে অফিস-আদালত বন্ধ থাকাতে প্রশাসন আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও আমাকে ঘাটগুলো বুঝিয়ে দেয়নি, আর বালু যারা তুলছে তারা আমার সাথে কোনও যোগাযোগ করেনি।
বর্তমানে ধলাই নদীতে (নদী খনন) একটি প্রকল্প চালু আছে, হয়তবা তারা ঐ প্রকল্প থেকে বালু উত্তোলন করছে ।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আশেকুল হক বলেন, পুরনো ইজারাদারের মেয়াদ শেষ হয়েছে ১৩এপ্রিল (৩০ চৈত্র)। নতুন ইজারাদারকে এখনও ঘাটগুলো প্রশাসনের পক্ষথেকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি।
-সময়ের সংলাপ২৪/ডি-এইচ
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন