বন বিভাগের নীতিমালা অনুসরণ না করে বনের ভেতরে কভারবিহীন তারে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ায় বিদ্যুতস্পর্শে বানরের মুখ, হাত, পাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশ ঝলসে যাচ্ছে। গত এক সপ্তাহে অন্তত ৮-১০টি বানর বিদ্যুতস্পর্শে আহত হয়েছে। এ বনে প্রায় তিন শতাধিক বানর আছে।
ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় মধুপুর বনাঞ্চলঘেঁষা ফুলবাড়িয়ার সন্তোষপুর বনাঞ্চলে এক সময় হরিণ, ভাল্লুক, মেছোবাঘ, বাঘডাস, হনুমান, বানর, শিয়াল, সজারো ও খরগোশসহ নানা প্রজাতির বন্যপ্রাণীর অবাধ বিচরণ ছিল। বনদস্যুরা গাছ কেটে বন উজাড় করাসহ বনের ভেতর দিয়ে কভারবিহীন তারের কারণে হারিয়ে যাচ্ছে বন্য প্রাণীগুলো।
এর মধ্যে অন্যতম মধুপুর বনাঞ্চলঘেঁষা ফুলবাড়িয়ার সন্তোষপুর বনাঞ্চলে দেখা যায় বানর। বানর বংশগত ভাবে দলবদ্ধ হয়ে থাকে। কোন বানর বিদ্যুতায়িত হলে দল বেঁধে তাকে রক্ষার চেষ্টা চালায় দলের অন্য বানরগুলো। ফলে একসঙ্গে একাধিক বানর আহত হয়। এতে করে হুমকির মুখে পড়েছে বানরসহ বিভিন্ন বন্য প্রাণী।
বানর, বান্দর বা বাঁদর স্তন্যপায়ী প্রাণী। মূলত সিমিয়ান প্রাইমেট গণের তিনটি দলের মধ্যে দুইটির সদস্যরা সাধারণ ভাবে বানর নামে পরিচিত। এই দলগুলি হলো, নতুন পৃথিবীর বানর, পুরাতন পৃথিবীর বানর এবং নরবানর।
অধিকাংশ প্রজাতিই গাছে বাস করে। নিরামিষভোজী হলেও এদের বাসস্থান ও খাদ্যে পর্যাপ্ত বৈচিত্র্য আছে। বাংলাদেশে ১০ প্রজাতির প্রাইমেটের মধ্যে রয়েছে ৫ প্রজাতির বানর। পৃথিবীতে বর্তমানে বিদ্যমান ১৯ প্রজাতির বানরের মধ্যে এক প্রজাতি ছাড়া অন্য সবগুলি ছড়িয়ে আছে এশিয়ায় আফগানিস্তান থেকে জাপান, ফিলিপাইন থেকে বোর্নিও পর্যন্ত।
খোজ খবর নিয়ে জানা যায়, সন্তোষপুর শালবনে বানরের খাবার নিয়ে বেশ কয়েকটি ভ্রাম্যমাণ দোকান বসে। খাবারের দোকানগুলো ঘিরে রয়েছে প্রায় দেড় শতাধিক বানর। বানর দেখতে আসা ২৫-৩০ জন দর্শনার্থী।দোকানগুলো থেকে কলা, মুড়ি, বাদাম, চানাচুর, বিস্কুটসহ বিভিন্ন ধরনের খাবার কিনে দিচ্ছে।
বন এলাকায় ভ্রাম্যমাণ একজন দোকানদার বলেন, গড়ে প্রতিদিন একেক জন দোকানদার পাঁচ-সাতশ টাকার বানরদের খাবার বিক্রি করেন। তার মধ্যে মুড়ি, চানাচুর, কলা, বাদাম বিক্রি হয় আড়াইশ থেকে তিনশ টাকা। তবে দর্শনার্থীদের দেওয়া খাবার বানরদের চাহিদা অনুযায়ী পরিমাণে অনেক কম। তাছাড়া কিছুদিন আগে বনের ভেতর দিয়ে কভারবিহীন তারে বিদ্যুৎ নেয়ায় ৮ থেকে ১০টি বানর ঝলসানো অবস্থায় দেখা যায়।
খাবার নিয়ে বনের ভিতরে ডুকলে দেখা যায়, অন্তত ছোট-বড় পাঁচটি বানরকে ঝলসানো অবস্থায় দেখা গেছে। একটি বানরের হাত, আরেকটির পা পুড়ে ঝুলে রয়েছে। বানরগুলোর মুখ, হাত, পা ও শরীরের ক্ষত স্থানে পচন ধরেছে। জরুরি ভিত্তিতে আহত বানরগুলোর চিকিৎসার প্রায়োজন বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
ফুলবাড়িয়া পল্লী বিদ্যুতের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) অনিতা বর্ধন বলেন, বানরগুলো তারে জড়িয়ে আহত হচ্ছে বলে শুনেছি। বিট কর্মকর্তাও কভারিং তার দিয়ে সংযোগের জন্য আবেদন করেছেন। এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সন্তোষপুর বিট কর্মকর্তা আশরাফুজ্জামান খান বলেন, ‘বনের বানরসহ অন্যান্য বন্য প্রাণী তারে জড়িয়ে ঝলসে যাওয়ার পর বিষয়টি লিখিতভাবে তাদেরকে বলেছি। কিন্তু, এ বিষয়ে কোন পদক্ষেপ তাদের নিতে দেখিনি।
এর আগে গত ১৫ ডিসেম্বর সন্তোষপুর বনাঞ্চলের আশপাশে ও বিট অফিসে পল্লী বিদ্যুতের নতুন সংযোগ উদ্বোধন করেন সংসদ সদস্য মোসলেম উদ্দিন। ওই সময় তিনি পল্লী বিদ্যুৎ কর্মকর্তাদের বন এলাকার ভেতরে সিলভারের তারের পরিবর্তে দ্রুত কভারিং কেবল দিয়ে বিদ্যুৎ লাইন টানার নির্দেশ দেন।
-সময়ের সংলাপ২৪/ডি-এইচ
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন