কয়েক হাজার সিরীয় শরণার্থীকে নাগরিকত্ব প্রদান করেছে তুরস্ক। তুর্কি সরকারের তরফ থেকে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। হুরিয়াত পত্রিকার এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, সর্বমোট ৭২ হাজার সিরীয় শরণার্থীকে নাগরিকত্ব দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তুরস্ক।
পার্লামেন্টে তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুলেইমান সোইলু বলেন, ৩৬ হাজার প্রাপ্তবয়স্ক এবং ৩৬ হাজার শিশুর নাগরিকত্ব প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তুরস্ক।
এছাড়া তুরস্কে প্রায় তিন লাখ ৮০ হাজার সিরীয় শিশুর জন্ম হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আশা প্রকাশ করে বলেন, ওই শিশুদেরও একইভাবে নাগরিকত্ব প্রদান করা হবে। তিনি বলেন, ভ্রাতৃত্বের প্রতি এটা আমাদের অনেক বড় বিনিয়োগ।
প্রায় ২৮ হাজার সিরীয় নাগরিক গত ২৪ জুন তুরস্কের নির্বাচনে ভোট দেয়ার সুযোগ পেয়েছে। এছাড়া ২০১৯ সালের নির্বাচনে ভোট দেয়ার সুযোগ পাবেন আরও ৩৬ হাজার নাগরিক।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান বলেছেন, বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো থেকে দেশকে রক্ষার জন্য কয়েক দিনের মধ্যে উত্তর সিরিয়ায় ফোরাত নদীর পূর্ব দিকে সামরিক অভিযান শুরু করবে তুরস্ক এবং এই পদক্ষেপ সিরিয়ার রাজনৈতিক সঙ্কট সমাধান সহজতর করবে। বুধবার রাজধানী আঙ্কারায় বেস্টেপে প্রেসিডেন্সিয়াল কমপ্লেক্সে অনুষ্ঠিত তুর্কি প্রতিরক্ষা শিল্প সম্মেলনে ভাষণদানকালে এরদোগান একথা বলেন।
এরদোগান বলেন, ফোরাত নদীর পূর্বের সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলোকে নিশ্চিহ্ন করতে তুরস্কের সিদ্ধান্তকে বাস্তবে পরিণত করার সময় এখনই। পূর্ব সিরিয়ার সন্ত্রাসী গোষ্ঠী পিপলস প্রোটেকশন ইউনিটস (ওয়াইপিজি) দ্বারা নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলগুলির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, তুরস্কের লক্ষ্য কখনোই যুক্তরাষ্ট্রের সেনারা নয় বরং সন্ত্রাসী দলের সদস্যরাই তুরস্কের টার্গেট।
১১ ডিসেম্বর পেন্টাগণ ঘোষণা করেছিল যে, তুরস্কের সেনাবাহিনী ও মার্কিন সমর্থিত ওয়াইপিজির মধ্যকার বিতর্ক রোধ করতে তারা সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে আমেরিকার পর্যবেক্ষণ স্থাপনাগুলো তৈরি করছে। অবশ্য এ পর্যবেক্ষণ টাওয়ার নির্মাণ না করতে আঙ্কারা ওয়াশিংটনকে অনুরোধ করেছিল। তাতে কান দেয়নি যুক্তরাষ্ট্র।
২০১৬ সাল থেকে ইতোমধ্যে সিরিয়ায় দু’টি সামরিক অভিযান চালিয়েছে তুর্কি সেনাবাহিনী। সর্বশেষ অভিযানে তুরস্ক সমর্থিত সিরিয়ার বিদ্রোহীরা মার্চ মাসে সীমান্ত শহর আফরিন ওয়াইপিজিকে হটিয়ে দেয়। শহরটি এখন তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে দাবি করছে যে, তুরস্ক ও পিকেকের শাখা ওয়াইপিজির মধ্যকার উত্তেজনা আইএসবিরোধী লড়াইয়ে অগ্রগতি কমিয়ে দিয়েছে। গতকাল এরদোগান বলেন, নতুন মার্কিন পরিকল্পনা সন্ত্রাসীদের রক্ষা করার জন্য, তুরস্ককে নয়। সিরিয়ায় এখন আইএস বা দায়েশের কোনো হুমকি নেই। ওয়াইপিজি সদস্যদের কাছ থেকে উত্তর-পূর্ব সিরিয়ান শহর মানবিজকে মুক্ত করার মার্কিন প্রতিশ্রুতিকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘বিলম্বিত কৌশল’ সম্পর্কে অভিযোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘এটা স্পষ্ট যে সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের পর্যবেক্ষণ স্থাপনার লক্ষ্য আমাদের দেশকে সন্ত্রাসীদের থেকে রক্ষা করা নয় বরং সন্ত্রাসীদের তুরস্কের কাছ থেকে রক্ষা করা।’ আঙ্কারা ওয়াইপিজিকে পিকেকের একটি প্রশাখা বলে মনে করে। কেবল তুরস্ক নয়, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছেও পিকেকে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত। উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সিরিয়াতে প্রায় ৪০,০০০ স্থানীয় নাগরিককে প্রশিক্ষণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনা সম্পর্কে সন্দেহ করছে তুরস্ক।
যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে ক্ষমতাসীন জাস্টিস ও ডেভেলপমেন্ট পার্টির (একেপি) মুখপাত্র ওমর সেলিক ১১ ডিসেম্বর বলেন, ‘আমরা তাদের সদিচ্ছার মনোভাব দেখি না’। তিনি আরো বলেন যে, এই পদক্ষেপকে ‘সিরিয়ায় সন্ত্রাসের উপাদানে নতুন সমর্থন’ হিসেবে দেখে তুরস্ক। যুক্তরাষ্ট্রের যুগ্ম প্রধান চিফ অফ স্টাফ জেনারেল জোসেফ ডনফোর্ড ৭ ডিসেম্বর বলেন, সিরিয়ায় ‘স্থিতিশীলতা প্রদান’ করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে প্রায় ৪০,০০০ স্থানীয় যোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ প্রদান এবং অস্ত্রসজ্জিত করা প্রয়োজন।
-সময়ের সংলাপ২৪/ডি-এইচ
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন