একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শোচনীয় পরাজয়ের পর জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিএনপির কোনো কোনো নেতা। কেউ আবার ঐক্যফ্রন্টে যাওয়ার কঠোর বিরোধিতাও করেন। তবে সম্প্রতি দলের চেয়ারপারসন কারাবন্দি বেগম খালেদা জিয়া ঐক্যফ্রন্টকে আরও শক্তিশালী করার নির্দেশনা দেন। আইনজীবীদের মাধ্যমে নেতাকর্মীদের কাছে এমন নির্দেশনা আসে।
নির্বাচনের পর বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি গণমাধ্যমে বলেন, ‘বিএনপির মতো জনপ্রিয় দলের ২০ দলীয় জোট থাকার পর অন্য কোনো জোটে যাওয়ার প্রয়োজন ছিল না। স্থায়ী কমিটির শীর্ষ নেতারা বিএনপির মতো দলকে চালিয়ে নেয়ার জন্য যথেষ্ট। আমাদের বাইরের অচেনা-অজানা লোকের দ্বারস্থ হওয়ার কোনো প্রয়োজন ছিল না।’
এছাড়া দলের বিভিন্ন ফোরামে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যাপারে বেশ কয়েকজন নেতা সন্দেহ প্রকাশ করেন। কিন্তু মামলার হাজিরার সময় আইনজীবীদের সঙ্গে এ নিয়ে খালেদা জিয়া সুস্পষ্ট বার্তা দেন। দলীয় প্রধানের এ নির্দেশনার পর জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি এবং ২৪ ফেব্রুয়ারি কর্মসূচি ঘোষণা করে।
সূত্র জানায়, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পর এটি আওয়ামীবিরোধী রাজনীতির বৃহত্তর প্ল্যাটফর্মে রূপ নিয়েছে। এ জোট গঠনের আগে বিএনপিকে স্বাধীনতাবিরোধী মৌলবাদ দলের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলার যে অপপ্রচার চলছিল সেটা ফিকে হয়ে গেছে। বরং বিএনপি যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদার, একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতি দল সেটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বিএনপির দায়িত্বশীল এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাগো নিউজকে বলেন, ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের গঠন সাধারণ মানুষের মধ্যে আশার সঞ্চার ঘটিয়েছে। এ জোট গঠনের আগে বিএনপি দেশে এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে একপ্রকার কোণঠাসা ছিল। কিন্তু এ জোটের যেসব রাজনৈতিক দল রয়েছে তাদের সাংগঠনিকভাবে জনবিচ্ছিন্ন থাকলেও নেতৃত্বে যারা রয়েছেন তাদের প্রায় প্রত্যেকেরই জাতীয় রাজনীতি এবং আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে গুরুত্ব রয়েছে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের ফলে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয়ার মতো পরিবেশ পায়।’
তিনি বলেন, ‘যে উদ্দেশ্য সামনে রেখে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করা হয়েছে তার প্রয়োজনীয়তা এখনও শেষ হয়ে যায়নি। আন্দোলনের অংশ হিসেবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট বা বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। নির্বাচনে পরাজয় হয়েছে তার মানে এই নয় যে, জোটের প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে গেছে।’
‘ঐক্যফ্রন্ট গঠন করে খুব বেশি লাভবান না হলেও ক্ষতি হয়নি। এছাড়া ড. কামাল হোসেনসহ ফ্রন্টের নেতারা তাদের অবস্থান পরিবর্তন করেননি। সরকারের জুলুম-নির্যাতনের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান অনড় রয়েছে। ঐক্যফ্রন্টকে আরও শক্তিশালী করতে জোটের বাইরে থাকা অন্য দলগুলোর সঙ্গেও আলোচনা চলছে।’
জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে খালেদা জিয়ার নির্দেশনা প্রসঙ্গে তার আইনজীবী দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, ‘ড. কামাল হোসেন তো আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দিয়েছেন যে, আমরা একসঙ্গে নির্বাচন করেছিলাম, একসঙ্গে আছি এবং ভবিষ্যতে রাজনীতি একসঙ্গে করব। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আরও শক্তিশালী করার কথা ড. কামাল হোসেন বলেছেন। তার দলের আরও গুরুত্বপূর্ণ নেতারাও বলছেন। এমনকি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও বলছেন। পর্যায়ক্রমে দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের মুখ দিয়েও এ কথাগুলো আসবে।’
বিষয়টি নিয়ে বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, ‘আমরা তো ঐক্যফ্রন্ট করেছি আমাদের চেয়ারপারসনের নির্দেশে। সুতরাং চেয়ারপারসন ঐক্যফ্রন্টের ব্যাপারে ডেফিনেটলি পজেটিভ থাকবেন, সেটাই স্বাভাবিক। ঐক্যফ্রন্ট আরও শক্তিশালী হবে এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ঐক্যফ্রন্ট আরও কীভাবে বড় করা যায় সেই ব্যাপারেও চিন্তাভাবনা চলছে।’
এদিকে চিকিৎসা শেষে সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফিরে গত ৩১ জানুয়ারি গণফোরামের এক সংবাদ সম্মেলনে ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট শতভাগ ঐক্যবদ্ধ আছে। আমরা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেব।’
তিনি বলেন, ‘ঐক্যফ্রন্ট হলো ১৬ কোটি মানুষকে নিয়ে। সেই ঐক্য অবশ্যই আছে। এ ঐক্য আমি বিভিন্ন জায়গায় দেখেছি। এ ঐক্য অনেকের মধ্যেই আছে। এটা আরও সুদৃঢ় হবে। এ দেশের জনগণ ক্ষমতার মালিক, জনগণ জাতীয় সম্পদেরও মালিক, জনগণ আইনের শাসন চায়। তাদের মধ্যেও এ ঐক্য রয়েছে।’
-সময়ের সংলাপ২৪/ডি-এইচ
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন