রুবেল হোসেন আউটটা যেন ভবিতব্য মনে করে হাঁটা দিয়েছিলেন। তাকে ফেরালেন মুশফিক, রিভিউয়ের কথা মনে করিয়ে বেশ কথাও শুনিয়ে দিলেন। মুশফিকের যে তখনও সে ইনিংসে অনেক কিছু করার বাকি!
মুশফিকুর রহিম তো কম আফসোস করেননি ক্যারিয়ারে, দলকে দিতে দিতেও দিতে পারেননি!
সেই গায়ানায়, এর আগের সিরিজেই। আরেকবার ওয়ার্ল্ড টি-টোয়েন্টির ছায়া ফিরে এসেছিল তার আউটের ধরনে। শেষে গিয়ে আরেকবার শেষটা না করেই ফিরে আসতে হয়েছিল তাকে। এমন যন্ত্রণা তার চেয়ে ভাল আর কেইবা বোঝেন! সেই মুশফিক আজ শেষ করলেন। না, দ্বিতীয় ইনিংসে নয়। প্রথম ইনিংসে মুশফিকের ব্যাটিংয়েই তো শেষ হয়ে গেল শ্রীলঙ্কা!
১ রানে ২ উইকেট হারিয়েছিল বাংলাদেশ, চোট পেয়ে উঠে যাওয়া তামিমসহ কার্যত তখন ৩ উইকেট নেই। সঙ্গী মোহাম্মদ মিঠুন, ক্যারিয়ারে যার চতুর্থ ওয়ানডে। মুশফিক প্রথমে তার সঙ্গে গড়লেন ম্যাচের গতিপথ বদলানো জুটি। তবে সে পথটা আর বদলালো কই তখন, আবারও তো সেই পিচ্ছিল পথেই হাঁটা।
মুশফিককে সঙ্গ দেওয়ার জন্য বাকি এরপর শুধু টেইল-এন্ডাররা। তবে তখনও মুশফিকের দেওয়ার বাকি অনেক কিছুই।
রুবেলের পর মুস্তাফিজুর রহমানকেও ওভারের প্রথম বলেই বারকয়েক সিঙ্গেল নিয়ে স্ট্রাইক দিলেন, যখন তার নিজে সব দায়িত্ব নেওয়া কথা, ঠিক তখন কিনা মুশফিক এমন করছেন! এমনকি সবাই যখন জানেন, মুস্তাফিজের পর ৯ উইকেট চলে গেলেও বাংলাদেশের আর কেউ ব্যাটিং করার নেই, ঠিক তখন!
তবে মুশফিক যেন জানতেন। শেষটা হচ্ছে না। তার ইনিংসটা বাকি তখনও!
অবশ্য তামিমকে দেখে বিস্মিতই হয়েছিলেন, “যখন তামিম ব্যাট করতে এলো, আমি আরও উজ্জীবিত হলাম। তার জন্য, দেশের জন্য আমার কিছু করতে হতো।”
মুশফিক করলেন অনেক কিছুই। ১ রানে ২(৩) উইকেট হারানো বাংলাদেশকে টেনে নিলেন ২৬১ পর্যন্ত। তামিমকে নামতে দেখে যেন বারুদ ফুটলো তার ব্যাটে। এরপর যেটাই করেন, সেটাই হয়! স্লগ সুইপ, ইনসাইড-আউট, রিভার্স ফ্লিক- এ শুধুই মুশফিকের দিন!
“আল্লাহকে ধন্যবাদ। প্রথম ম্যাচ জয়টা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, ছেলেরা দারুণ উজ্জীবিত ছিল। শুরুটা যেভাবে চেয়েছিলাম, সেভাবে হয়নি। তবে মিঠুনকে কৃতিত্ব দিতে হবে, সে আমার ওপর থেকে চাপ সরিয়ে নিয়েছে। এরপর আমি শুধু সুযোগগুলো নিয়েছি, যেগুলো কাজে দিয়েছে”, মুশফিকের কন্ঠে দলের কথাটাই আসছে ঘুরেফিরে!
তামিমের অসম সাহসের সঙ্গে তাই টিমম্যান মুশফিকের গল্পটাও বলতে হবে। চোট ছিল, ফিট ছিলেন না পুরো- ব্যাটিংয়েও সেটা স্পষ্ট হয়েছে বারবার। পরে ফিল্ডিং-ও করতে পারেননি। এর ওপর দুবাইয়ের প্রচন্ড গরম।
“বোধহয় আমার সেরা ইনিংস, কারণ গরমে মনসংযোগ ধরে রাখা কঠিন হচ্ছিল। রানিং বিটুইন দ্য উইকেটেও সমস্যা হচ্ছিল। আমরা ফর্মে আছি, তবে আমি ইনিংসগুলোকে বড় করতে পারিনি। এটা হয়েছে এবার। আশা করি সামনে আরও এমন ইনিংস আসবে।”
এমন ইনিংস যদি আরও অনেকবার আসে, বাংলাদেশের তাতে আপত্তির কী আছে!
চোট, গরম- সব চ্যালেঞ্জ উপেক্ষা করে মুশফিকের নিশ্চয়ই অনেক কিছুই দেওয়ার বাকি এখনও।
-সময়ের সংলাপ২৪/ডি-এইচ