বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আরও একটি ঈদ কারাগারে কাটল। তিন যুগের রাজনৈতিক জীবনে খালেদা জিয়ার মোট চারটি ঈদ কারাগারে কেটেছে। জিয়া এতিমখানা দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের সাজা হওয়ার পর এটি কারাগারে তার দ্বিতীয় ঈদ। দলীয় নেতা-কর্মীরা আশা করেছিলেন, রমজানের ঈদ কারাগারে কাটলেও এবারের কোরবানির ঈদের আগেই তিনি মুক্তি পাবেন। কিন্তু এবারও গত ঈদের মতো নির্জন কারাগারেই কাটাতে হলো সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে।
ঈদের দিন দলীয় নেতারা পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের সেই কারাগারে দেখা করতে গিয়েছিলেন দলীয় নেত্রীর সঙ্গে। কিন্তু কারা কর্তৃপক্ষের অনুমতি না পেয়ে ফিরে এসেছেন। বিকালে পরিবারের ছয়জন সদস্য দেখা করার সুযোগ পেলেও কারাবন্দী বেগম খালেদা জিয়ার কাছে বাসার রান্না করা খাবার পৌঁছাতে পারেননি তারা। পূর্বানুমতি থাকলেও সেই খাবার জেলের ভেতরে নিতে দেয়নি কারা কর্তৃপক্ষ। এর ফলে ঈদের দিন সকাল থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত অভুক্ত থেকেও শেষ পর্যন্ত নিজের নাতনির সঙ্গে ঈদের খাবার খেতে পারেননি তিনি। বুকভরা আশা নিয়ে দাদির সঙ্গে দেখা করতে গেলেও অবশেষে কাঁদতে কাঁদতে বেরিয়ে আসে কনিষ্ঠ পুত্র প্রয়াত আরাফাত রহমানের সন্তান জাহিয়া রহমান। এ অভিযোগ করেছেন বেগম খালেদা জিয়ার মেজো বোন সেলিনা ইসলাম। এ সময় তার সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত সহকারী এ বি এম আবদুস সাত্তার উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, ‘বুধবার ঈদুল আজহার দিন বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের পরিত্যক্ত কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে আমাদের বাসায় তৈরি রান্না করা খাবার নিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু আমাদের তা ভেতরে নিয়ে যেতে দেওয়া হয়নি। আমরা যখন ওপরে গেলাম, তখন খালেদা জিয়া জানতে চাইলেন, বাকি স্বজনেরা কোথায়? আমরা তাকে বলেছি, আমরা ২০ জন দেখা করার অনুমতি চেয়েছিলাম। কিন্তু এর মধ্যে মাত্র ছয়জনকে ভেতরে আসতে অনুমতি দেওয়া হয়েছে।’
এ বি এম আবদুস সাত্তার জানান, বেলা ৩টা ৪০ মিনিটে স্বজনরা কারাগারে প্রবেশ করেন এবং বিকাল ৫টা ১০মিনিটে তারা বেরিয়ে আসেন। সাক্ষাৎ করা স্বজনদের মধ্যে ছিলেন বেগম খালেদা জিয়ার মেজো বোন সেলিনা ইসলাম, প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি, তার মেয়ে জাহিয়া রহমান, ভগ্নিপতি রফিকুল ইসলাম, তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমানের বোন শাহিনা খান জামান ও বেগম খালেদা জিয়ার ভাই সাঈদ ইস্কান্দারের স্ত্রী নাসরিন ইস্কান্দার।
সেলিনা ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার কাছে ঘরের তৈরি খাবারটুকু পৌঁছায়নি। অথচ ওই সময় পর্যন্ত তিনি কোনো খাবার গ্রহণ করেননি। খালেদা জিয়ার শরীর অনেক খারাপ। ঈদের দিন বিকাল পর্যন্ত তিনি কিছু খাননি। এর আগে বেলা ১২টার দিকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, দলের ভাইস চেয়ারম্যানসহ আরও অনেক নেতা খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করার উদ্দেশ্যে গেলেও পুলিশের বাধায় তারা জেলগেট পর্যন্তও পৌঁছাতে পারেননি।
দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তার কাছে মির্জা ফখরুল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠি দেখালেও কর্মকর্তারা জানান, কারও সাক্ষাতের বিষয় তাদের জানা নেই। পরে পুলিশের ব্যারিকেডের পেছনে আধঘণ্টার মতো অবস্থান শেষে বিএনপি নেতারা জেলগেট থেকে ফিরে যান। তবে দেশবাসী ও নেতা-কর্মীদের ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া। তার বোন সেলিনা ইসলাম বলেন, কারাগার থেকে দেশবাসী ও দলের নেতা-কর্মীদের ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া।
ঈদের দিন বিকালে কারাগারের অভ্যন্তরে আবেগঘন পরিবেশে কিছু সময় কাটান বিএনপি চেয়ারপারসন। কারা কর্তৃপক্ষের অনুমতি পাওয়ার পর বেলা ৩টা ৪০ মিনিটে তার পরিবারের ছয়জন সদস্য কারাগারে প্রবেশ করেন। এর আগে বেলা ২টা ২০ মিনিট থেকে কারাফটকে অপেক্ষা করেন তারা। প্রথমে খালেদার স্বজনদের ২০ জনের একটি তালিকা কারা কর্তৃপক্ষের কাছে দেওয়া হলেও কারাগারে যাওয়ার অনুমতি পান ছয়জন।
খালেদা জিয়ার নামে তিন পশু কোরবানি : কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নামে একটি গরু ও দুটি ছাগল কোরবানি দেওয়া হয়েছে। লন্ডনে অবস্থানরত বড় ছেলে তারেক রহমানের পরামর্শে ঈদুল আজহার দিন বুধবার সকালে রাজধানী গুলশান-২-এর বাসভবন ফিরোজায় পশু তিনটি কোরবানি দেওয়া হয়। এ কোরবানি কার্যক্রম তত্ত্বাবধান করেন বেগম খালেদা জিয়ার ছোট ছেলের স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি। বাংলাদেশ প্রতিদিন, আমাদেরসময়
-সময়ের সংলাপ২৪/ডি-এইচ