এ যেন সিনেমার কাহিনীকেও হার মানায়। সাধারণত বিভিন্ন সিনেমার দৃশ্যে দেখা যায় মেয়েরা প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হলে পুরুষ কর্তৃক এসিড হামলার শিকার হয়। কিন্তু সম্প্রতি জামালপুরে এর উল্টো একটি ঘটনা ঘটেছে। সেটি হলো- প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় এক কলেজছাত্রকে এসিড মেরেছে এক ছাত্রী। এটি সত্যিই মর্মদায়ক ঘটনা।
বৃহস্পতিবার (১৫ মার্চ) রাতে জামালপুর পৌরসভার রশিদপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
আহত ওই কলেজছাত্রের নাম মাহমুদুল হাসান মারুফ (১৭)। এসিডে তার দুটি চোখ, মুখমণ্ডল ও কাঁধ ঝলসে গেছে। শুক্রবার (১৬ মার্চ) মারুফকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
এ ঘটনায় পুলিশ ভাবনা আক্তার রিয়া নামে ওই ছাত্রী ও তার মা হাসি বেগম সুজেদাকে আটক করেছে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, জামালপুর পৌরসভার রশিদপুর গ্রামের আহত মাহমুদুল হাসান মারুফ জামালপুর সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজে ইলেকট্রনিকস টেকনোলজির প্রথম বর্ষের ছাত্র। একই গ্রামের বাসিন্দা ও ঝাউগড়া বঙ্গবন্ধু কলেজের এইচএসসি প্রথম বর্ষের ছাত্রী ভাবনা আক্তার রিয়া দীর্ঘদিন ধরে মাহমুদুল হাসান মারুফকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে আসছিল। কিন্তু মারুফ তাতে সাড়া দেয়নি। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার (১৫ মার্চ) রাত সাড়ে ৯টার দিকে মারুফ তার বন্ধু সাইফুলকে নিয়ে রিয়ার বাড়ির সামনে দিয়ে যাচ্ছিল। এ সময় রিয়া মারুফকে বাড়ির ভেতরে বৈদ্যুতিক লাইনের ত্রুটি ঠিক করে দিতে বলে। এ সময় মারুফ বলেন দিনের বেলা এসে ঠিক করে দেব তাই বলে চলে যাচ্ছিল। এ সময় আকস্মিক মারুফের মুখে এসিড ছুড়ে মারে রিয়া। এরপর মারুফ চিৎকার দিয়ে দৌড়ে রশিদপুর বাজারে যায়।
স্থানীয়রা এ সময় তাকে দ্রুত উদ্ধার করে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে। দায়িত্বরত ডা. মো: শফিকুজ্জামান জানিয়েছেন, ‘ভিকটিম এসিড দ্বারাই আক্রান্ত হয়েছে। এখানে এই ধরনের রোগীর চিকিৎসা ব্যবস্থা না থাকায় মারুফকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে স্থানান্তর করা হয়েছে।’
এসিডে মারুফের দুটি চোখ, মুখমণ্ডলের বেশির ভাগ ঝলসে গেছে। এছাড়াও তার ডান কাঁধেও সামান্য দগ্ধ হয়েছে। শুক্রবার (১৬ মার্চ) মারুফকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়।
এসিড আক্রমণের শিকার মারুফ বলেন, ‘রিয়া আমাকে ঘরে যেতে বললে আমি যাইনি। এ সময় রিয়া দরজা থেকে আমার মুখের দিকে কী যেন ছুড়ে মাড়ে। আমি সঙ্গে সঙ্গে চিৎকার দিয়ে দৌড় দিই। রিয়ার সাথে আমার কোনো প্রেমের সম্পর্ক নেই। রিয়াই আমাকে মাঝে মধ্যে ফোন করে প্রেমের প্রস্তাব দিত। আমি কখনোই তার প্রস্তোবে রাজি হয়নি। এ ঘটনার সময় ওই বাড়ির একটি কক্ষে কিছু লোকজনের কথা শুনেছি।’
এদিকে রিয়া বলেন, ‘আমি মারুফকে চিনি না। তাছাড়া ওর সঙ্গে আমার কোনো ধরনের কোনো সম্পর্কও নেই। ও যে সময়ের কথা বলছে তখন আমি এবং আমার মা বাড়িতে ঘুমিয়ে ছিলাম। আমি তাকে এসিড নিক্ষেপ করিনি। ওরা মিথ্যা অভিযোগ করে আমাদেরকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে।’
এ বিষয়ে জামালপুর সদর থানার ওসি মো: নাছিমুল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার (১৫ মার্চ) রাতে কলেজছাত্রী রিয়া ও তার মা হাসি বেগম সুজেদাকে রশিদপুরের বাড়ি থেকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় মাহমুদুল হাসান মারুফ নামে এক যুবকের বাবা দুদু মিয়া বাদী হয়ে মামলা দায়ের করতে এলে এসিড নির্যাতনের ঘটনায় মামলা নেয়া হয়েছে। আটক রিয়া ও তার মাকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আদালতে সোপর্দ করা হবে। ঘটনাটি তদন্ত করে জড়িতদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে।
-সময়ের সংলাপ২৪/ডি-এইচ