স্পোর্টস ডেস্ক: ডিন এলগারের হতাশাই বলে দিচ্ছে ডাবল সেঞ্চুরি বঞ্চনা কতটা পোড়াচ্ছে তাঁকে। আউট হয়েছেন ১৯৯ রানে। যদিও এর আগেই হাশিম আমলাকে নিয়ে বাংলাদেশকে রানচাপা দেওয়ার বন্দোবস্তও করে গেছেন!
সাব্বির রহমান তাহলে ভুল বলেননি! চাইলে সত্যিই এক হাজার রান করতে পারত দক্ষিণ আফ্রিকা! সত্যি সত্যিই পাঁচ দিন ব্যাটিং করতে পারত তারা!
ক্রিকেট ইতিহাসে অমন কিছু হয়নি কখনো। ১৯৯৭ সালে ভারতের বিপক্ষে শ্রীলঙ্কার করা ৯৫২ রানই টেস্টে সর্বোচ্চ দলীয় স্কোর। সে হিসেবে বল যায় ৭ উইকেট হাতে রেখে ইনিংস ঘোষণা দিয়ে ভুল করলো দক্ষিণ আফ্রিকা!
আর টাইমলেস টেস্টের যুগেও এক দলের পাঁচ দিনের ব্যাটিং করাটা ছিল অসম্ভব চিন্তা আর এই ফরম্যাট পাঁচ দিনে নেমে আসার পর এমন কিছুর ভাবনার চৌহদ্দিতে ঠাঁই পাওয়াই হাস্যকর। প্রথম দিন শেষে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হয়ে সংবাদমাধ্যমের সামনে আসা সাব্বিরের অমন কথা তাই চমকে দেয় সবাইকে। কিন্তু দ্বিতীয় দিনেও কাল যেভাবে ব্যাটিং করেন প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানরা, তাতে তো অমন কিছু হতেই পারত!
আসলে হতে পারত না। কারণ তেমন কিছু চাওয়ার মতো ক্রিকেট-বোধহীন দল দক্ষিণ আফ্রিকা নয়।
সে কারণেই তারা ইনিংস ঘোষণা করে দেয় চা-বিরতির সময়। তিন উইকেটে ৪৯৬ রানে। আগের দিন ২৯৮ রান দিয়ে প্রোটিয়াদের একটিমাত্র উইকেট নিতে পেরেছিল বাংলাদেশ। কোনো বোলারের কৃতিত্বে নয় অবশ্য, রান আউটের সৌজন্যে। কাল ১৯৮ রান দিয়ে শিকার দুই উইকেট।
১০০ রান কম দিয়েছে, নিয়েছে দ্বিগুণ উইকেট, তাও বোলারদের বীরত্বে (!)—নাহ্, কাল তো বাংলাদেশের পারফরম্যান্সের উন্নতি বিশাল!
এগুলো প্রহসনের মতো শোনায়। পচেফস্ট্রুম টেস্টে বাংলাদেশের বিবর্ণতার অট্টহাসি হয়ে কানে বাজে। সেই প্রথম দিন সাতসকালে টস জিতে ফিল্ডিং নিয়ে যে ভুল করেন মুশফিকুর রহিম, এর মাসুল তো টানতে হয়েছে কালও।
টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের বোলার-ফিল্ডারদের যে এমন অসহায় সময় আসেনি আগে, তা নয়। এই ফরম্যাটের প্রথম এক যুগে এটি ছিল প্রায় নিয়মিত ছবি। প্রতিপক্ষ বিশাল রান গড়বে, তার তলে চাপা পড়ে ইনিংস পরাজয়— খুব চেনা চিত্রনাট্য। টেস্টে বাংলাদেশের বিপক্ষে পাঁচ শ রানের বেশি ইনিংস আছে গুনে গুনে ৩১টি। ২০১৪ সালে ঢাকায় শ্রীলঙ্কা ৭৩০ রানের চূড়ায় ওঠে পর্যন্ত। সাম্প্রতিক সময়ে টেস্টে সামগ্রিক অর্থে উন্নতির গ্রাফটা ঊর্ধ্বমুখী বটে। তবে বাংলাদেশের বোলার-ফিল্ডারদের ওপর প্রতিপক্ষের চড়ে বসার উদাহরণও কম নয়। এই বছরই তো অমনটা ঘটছে বারবার! জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি-মার্চ তিন মাসে তিনবার।
জানুয়ারিতে ওয়েলিংটনে নিউজিল্যান্ড যেমন তোলে ৫৩৯ রান। এখানে অবশ্য বাংলাদেশ কিছুটা কৃতিত্ব দাবি করতে পারে। কারণ নিজেরা আগে ব্যাটিং করে আট উইকেটে ৫৯৫ রানে ইনিংস ঘোষণা করায় মুশফিকের দল পায় লিড। ফেব্রুয়ারিতে ভারতের বিপক্ষে আবার অমন হয়নি। সেখানে হায়দরাবাদ টেস্টে ইনিংস ঘোষণার আগে স্বাগতিকদের পুঁজি ছয় উইকেটে ৬৮৭ রান। বিরাট কোহলির ডাবল সেঞ্চুরির পাশাপাশি মুরালি বিজয়, ঋদ্ধিমান সাহার শতরানের অবদান তাতে। আর মার্চে গলে শ্রীলঙ্কার ব্যাটসম্যানরা আবার ছেলেখেলা করে বাংলাদেশকে নিয়ে। পাঁচ শ হয়নি একটুর জন্য, তবে প্রথম ইনিংসেই স্কোরবোর্ডে ৪৯৪ রান তুলে ম্যাচে প্রতিষ্ঠিত করে নিজেদের প্রবল প্রতাপ।
পচেফস্ট্রুমের চলতি ম্যাচটি চলতি বছরে বাংলাদেশের বিপক্ষে বিশাল রানের চতুর্থ ঘটনা। গলের সঙ্গে মিল বলতে, এখানে পাঁচ শ ছুঁই ছুঁই স্কোরে থামে দক্ষিণ আফ্রিকা। আর কুশল মেন্ডিসের মতো কাল ডিন এলগার আউট ১৯০-এর ঘরে। প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানের ট্রাডেজিটা আরো করুণ। মেন্ডিস তবু আউট হন দ্বিশতক থেকে ছয় রান দূরে; এলগারের দূরত্ব মোটে এক রান।
বাংলাদেশের বোলার-ফিল্ডারদের ট্র্যাজেডির কাছে তা তুচ্ছ যদিও। দুই দিনে ১৪৬ ওভার বোলিং করে মাত্র তিন উইকেট পেয়েছেন তাঁরা। এর মধ্যেও একটি আবার রান আউট। কাল মধ্যাহ্নভোজের বিরতির পর প্রথম ওভারে শফিউল ইসলাম যখন হাশিম আমলাকে ফিরিয়ে দেন, তখন বাংলাদেশের কোনো বোলার ম্যাচে প্রথমবারের মতো পায় উল্লাসের উপলক্ষ। সেটি ম্যাচের ১১৮তম ওভার! এরপর এলগারকে আউট করেন মুস্তাফিজুর রহমান। ব্যস, এই ছিটেফোঁটা সাফল্যই! মেহেদী হাসান মিরাজ ৫৬ ওভার হাত ঘুরিয়ে উইকেটশূন্য থাকেন; তাসকিন আহমেদেরে ২৬ ওভারও নিষ্ফলা। মরিয়া মুশফিক যে বল হাতে তুলে দেন মাহমুদ উল্লাহ, মমিনুল, সাব্বিরদের—তাঁরাও সাফল্যের সেতু খুঁজে পাননি। ব্যর্থতার বালুচরেই তাই মুখ থুবড়ে পড়ে থাকে বাংলাদেশ।
অবশ্য ড্রেসিংরুমে এটিকে ব্যর্থতা বলে স্বীকার করা হবে কি না, কে জানে! দক্ষিণ আফ্রিকা যে এক হাজার রান করতে পারেনি!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন