জায়গাটির নাম ওয়াদি আল জিন। বাংলাদেশিরা এ স্থানকে জিনের পাহাড় নামে জানে।
গত কয়েক বছর ধরে বিষয়টি বেশ আলোচিত।
এ রহস্যময় স্থানটি সৌদি আরবের মদিনা শহর থেকে প্রায় ৪৫ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত। ঐতিহাসিক ওহুদ পাহাড় দেখতে দেখতে এ জিনের পাহাড়ে যাওয়া যায়।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে মদিনায় আসা পর্যটকরা সময় পেলে একবার ঘুরে আসেন সেই জিনের পাহাড় স্থানটিতে।
স্থানটি ঘিরে রহস্যের শেষ নেই। এ নিয়ে লোকগাঁথাও রয়েছে সৌদিয়ানদের মধ্যে।
যদিও এই পাহাড় নিয়ে কোরআন ও হাদিসে কিছুই বলা নেই।
তবু এ পাহাড় বিস্ময় জাগিয়েছে মানুষের মনে। বিশেষ করে এর নামই অনেকটা চুম্বকের মতো আকর্ষণ করে পর্যটকদের।
বিস্ময়কর এই পাহাড় সম্পর্কে বলা হয় যে, ওই পাহাড়ের এলাকায় গেলে কোনো এক অদৃশ্য শক্তি সবকিছুকেই ওপরের দিকে টানে। এমনকি থেমে থাকা গাড়ি ঢালু রাস্তা বেয়ে নিচে না নেমে ওপরের দিকে ধীরগতিতে যেতে থাকে।
জিনের পাহাড়ে যাওয়ার আগে যাত্রাপথে বিশাল বিশাল পাহাড় পড়ে। তাদের গা ঘেঁষে যেতে হয় জিনের পাহাড়ে।
জায়গাটির বিষয়ে যে কাহিনীটি রয়েছে, তা হলো- ২০০৯-১০ সালের আগে এ পাহাড় নিয়ে তেমন আলোচনা হয়নি। সেই সময় সৌদি সরকার এখানে একটি সড়ক তৈরির পরিকল্পনা করেছিল।
যথাসময়ে কাজও শুরু হয়েছিল। কিন্তু সমস্যা হচ্ছিল রাস্তা নির্মাণের জন্য রাখা যন্ত্র ও পিচ ঢালাই করার বড় বড় রোলার গাড়িগুলো আস্তে আস্তে ওপরের দিকে উঠে যাচ্ছিল। একটা সময় গাড়ি স্বয়ংক্রিয়ভাবে মদিনা শহরের দিকে এগোতে থাকে।
এ দেখে শ্রমিকরা প্রচণ্ড ভয় পেয়ে নির্মাণকাজ ছেড়ে পালিয়ে যান। ফলে সড়কটি মাত্র ৩৫-৪০ কিমি. কাজ হওয়ার পর বন্ধ হয়ে যায়। এ ঘটনার পরই বিশ্বজুড়ে আলোচিত হয় জায়গাটি নিয়ে।
শত শত পর্যটক আসা শুরু করেন জিনের পাহাড় দেখতে।
বিশ্বের অন্যতম আকর্ষণীয় ও অদ্ভুত পথ হলো এ ওয়াদি আল জিন পাহাড়ের বুক চিরে যাওয়া সড়কটি।
ওয়াদি আল জিনকে ঘিরে নানা মিথ চালু রয়েছে সৌদিয়ানদের মধ্যে।
অনেকের ধারণা, জায়গাটিতে প্রচুর চুম্বকজাতীয় পদার্থ রয়েছে, বিধায় এমন ঘটনা ঘটে। পর্যটকরা সেখানে গিয়ে তাদের গাড়ি থামিয়ে দেখার চেষ্টা করেন যে, গাড়ি ওপরের দিকে উঠছে কিনা। অনেকে পানির বোতল রাস্তায় রেখে দেন।
অবাক হলেও সত্যি যে, পানির বোতল ঢালু বেয়ে নিচের দিকে না নেমে ওপরে উঠতে থাকে।
কিন্তু জায়গাটি সম্পর্কে বেশ কয়েকবার গবেষণা করেও এ বিষয়ে কোনো সুস্পষ্ট তথ্য মেলেনি।
সৌদি সরকার বেশ কিছুকাল জনসাধারণের যাতায়াত নিষিদ্ধ রাখার পর কয়েক বছর মাত্র সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে।
প্রতি বছর হজ কিংবা ওমরাহ হজ করতে আসা মানুষও এই রহস্যঘেরা জিনের পাহাড় দেখার জন্য ভিড় করে।
এ স্থানটি নিয়ে যতই গবেষণা হোক এখনও এর রহস্য অধরাই রয়ে গেছে বিশ্ববাসীর কাছে। আজও বিস্ময় সৃষ্টি করে চলেছে এই অদৃশ্য শক্তির পাহাড়।
যেভাবে যাবেন জিনের পাহাড়ে
ফজর পড়েই যেতে হবে। তা না হলে প্রচণ্ড তাপমাত্রায় অস্থির হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মসজিদে নববীর সামনে থেকে মাইক্রোতে শেয়ারিংয়ে যেতে পারবেন। তবে রিজার্ভ নিয়ে গেলে সুবিধা বেশি।
গাড়িচালক যেন বাংলাদেশ, ভারত বা পাকিস্তানের হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। অ্যারাবিয়ানরা ইংরেজি তেমন বোঝে না। তাই ভাষাগত জটিলতা দেখা দিতে পারে। গাড়ি রিজার্ভ নিলে অবশ্যই ওহুদ পাহাড় থেকেও ঘুরে আসা যাবে। তাতে করে আরেক দিন ওহুদ দেখতে যাওয়ার খরচটা বেঁচে যাবে।
-সময়ের সংলাপ২৪/ডি-এইচ