মেয়ের বাড়িতে ইফতার: ঐতিহ্য না অত্যাচার? - সময়ের সংলাপ24
DHAKA WEATHER

Post Bottom Ad

খুব শীগ্রই আমরা Somoyersonglap24.com ওয়েবসাইট নিয়ে আসছি..

মেয়ের বাড়িতে ইফতার: ঐতিহ্য না অত্যাচার?

Share This

আমাদের সমাজে এখনো যৌতুক বিভিন্ন রুপে, বিভিন্ন মাধ্যমে আর বিভিন্ন সাঝে প্রচলিত। যদিও যৌতুক দেয়া এবং নেয়া উভই গুনাহ আর আইনে শাস্তিযোগ্য। কিন্তু আমাদের চোখের সামনেই চলছে এটা অবিরত। আর আমরা গ্রহণ করছি খুব সহজেই। কেউ দিচ্ছি আর কেউ নিচ্ছি।

গ্রামের বিয়েগুলোই শুধু নয়, শহরে গ্রামের চেয়েও এটা আরো বিস্তর। শিক্ষিতজাতি বা অশিক্ষিত জাতির মাঝে কোন পার্থক্য এই যৌতুকের ক্ষেত্রে নেই। এটা আমাদের সামাজিক আর মানসিক দোষ। মানুষিকতার সাথেই সামাজিকতা সংযুক্ত। আমাদের সবার মধ্য থেকে এই যৌতুককে ঘৃণার চোখে দেখতে হবে। তাহলেই সব সম্ভব। পরিবর্তন হয়ে যাবে সমাজ।

আমার ভার্সিটির একটা মেয়ের বিয়ে হয় চট্টগ্রাম শহরের কোন এক আভিজাত্য এলাকায় (নাম উল্লেখের কোন কারণ দেখছি না)। বিয়ে হইছে ঠিক রমজান ঈদের তিনমাস আগে। সংসার খুব সুখের। ফুটফুটে ফুলের কলির মতো ছোট একটা বাচ্চাও আছে। মাশাল্লা। দেখলেই প্রাণটা জুড়িয়ে যায়। যে কেউ দেখলেই বলবে, এই সংসারের চেয়ে সুখী আর কেউ হতে পারে না। কিন্তু তার ভেতরকার কথা শুনলে আপনিও নীল হয়ে পড়বেন।

বিয়ের পর ছেলেরা কোনপ্রকার যৌতুক চায় নি! একদম না। কিন্তু বিয়ের দিন ছেলেরা আসলো প্রায় সাড়ে পাঁচশ’ লোক। যেখানে কথা ছিলো সরোচ্চ তিনশ’! ইসলামে মেয়েদের বাড়িতে লোকজন নিয়ে এসে খাওয়া বা খাওয়ানোর কোন বিধান নেই। উল্টো নিষেধ!

বিয়েতে আমি ছিলাম বন্টনের দায়িত্বে। আংকেল খুবই বিশ্বাস করতেন আমায়। সেদিন আমরা সবাই খুবই চিন্তিত হয়ে পড়ি।কিন্তু আল্লাহ সেই খাবার সবার মাঝে বন্টনের ব্যবস্থা করেছেন। আমি কি করেছিলাম নিজেও জানি না। তবে আমার ইচ্ছা ছিলো, যে যতটুকু চায় তাকে তাই দিবো। নাখোশ করবো না। পাছে আংকেলের কাছে যদি অভিযোগ আসে? আমারই বদনাম হবে। সেদিনের মতো দেনমোহর আর স্বর্ণালংকার নিয়েও ছোটখাটো বিবাদের মিটমাট হয় দুই ফ্যামিলির মাঝে।

এরপরের ব্যাপার হলো মেয়ের সাথে কি কি দিবে? সেখানেও দেয়া হলো অনেক কিছু। আংকেলের একজন শুভাকাঙ্খী আর আমার ক্লাশমিটের একজন ভালো বন্ধু এবং ক্লাশমিটের বোনের টিচার হিসেবে সবই আমার সাথে শেয়ার করতেন আঙ্কল। উনাদের ছেলে ছিলো না বলে আমিই নিজের মতো থাকতাম আর প্রয়োজনে খাটতাম। কারণ আমি উনাদের চেয়ের গরীব ছিলাম। যাক গে সেকথা।

কিছুদিন পরেই আসলো আমের সিজন, কাঠাল আর লিচুর সিজনও!

ছেলেদের বাড়িতে পাঠাতে হবে এসব। ছেলেরা চায় নি। মেয়েরাই দিবে। সেখানে আম পোকা, কাঁঠাল কাঁচা বা ইত্যাদি সমস্যা নিয়েই হবে আবার ভেজাল। তবুও মেয়ের সুখের জন্য।

ভাবতাম, আচ্চা? মেয়েকে কি ওরা মারে? মেয়ে অসুখী কেন? এসব দিয়েই সুখী করতে হবে? এরপরে রোজার ইফতার নিয়ে কত যে গ্যাঞ্জাম হইছে। ঈদের শপিং। কুরবানি ঈদে গরু-টরু ইত্যাদি কত কি? এরপরে তাদের যেকোন ফাংশনে তো বিভিন্ন কিছু দিতে হবে।

যদিও এগুলা যৌতুক না; যৈতুকের মতো। যৌতুক আপডেট হয়েছে, এখন কথা এটাই।

আঙ্কেল আমাকে একদিন শুক্রবারে আক্ষেপ করে বল্লেন, দেখ বাবা! একটা মেয়ে বিয়ে দিতেই আমার অবস্থা করুন, আরো একটা যে আছে!

আমি উনাকে শুধু এটুকুই বল্লাম, “আঙ্কেল! একটা মেয়ে একটা জান্নাত! আপনি দুইটা জান্নাতের মালিক। আমি তো তাও না। সয়ে যান আঙ্কেল!” আঙ্কেল হাসলেন কিছুক্ষন।

কেন জানি না, এই লোকটাকে দেখলে মায়া হয়। কত কষ্ট করে ইনকাম করেন আর এখন সেটা ছেলে পক্ষকে দিতে হচ্ছে। আমি উনাকে শান্তনা দেয়ার মতো কিছুই আমার নাই। তাই আমি উনাকে একটু হাসালাম।

তবে সত্যিই বলছি, একটা মেয়ে কিন্তু একটা জান্নাত!

মেয়েকে সুন্দর করে আদরযত্নে লালন পালন করে স্বামীর হাতে তুলে দিন। আপনার জান্নাত আল্লাহই রেড়ি করে রেখেছেন। তবে শর্ত আছে! নামাজ পড়েন তো? আপনার জন্য জান্নাত থাকবে ঠিক, তবে নামাজ কিন্তু সেই জান্নাতের চাবি।

পরিশেষে আবারো বলছি, কৌশলে এসব যৌতুককেও না বলুন। হ্যাঁ, মেয়ের পিতা যদি মেয়ের সুখের জন্য খুশি মনে দেয়, সেটা ভিন্ন কথা।

নবদম্পতি আপনি? তবে শ্বশুরবাড়ির ইফতারিকে না বলুন।

-সময়ের সংলাপ২৪/ডি-এইচ