ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মাঠ ওল্ড ট্রাফোর্ডে প্রথম লেগে ২-০ গোলের জয়। দারুণ জয়ে এক অর্থে কোয়ার্টার ফাইনালের টিকিট জিম্মি করে ফেলেছিল প্যারিস সেন্ট জার্মেই (পিএসজি)। কিন্তু দ্বিতীয় লেগে ইউনাইটেডের অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তনে থেমে গেল নেইমারবিহীন পিএসজির স্বপ্নযাত্রা। টানা তৃতীয় মৌসুম শেষ ষোলো থেকে বিদায় নিতে হলো ফরাসি জায়ান্টদের।
বুধবার ঘরের মাঠ পার্ক ডু প্রিন্সেসেই ম্যানইউর কাছে ৩-১ গোলে বিধ্বস্ত হয়েছে পিএসজি। প্রথমার্ধে হাস্যকর ভুলে দুই গোল হজম করে টমাস টুখেলের দল। যদিও প্রথম গোলের পর সমতায় ফিরে কক্ষপথেই ছিল পিএসজি। কিন্তু যোগ করা সময়ের চতুর্থ মিনিটে পেনাল্টি গোলেই হলো পিএসজির সর্বনাশ। শেষ মুহূর্তের নাটকীয়তায় ছিটকে গেল স্বাগতিকরা।
দুই লেগ মিলিয়ে ব্যবধান ৩-৩। তবে মহামূল্যবান অ্যাওয়ে গোলের সুবাদে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে গেল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। ম্যাচের অন্তিম প্রহরে মার্কাশ রাশফোর্ড পেনাল্টি থেকে যে গোল করেছেন এটাই বিতর্ক হয়ে দাঁড়াল। ভিএরআর থেকে নেওয়া রেফারির পেনাল্টি সিদ্ধান্ত ম্যানইউর অনুকূলে দেওয়াটা ঠিক ছিল কি না- এ নিয়ে শুরু হয়ে গেছে বিতর্ক।
প্যারিসে ম্যাচের শুরুতেই ধাক্কা খায় পিএসজি। দুই মিনিটেই গোল করে পার্ক ডু প্রিন্সেস স্তব্ধ করে দেন রোমেলু লুকাকু। ধাক্কাটা ১০ মিনিটের মধ্যে সামলে নিয়েছিল পিএসজি। স্বাগতিকদের সমতায় ফেরান হুয়ান বার্নাট। ৩০ মিনিটে আবারো ম্যানইউকে উচ্ছ্বাসে মাতান বেলজিয়ান স্ট্রাইকার। সবধরনের প্রতিযোগিতা মিলিয়ে টানা তিন ম্যাচে লুকাকু পেলেন দ্বিতীয় গোলের দেখা।
এরপরের এক ঘণ্টা আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে মুখর ছিল। কিন্তু গোল যেন হচ্ছিল না। ৫৫ মিনিটে পিএসজির তারকা অ্যাঙ্গেল ডি মারিয়া জালের ঠিকানা খুঁজে নিয়েছিলেন। কিন্তু ভিএআরের সহায়তা নিয়ে অফসাইড দেখিয়ে আর্জেন্টাইন উইঙ্গারের গোলটি বাতিল করে দেন রেফারি। ম্যাচের শেষ গোলটিও হলো প্রযুক্তির সহায়তায়। যদিও রেফারির সিদ্ধান্ত এখন প্রশ্নের মুখে।
স্পট কিক থেকে নেওয়া রাশফোর্ডের শট ঠেকাতে পারেননি পিএসজির গোলরক্ষক জিয়ানলুইজি বুফন। তাতেই ভেঙে গেল ইতালিয়ান কিংবদন্তির স্বপ্নটা। পেশাদার ফুটবলার হিসেবে সম্ভাব্য প্রায় সবকিছুই জিতেছেন বুফন। শুধু উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের ট্রফিই জিততে পারেননি। বহু আরাধ্যের ধন রুপালি ট্রফিটা বুফনের জন্য চির আক্ষেপ হয়েই থাকল। শেষ মুহূর্তে চোট কাটিয়ে মাঠে এডিনসন কাভানি ফিরলেও দলকে বাঁচাতে পারেননি তিনি।
চ্যাম্পিয়নস লিগের ইতিহাসে প্রথম লেগে ঘরের মাঠে দুই গোলে হেরে পরের রাউন্ডে ওঠার নজির ছিল না এতদিন। কাল অলৌকিক এক প্রত্যাবর্তনে ইতিহাস গড়ল ম্যানইউ। রেড ডেভিলসদের অবিশ্বাস্য এই প্রত্যাবর্তনের কারিগর ওলে গানার সুলশার। তার দুর্দান্ত রণকৌশলেই ফিরে এসেছে ম্যানইউ। প্রধান কোচের চাকরিটা এবার পাকা হতেই পারে তার!
ম্যানইউর ইতিহাস গড়ার রাতে অনেকটাই আড়ালে চলে গেছে শেষ ষোলোর দ্বিতীয় লেগের অন্য ম্যাচটা। যেখানে এএস রোমাকে ৩-১ গোলে হারিয়ে শেষ আটে উঠেছে পর্তুগিজ ক্লাব পোর্তো। কাল পোর্তোর মাঠে থ্রিলার ম্যাচে নির্ধারিত সময় শেষে স্কোর লাইন দাঁড়ায় ২-১ এ। সার্বিকভাবে ফল ৩-৩। দুই দলের অ্যাওয়ে গোল সমান দুটি। ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত ত্রিশ মিনিটে। সেখানেই জয়সূচক গোলটি করে বাজিমাত করে স্বাগতিক পোর্তো। সামষ্টিকভাবে ৪-৩ গোলের জয়ে শেষ আটের টিকিট কাটে তারা।
-সময়ের সংলাপ২৪/ডি-এইচ