বাংলাদেশে দ্রুতগতির বোলার এসেছে খুব কমই। মাশরাফী বিন মোর্ত্তজার পর এক্সপ্রেস গতির পেসার পায়নি টাইগার ক্রিকেট। কেউ কেউ ক্ষীণ সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন বটে, তবে গতির সঙ্গে আপোস করতে হয়েছে ফিটনেস জটিলতায়। সত্যিকার অর্থেই গতির ঝড় তুলতে সক্ষম এমন একজন বোলার দীর্ঘদিন পর আবারও পেয়েছে বাংলাদেশ। তিনি ইবাদত হোসেন চৌধুরী। নিউজিল্যান্ড সফরে অভিষেক টেস্টে টানা ১৪০-এর বেশি গতিতে বল ছুঁড়ে মুগ্ধ করেছেন সবাইকে।
গতির ঝড় তুলে কিশোর বয়সেই বাংলাদেশের হয়ে টেস্ট খেলেছিলেন মাশরাফী। পেয়েছিলেন ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’ তকমা। সেই গতি এখন নেই, তবে নড়াইল এক্সপ্রেস বলতে সবাই মাশরাফীকেই বোঝেন। বারবার চোট ও অস্ত্রোপচারের ধকলে আর জোরে বোলিং করতে পারেন না বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক। তবে বোলিংয়ে নানা বৈচিত্র্য এনে খেলে যাচ্ছেন দলের সেরা পারফর্মার হয়েই।
২০১১ সালে হাঁটুতে সবশেষ সার্জারির পর থেকে মাশরাফী জোর খাটিয়ে বোলিং করা থেকে বিরত থেকেছেন চিকিৎসকদের পরামর্শ মেনে। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার সবে শুরু করা ইবাদতের ক্ষেত্রে গতির ব্যাপারটা অবাধ। গতি দিয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেট আঙিনায় আসা এ পেসারকে এভাবেই দেখতে চান বিসিবির এইচপি ইউনিটের বোলিং কোচ চম্পকা রামানায়েকে।
তাসমান সাগরপাড়ে যাওয়ার আগে চম্পকার অধীনে কাজ করে ইবাদত নিজেকে প্রস্তুত করেছেন বড় মঞ্চের জন্য। কোচ খুশি অভিষেক ম্যাচে শিষ্য গতির ঝড় তুলতে পারায়। শনিবার মিরপুরের একাডেমি মাঠে দাঁড়িয়ে এ লঙ্কান বললেন, ‘সে খুব জোরে বল করতে পারে। নিউজিল্যান্ডে তার বোলিং দেখে আসলেই ভালো লেগেছে। ক্যাচ মিস না হলে শুরুতেই উইকেট পেতে পারত। তার প্রতিভায় আমার শতভাগ আস্থা আছে। নিউজিল্যান্ড সফরে যে পেসাররা খেলছে, তারা সবাই নতুন। তাদের সময় দিতে হবে অভিজ্ঞ হয়ে উঠতে।’
বল ডেলিভারির সময় বাঁ-দিকে ঝুঁকে যেত মাথা। তাতে নিশানা হয়ে যেত এলোমেলো; বৃথাই যেত পরিশ্রম। যেটি ঠিক করতে সহায়তা করেন চম্পকা। মাথা সোজা রেখে বল করার কৌশল আয়ত্ত করার পরই ইবাদতকে দেখা যায় অন্যরূপে। বিসিএলে নেমেই ম্যাচে নেন দশ উইকেট। বিপিএলও দারুণ গেছে সিলেটের মৌলভীবাজার জেলা থেকে উঠে আসা পেসার ইবাদতের। খেলেছেন স্থানীয় দল সিলেট সিক্সার্সের হয়েই।
গতির ঝড় তুলে নিজেকে চেনানো। দুই বছর পার হতেই পেয়ে গেলেন স্বপ্নের ঠিকানাও। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অভিষেক টেস্টে দ্বিতীয় ডেলিভারিতেই ভড়কে দেন টিম ল্যাথামককে। দুর্ভাগ্য, দ্বিতীয় স্লিপে দাঁড়ানো সৌম্যর পিচ্ছিল হাতের ফাঁক গলে সহজ ক্যাচটা পড়ে যায়। রানের খাতা খোলার আগে জীবন পাওয়া সেই ল্যাথাম পরে আউট হন ১৬১ করে।
সাদা পোশাকে অভিষেক রঙিন হতে পারত সৌম্য বলটা তালুবন্দী করতে পারলে। সেই হতাশা ভুলে থাকার মতো কিছু অবশ্য করতে পেরেছেন ইবাদত। নিউজিল্যান্ড ইনিংসে বাংলাদেশের পেসারদের মধ্যে একমাত্র উইকেট পাওয়া বোলার তিনিই। আবু জায়েদ রাহি ও খালেদ আহমেদ কোনো শিকার না পেলেও ইবাদত ফেরান নিল ওয়াগনারকে।
ইবাদত প্রথম ইনিংসে হাত ঘুরিয়েছেন ২৭ ওভার। দিয়েছেন ১০৭ রান। অভিষেকে লম্বা সময় ধরে তার বোলিং স্পেল করতে দেখে প্রশংসা ঝরেছে চম্পকার কণ্ঠে।
পেসার হান্টের সেরা হয়ে নিজেকে চেনান বাংলাদেশ বিমানবাহিনীতে সৈনিক পদে থাকা ইবাদত। দুই বছর পর সেই ক্রিকেটারের ঠিকানা টেস্ট দলে। জাতীয় দলে আসতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল ছন্দ। গতি থাকলেও পাচ্ছিলেন না উইকেট। নিজেকে খুঁজে পেয়েছেন বিসিবির চম্পকার টোটকায়। কক্সবাজারে পেস বোলারদের নিয়ে বিশেষ ক্যাম্পে রানআপ ঠিক করার পর মিরপুরের একাডেমি মাঠে ইবাদত ব্যক্তিগত তাগিদেই শরণাপন্ন হয়েছিলেন তার কাছে।
টেস্ট দলে জায়গা পাওয়ার পরই ইবাদত চম্পকার অবদানের কথা বলেছিলেন। প্রশংসায় ভাসিয়েছিলেন প্রিয় কোচকে। হ্যামিল্টনের সেডন পার্কে খেলতে নামা শিষ্যের বোলিংয়ে চোখ রেখেছিলেন চম্পকা।
‘আমি ইবাদতকে নিয়ে স্কিল-বিষয়ক কাজ করেছি। দেখেছি তার বোলিং অ্যাকশন। সে যেভাবে বল আঙুল থেকে বের করছে, সব ভালো বোলাররা সেখান থেকেই করে। সব বল যখন একইভাবে হাত থেকে ছাড়তে পারবে তখন তার লাইন-লেন্থ আরও ভালো হবে। সে মাত্র একটা ইনিংস বল করেছে। যদিও অনেক ওভার করেছে। ভালো একটি টিমের সঙ্গে সে অনেক ওভার করেছে, এখান থেকে সে অনেক শিখতে পারবে। কীভাবে পেস ঠিক রেখে ধারাবাহিকভাবে ভালো বোলিং করা যায় সেটি নিয়ে আমরা কাজ করেছি।’
শুরুর মাশরাফীর সঙ্গে গতিতে সাদৃশ্য ২৫ বছর বয়সী ইবাদতের। বাংলাদেশের প্রথম গতিময় পেসারের উঠে আসা নড়াইল থেকে; সেই ২০০১ সালে। মানচিত্রের উল্টো মেরুতে সীমান্তবর্তী জেলা থেকে ইবাদত এলেন ২০১৯-এ। ১৮ বছর লেগে গেল আরেকজন এক্সপ্রেস পেসার পেতে। সৌজন্যে: চ্যানেল আই
-সময়ের সংলাপ২৪/ডি-এইচ
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন