ফের ভারতীয় সেনাবাহিনীর সাথে বিদ্রোহীদের সংঘর্ষে উত্তপ্ত কাশ্মীরের পুলওয়ামা। মঙ্গলবার ভোর রাত থেকেই দক্ষিণ কাশ্মীরের পুলওয়ামা জেলার ত্রালে সেনাবাহিনীর সাথে বিদ্রোহীদের সংঘর্ষ শুরু হয়েছে। চলছে গুলির লড়াই।
ত্রালের কয়েকটি বাড়িতে বেশ কয়েকজন বিদ্রোহী লুকিয়ে রয়েছে খবর ছিল সেনাদের কাছে। সেই অনুযায়ী রুটিন তল্লাশি অভিযান শুরু হয়েছিল রোববারেই। সেনা তল্লাশি শুরু হতেই বিদ্রোহীদের সাথে গোলাগুলি শুরু হয়। পাল্টা জবাব দেয় সেনাও। টানা এক ঘণ্টা চলে গুলির লড়াই। সূত্রের খবর, এই গুলির লড়াইয়ে এক বিদ্রোহী গুরুতর আহত হয়েছে। গোটা এলাকাজুড়ে জারি রয়েছে তল্লাশি।
এলাকার একটি বাড়িতে আরও কয়েকজন বিদ্রোহী লুকিয়ে রয়েছে, এমনটাও পুলিশ সূত্র। ৪২ আরআর, ১৮০ ব্যাটেলিয়ন সিআরপিএফ, জম্মু-কাশ্মীরের স্পেশাল অপারেশন গ্রুপ ও জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের তরফে এলাকায় তল্লাশি শুরু হয়েছে। তবে বিদ্রোহী সংগঠনের নাম এখনও পর্যন্ত জানা যায়নি।
ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমগুলোর দাবী, ত্রালে হিজবুল মুজাহিদিনের কয়েকজন সদস্য লুকিয়ে থাকতে পারে।
পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে চলমান উত্তেজনার মধ্যে শুক্রবার বিকাল থেকে কাশ্মিরের নিয়ন্ত্রণ রেখায় দুই দেশের সেনাদের মধ্যে ব্যাপক গুলিবিনিময় হয়েছে। এতে দুই পাকিস্তানি সেনাসদস্য ও কাশ্মিরের দুই অংশে ৬ বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। এছাড়া বেশকিছু লোক আহত হয়েছেন। পাকিস্তানে বিমান হামলা চালাতে গিয়ে আটক ভারতীয় পাইলট অভিনন্দনকে শুক্রবার ফিরিয়ে দেওয়ার মধ্যেই দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে ভারি অস্ত্রের গোলাবর্ষণ চলছে। এদিকে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রী শাহ মেহমুদ কোরেশি বলেছেন, কোন ধরণের চাপের মুখে ভারতীয় পাইলট অভিনন্দন বর্তমানকে মুক্তি দেয়া হয়নি।
পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এর পক্ষ থেকে শনিবার বিকালে জানানো হয়েছে, ভারতীয় সেনাদের গোলাবর্ষণে কাশ্মিরের নিয়ন্ত্রণ রেখায় দুই পাকিস্তানী সৈন্য ও দুই বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং এক নারীসহ দু’জন আহত হয়েছেন। নিহত দুই সেনা সদস্য হলেন হাবিলদার আব্দুর রব ও নায়েক খুররম। তারা নাকিয়াল সেক্টরে নিহত হন। আইএসপিআর আরো জানায়, নিয়ন্ত্রণ রেখার তত্তা পানি ও জনদ্রুত সেক্টরে বেসামরিক এলাকা লক্ষ্য করে ব্যাপক গোলাবর্ষণ করেছে ভারতীয় সেনারা। আহত বেসামরিক লোকজনকে কোটলি’র হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পাকিস্তানি সেনাদের পাল্টা গোলাবর্ষণে ভারতীয় সামরিক পোষ্ট ধংস ও সেনাসদস্যদের হতাহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে বলে আইএসপিআর এর বিবৃতিতে বলা হয়। এদিকে ডনের এক প্রতিবেদনে বলা বলা হয়েছে, ভারতীয় সেনাদের গুলিতে দারা শের খান এলাকায় আব্দুল গাফ্ফার নামে ১৯ বছরের এক তরুণ নিহত হয়েছে।
পাকিস্তান শাসিত আজাদ কাশ্মিরের কোটলি জেলার ডেপুটি কমিশনার ড. ওমর আজম জানিয়েছেন, শুক্রবার ভারতীয় বাহিনীর গোলাবর্ষণে এক তরুণ নিহত ও তিনজন আহত হয়েছেন। তিনি পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডনকে জানিয়েছেন, কোটলির নাকিয়াল বাজারে ভারতীয় গোলাবর্ষণে ঘটনাস্থলে নিহত হয়েছেন সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা ১৯ বছরের তরুণ মোহাম্মদ সুধীর। জেলার তত্ত্বা পানি এবং গোই সেক্টরে আহত হয়েছেন তিন জন।
ঝিলাম উপত্যকা জেলার ডেপুটি কমিশনার জানিয়েছেন, শুক্রবার মধ্যরাতে পান্ডু সেক্টরে ভারতীয় বাহিনীর প্রচণ্ড গোলাবর্ষণে কমপক্ষে আটটি বাড়ি ও একটি দোকান মাটির সাথে মিশে গেছে। এসব বাড়ির বাসিন্দারা আগেই নিরাপদ স্থানে চলে যাওয়ায় কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। পান্ডু সেক্টরের এক বাসিন্দা জানিয়েছেন, শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে আবারও ওই এলাকায় তীব্র গোলাবর্ষণ শুরু হয়। এছাড়া সামাহানি ও বিম্বার জেলা থেকেও দু’দেশের সেনাদের মধ্যে মর্টার এবং কামানের গোলাবিনিময় হয়েছে বলে জানিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম।
অন্যদিকে ভারতীয় সেনারা দাবি করেছে, পাকিস্তানের সেনাদের গোলার আঘাতে দুই শিশু ও এক নারীসহ একই পরিবারের তিনজন নিহত ও অনেকে আহত হয়েছেন। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, শুক্রবার গভীর রাতে কাশ্মিরের পুঞ্চ জেলার সালতোরি এলাকায় পাকিস্তানের গোলাবর্ষণে একই পরিবারের তিন সদস্য নিহত হয়েছেন। ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল দেবেন্দার আনন্দকে উদ্ধৃত করে খবরে বলা হয়, নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্য করে পাকিস্তানি সেনাদের গোলাবর্ষণে অনেকের আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সালতোরি, মানকোট ও বালাকোটসহ সংলগ্ন কয়েকটি এলাকায় সন্ধ্যা ছয়টার দিকে গোলাবর্ষণ শুরু করে পাকিস্তানি সেনারা। নওশেরা এলাকায় গোলাবর্ষণ শুরু হয় বিকেল চারটার কিছু পরে। পাশ্ববর্তী উরি এলাকায় গোলাবর্ষণ শুরু হয় বেলা বারোটার দিকে।
এরআগে রোববার গভীর রাত থেকেই জম্মু-কাশ্মীরের আখনুর সেক্টরে নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে গোলাগুলি চলছে।
-সময়ের সংলাপ২৪/ডি-এইচ
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন