রোগীদের নিম্নমানের ওষুধ গছিয়ে দেয় তারা - সময়ের সংলাপ24
DHAKA WEATHER

Post Bottom Ad

খুব শীগ্রই আমরা Somoyersonglap24.com ওয়েবসাইট নিয়ে আসছি..

রোগীদের নিম্নমানের ওষুধ গছিয়ে দেয় তারা

Share This

সিলেটে ওসমানী মেডিকেল ও স্টেডিয়ামপাড়ায় সক্রিয় দালালরা।

সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং স্টেডিয়াম পাড়া ঘিরে গড়ে উঠেছে অসংখ্য ফার্মেসি। আর এসব ফার্মেসির রয়েছে নির্ধারিত দালাল। তাদের প্রথম কাজ হাসপাতাল কিংবা চিকিৎসকের চেম্বার থেকে রোগী বা তার স্বজনরা বের হওয়া মাত্রই তাদের ঘিরে ধরা। একরকম জোর করেই তাদের ধরে নিয়ে নির্ধারিত ফার্মেসি থেকে নিম্মমানের ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ গছিয়ে দেওয়া। গত কয়েক মাসে সিলেটের বেশ কয়েকটি ফার্মেসিকে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রির দায়ে জরিমানাও করা হয়েছে। তার পরও বন্ধ হয়নি এসব কার্যক্রম।

সিলেট বিভাগের কোটি মানুষের উন্নত চিকিৎসার ভরসাস্থল ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। এ ছাড়া সিলেটে রয়েছে আরও পাঁচটি বেসরকারি হাসপাতাল। সরকারি-বেসরকারি এসব হাসপাতালের চিকিৎসকরা বিকেল হলেই প্রাইভেট চেম্বার করতে বসেন নগরীর স্টেডিয়াম মার্কেট, ওসমানী মেডিকেল, কাজলশাহ রোড, চৌহাট্টা, মিরবক্সটুলা, দরগাগেট, দক্ষিণ সুরমা, সোবহানীঘাটসহ বিভিন্ন এলাকায়। আর এই চিকিৎসকদের চেম্বার ঘিরে গড়ে উঠেছে অসংখ্য দালালচক্র। এসব এলাকায় চিকিৎসা নিতে এসে দালাল ও ফার্মেসি ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে পড়ছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা। চিকিৎসকদের দেওয়া ব্যবস্থাপত্র কৌশলে হাতিয়ে নিয়ে নিম্নমানের ওষুধ ধরিয়ে দিয়ে আদায় করা হচ্ছে বাড়তি মূল্য। ফলে রোগ নিরাময়ের পরিবর্তে এসব ওষুধ রোগীদের জন্য প্রাণঘাতী হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সরেজমিন স্টেডিয়াম এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, দুপুর ১টার পর থেকেই দালালরা আসতে শুরু করে এখানে। কোনো কোনো চিকিৎসক দুপুর ১টার আগেই চলে আসেন প্রাইভেট চেম্বারে। এর সঙ্গে সঙ্গেই বাড়তে থাকে রোগী ও তাদের স্বজনদের সংখ্যাও। রোগীরা চিকিৎসকের চেম্বারে যাওয়া মাত্রই দালালরা টার্গেট করে বসে। রোগী চেম্বার থেকে বের হওয়া মাত্রই দালালরা ঘিরে ধরে। কী সমস্যা জানতে চেয়ে সমাধানের পথও তারা বাতলে দেয়। গ্রাম থেকে আসা সহজ-সরল মানুষ তাদের দেওয়া পথে হাঁটতে গিয়ে পড়েন মহাবিপাকে।

গত কয়েকদিন সরেজমিন কাজলশাহ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে একই চিত্র। ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ঘিরে গড়ে উঠেছে বিশাল সিন্ডিকেট। তাদের কাছে জিম্মি সাধারণ লোকজন। হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীর স্বজনরাই তাদের মূল টার্গেট।

ওসমানী হাসপাতালে থাকা রোগীর স্বজন আলমগীর মিয়া সমকালকে বলেন, তার বাড়ি সিলেটের গোয়াইনঘাট এলাকার বিছনাকান্দিতে। তার স্ত্রী সন্তানসম্ভবা। হাসপাতালে আসার পর থেকেই এই ওষুধ, ওই ওষুধ দেওয়ার জন্য স্লিপ ধরিয়ে দিতে থাকেন চিকিৎসকরা। একপর্যায়ে তার গ্রামের এক পরিচিত লোকের মাধ্যমে তিনি ওষুধ কেনেন একটি ফার্মেসি থেকে। ওই ফার্মেসি থেকে ওষুধ কেনার পর পরই কিছু টাকা বাকি রাখে কর্তৃপক্ষ। তখন ফার্মেসির প্রতি তার একটি আস্থা তৈরি হয়। বিল দেওয়ার সময় গিয়ে তিনি ঘাবড়ে যান। সামান্য নরমাল ডেলিভারির ওষুধের দাম ধরা হয়েছে প্রায় ছয় হাজার টাকা।

শুধু আলমগীর নন, এভাবে যারাই হাসপাতালে আসেন তাদের ঘিরে ধরে দালালরা। তাদের দেওয়া ফার্মেসি ছাড়া ওষুধ কিনলে অনেক সময় বাকবিতণ্ডাও হয় রোগীর স্বজনের সঙ্গে। এ ছাড়া অনেক সময় রোগীর স্বজনকে আটকে রেখে মারধরও করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধও ধরিয়ে দেওয়া হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পর নার্সরা এই ওষুধ ফিরিয়ে নতুন ওষুধ আনার জন্য বলেন। পরবর্তী সময়ে ফেরত নিতে গেলে সংশ্নিষ্ট ফার্মেসিতে গেলে এটি তাদের নয় বলে সাফ জানিয়ে দেয়। তখন বাধ্য হয়ে নতুন করে ওষুধ কিনতে হয়।

সূত্র জানায়, ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল রোডের ফার্মেসিগুলোতে ওষুধের মূল্য রাখা হয় নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি- রোগীদের এমন অভিযোগ দীর্ঘদিনের। ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে এমন অভিযোগ পেয়ে গত ১৮ জানুয়ারি ওই এলাকায় অভিযান চালায় র‌্যাব। হাসপাতাল রোডের হেনা ফার্মেসিতে গিয়ে হতবাক হয়ে যান র‌্যাব কর্মকর্তারা। ফার্মেসিতে দেখতে পান বিপুল পরিমাণ মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ। যেগুলো আবার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে রোগী ও তাদের স্বজনকে। এমন অনৈতিক কাজের দায়ে হেনা ফার্মেসিকে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। একই অবস্থা দেখা যায় পাশের সুমাইয়া মেডিসিন কর্নারেও। তাদের জরিমানা করা হয় ৫০ হাজার টাকা। 

অভিযানকারী ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ক্রিস্টোফার হিমেল রিসিল জানান, ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগী চিকিৎসা নিতে আসার পর দালালরা কৌশলে ব্যবস্থাপত্র হাতিয়ে নেয়। এরপর রোগীর স্বজনকে ব্যবস্থাপত্র তাদের কাছে রেখে দিয়ে বাকিতে ওষুধ দেয়। পরে রোগী ছাড়পত্র নিয়ে হাসপাতাল ত্যাগ করার সময় তাদের হাতে মোটা অঙ্কের বিল ধরিয়ে দেওয়া হয়। 

এ ব্যাপারে সিলেটের সিভিল সার্জন হিমাংশু লাল রায় সমকালকে বলেন, অনেক ফার্মেসির বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তারা পান। এসব ব্যাপারে ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে। এ জন্য প্রায়ই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়ে থাকে। -সমকাল

-সময়ের সংলাপ২৪/ডি-এইচ