নয় বছরের শিশু জাকিয়ার শরীরজুড়ে ক্ষত আর ক্ষত। হাত-মুখ-পিঠের মধ্যেও অসংখ্য জখমের চিহ্ন। কোথাও চামড়া খসে পড়েছে, কোথাও কালো হয়ে ফুলে আছে। দেহের কোথাও আবার দাগদগে ঘা। মাথার মধ্যে আঘাতের চিহ্নগুলো সাদা হয়ে আছে। মানুষ দেখলে ভয়ে চমকে উঠছে জাকিয়া। আর জাকিয়াকে দেখে শিউরে উঠছেন সাধারণ মানুষ। কোনো কাজে সামান্য ভুল পেলেই শিশুটির ওপর নেমে আসত শাস্তি। লোহার রড গরম করে ছ্যাঁকা দেওয়া হতো। চুরি করে ভাত খাওয়ার অপবাদ দিয়ে তার দুই হাত থেঁতলে দেওয়া হয়। ঢাকার উত্তরার একটি বাসায় শ্রীপুরের শিশু জাকিয়ার ওপর এভাবেই গৃহকর্ত্রী মনা বেগম আট মাস ধরে নির্মম নির্যাতন চালিয়ে আসছিলেন।
শ্রীপুর উপজেলার আবদার গ্রামের শিশু জাকিয়া জন্ম নেওয়ার আগেই বাবা জাকির হোসেন তার মাকে ছেড়ে অন্যত্র চলে যান। কখনও রাজমিস্ত্রির জোগালি, কখনও অন্যের বাড়িতে কাজ করে মেয়ে জাকিয়াকে লালন-পালন করতে থাকেন স্বামী পরিত্যক্ত সুফিয়া বেগম। বছরখানেক আগে নয় বছরের শিশু জাকিয়াকে একই এলাকার শাহনাজ বেগম ঢাকার উত্তরায় মিল্টন নামে এক ব্যক্তির বাসায় নিয়ে যান। পড়াশোনার পাশাপাশি বাসায় টুকটাক কাজ করার শর্তে সুফিয়ার কাছ থেকে জাকিয়াকে নেওয়া হয়েছিল। দুই মাস যেতে না যেতেই শিশুটির ওপর নানা রকম নির্যাতন শুরু করে মিল্টনের স্ত্রী মনা বেগম। শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শেষ প্রান্তে এসে প্রায় এক বছর পর গত ১ আগস্ট মনা বেগম ক্ষতবিক্ষত শিশু জাকিয়াকে শাহনাজের কাছে ফেরত দেয়। বাকরুদ্ধ জাকিয়াকে শ্রীপুরের আবদার লালপুকুরপাড় এলাকার এক ছোট্ট ঘরের ভেতর লুকিয়ে রাখে শাহনাজ। মানসিক ভারসাম্যহীনও হয়ে পড়েছে মেয়েটি।
গত ৫ আগস্ট সুফিয়া বেগম সকালে হঠাৎ করে শাহনাজের বাড়িতে গিয়ে দেখেন নির্যাতনের শিকার শিশুটি ঘরের মেঝেতে পড়ে আছে। কথা বলতে পারে না, দুর্গন্ধ শরীরে মাছি খেলা করছে। এ অবস্থায় মেয়েকে দেখতে পেয়ে স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেপে নিয়ে যান তিনি।
হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. হুজ্জাতুল ইসলাম পলাশ বলেন, নির্যাতিত মেয়েটির অবস্থা দেখে তিনি নিজেই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। হাসপাতালে শুরু হয় তার চিকিৎসা। এরপর থানায় পাঠানো হয় শিশুটিকে।
শ্রীপুর থানার ওসি মো. আসাদুজ্জামান বলেন, নির্যাতনের শিকার শিশুকে সঙ্গে নিয়ে পুলিশ শাহনাজের বাড়িতে যায় এবং তাকে আটক করা হয়। এরপর পুলিশের গাড়িতে করে জাকিয়া ও তার মাকে উত্তরা থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
এসআই সাদেক বলেন, রাতেই ওই শিশুর সহযোগিতায় উত্তরার ১০ নাম্বার সেক্টরের ৪ নাম্বার রোডের ৭ নাম্বার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত মিল্টন ও তার স্ত্রী মনা বেগমকে আটক করা হয়।
উত্তরা পশ্চিম থানার ওসি (তদন্ত) আবদুর রাজ্জাক বলেন, এ ঘটনায় শিশু জাকিয়ার মা সুফিয়া বাদী হয়ে মিল্টন, তার স্ত্রী মনা ও মানার মাকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন
-সময়ের সংলাপ২৪/ডি-এইচ
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন