বলা হয়, মানুষ তার জীবনকালে কয়েকবার মাথা ব্যথার সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারে। মাথা ব্যথার অনেক কারণ রয়েছে। তবে জীবনযাত্রার ধরন কিছুটা পাল্টে নিলেই মাথা ব্যথা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এ ব্যাপারে কথা বলেছেন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স অ্যান্ড হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. আফজাল মমিন।
প্রশ্ন : মাথা ব্যথার ধরনগুলো কী? সাধারণত কী কী কারণে মাথা ব্যথা হয়ে থাকে?
উত্তর : মাথা ব্যথা অতিসাধারণ জিনিস। তবে এটা অনেক সময় বেশ সমস্যার কারণ হতে পারে। মানুষ তার সারা জীবনকালে কখনো না কখনো মাথা ব্যথার সমস্যায় ভুগে থাকে। চাপযুক্ত জীবনযাত্রায় মাথা ব্যথা খুব সাধারণ একটি কারণ। মাথা ব্যথা রোগকে আমরা সাধারণত দুই ভাগে ভাগ করে থাকি। একটি হচ্ছে, সাধারণ মাথা ব্যথা রোগ। সব মাথা ব্যথা রোগের ৯০ ভাগ এর মধ্যে পড়ে। এর মধ্যে দুটি বিষয় পড়ে। একটি, চিন্তার জন্য মাথা ব্যথা। অপরটি মাইগ্রেনের ব্যথা।
শতকরা ১০ ভাগ মানুষের জটিল মাথা ব্যথার রোগ থাকে, যেখানে কারণ সঠিকভাবে জানা যায়। অর্থাৎ যেটার মধ্যে প্যথোলজি আছে। এ ব্যথা মস্তিস্কের টিউমারের জন্য হতে পারে। মস্তিস্কের রক্তক্ষরণের জন্য হতে পারে। মস্তিস্কের রক্তনালি বন্ধ হয়ে হতে পারে। সাধারণ জ্বরের জন্য হতে পারে। বিভিন্ন সংক্রমণের জন্য হতে পারে। মস্তিস্কের প্রদাহের জন্য হতে পারে।
প্রশ্ন : ব্রেন টিউমার বা এই ধরনের গুরুতর রোগের জন্য মাথা ব্যথার সম্পর্ক কী?
উত্তর : সাধারণ মাথা ব্যথা রোগের সঙ্গে ব্রেন টিউমার মাথা ব্যথা রোগের অনেক পার্থক্য। যে মাথা ব্যথা রোগের সঙ্গে বমি হচ্ছে, চোখের দৃষ্টিতে সমস্যা হচ্ছে, খিঁচুনি হচ্ছে, স্নায়ু বৈকল্য থাকছে (যেখানে হাত বা এক পাশ অবশ হয়ে গেলে) সেটা অবশ্যই মস্তিস্কের কোনো একটি কারণের জন্য হয়।
প্রশ্ন : মাইগ্রেনের জন্য মাথা ব্যথা এবং চিন্তার জন্য মাথা ব্যথার লক্ষণ কী? কীভাবে একে আলাদা করা যাবে?
উত্তর : মাথা ব্যথার বিশাল অংশজুড়ে আছে চিন্তার জন্য মাথা ব্যথা এবং মাইগ্রেনের জন্য মাথা ব্যথা। তার মধ্যে বলতে হয় চিন্তার কারণে মাথা ব্যথা কিন্তু সবচেয়ে বড় অংশ জুড়ে আছে। যে জীবনযাত্রায় আমরা অভ্যস্ত সেখানে চিন্তার জন্য মাথা ব্যথা হবে এটাইতো স্বাভাবিক। চিন্তার জন্য ব্যথা একটি দীর্ঘ মেয়াদি সমস্যা। যেখানে রোগীদের সর্বাধিক লক্ষণে দেখা যায়, ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ বোধ করে কিন্তু যত দৈনন্দিন কাজে লেগে যাচ্ছে, আস্তে আস্তে চিনচিন ব্যথা শুরু হয়। যেটা মারাত্মক না হলেও একটি অস্বস্তিকর অবস্থা তৈরি করে। বেলা শেষে হয়তো মাথা ব্যথার সমস্যাটি বেড়ে যাচ্ছে। রোগীর সম্পূর্ণ ইতিহাসটি ভালোভাবে নিলে দেখা যাবে তার কাজকর্মে সে কোনো চাপকে মোকাবিলা করছে। যার প্রভাব মনোদৈহিক সমস্যা হচ্ছে। সেখানে চিকিৎসার চেয়ে পরামর্শ (কাউন্সিলিং) বেশি প্রয়োজন যেন জীবনযাত্রাকে সহজতর করা যায়। যদিও জীবনযাত্রাকে সহজ করা কঠিন ব্যাপার। তারপরও চেষ্টা করতে হবে। অন্যদিকে মাইগ্রেনকে আমরা দুই ভাগে ভাগ করতে পারি। একটা ক্লাসিক্যাল মাইগ্রেন। আরেকটি হচ্ছে কমন মাইগ্রেন। মাইগ্রেন রোগটি সাধারণত নারীর বেশি হয়। বলা হয়, যারা খুব চাপ নিতে পছন্দ করে, খুঁতখুঁতে স্বভাবের তাদের মধ্যে এই সমস্যা হয়। এটি বংশগতভাবেও আসতে পারে। এ সমস্যায় সাধারণত সারা মাথা ব্যথা না করে একটি জায়গায় ব্যথা হয়। মাথা দপদপ করে। এর সঙ্গে ফোটোফোবিয়া থাকে, আলোর দিকে তাকাতে কষ্ট হয়। আওয়াজ শুনতে কষ্ট হয়। মাথা ব্যথার সঙ্গে বমি থাকতে পারে। মাসের ভেতর কয়েকবার হয়ে জীবনযাত্রাকে স্থবির করে দিতে পারে। চিন্তার কারণে মাথা ব্যথা এবং মাইগ্রেনের মাথা ব্যথা আপনাকে রোগীর ইতিহাস দেখেই নির্ণয় করতে হবে। এ ছাড়া কারণ খোঁজার জন্য আপনি হয়তো একটি সিটি স্ক্যান করতে পারেন।
প্রশ্ন : মাইগ্রেনের ব্যথা কী চিকিৎসা করে ভালো করা সম্ভব নাকি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে?
উত্তর : মাইগ্রেনের রোগীর ক্ষেত্রে ওষুধের থেকে জীবনযাত্রার মান পরিবর্তন করা অনেক জরুরি। এই রোগী রাত জাগবে না। পেট খালি রাখবে না অনেক্ষণ ধরে । চিৎকার, হুলুস্থুল হয় এমন জায়গায় যাবে না। নারী রোগীর ক্ষেত্রে ওরাল জন্ম নিয়ন্ত্রক ওষুধ খাবে না। পনির, আইসক্রিম, চকোলেট এগুলো খাবে না। মানসিক চাপ নেবে না। এগুলো হলে সে দীর্ঘমেয়াদি সুস্থ স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারে।
-সময়ের সংলাপ২৪/ডি-এইচ