ক্রিকেটের ব্যস্ত মৌসুম চলছে। কিন্তু খেলা নয়, আলোচনার কেন্দ্রে একজন খেলোয়াড়। সাব্বির রহমান। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে ছয় মাসের নিষেধাজ্ঞা এরিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। তবে দীর্ঘ দিন ধরে 'ব্যাডবয়' তকমা নিয়ে আলোচনায় থাকা সাব্বিরের এই শাস্তিটা কম হয়ে গেলো কিনা তা নিয়েও চলছে আলোচনা।
যদিও গত শনিবার শৃঙ্খলা কামিটির পক্ষ থেকে বিসিবি পরিচালক ইসমাইল হাইদার মল্লিক বলেছিলেন, ‘শাস্তি কম কীভাবে হয়! ছয় মাস আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ। প্রতিটি খেলোয়াড়ের লক্ষ্য থাকে। সবাই জাতীয় দলে খেলতে চায়। আমরা তাকে শাস্তি এরই মধ্যে দিয়েছি। এখনো শাস্তির মধ্যেই আছে।’
গত জানুয়ারিতে ঘরোয়া ক্রিকেটে ছয় মাসের নিষেধাজ্ঞায় পড়েছিলেন। সেই নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। আগামী মৌসুমে তিনি জাতীয় লিগ, বিসিএল এবং বিপিএল খেলতে পারবেন। যদিও এই সময়ের মধ্যে নির্বাচকদের নজরে থাকবেন না তিনি। মিস করবেন অক্টোবরে ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ে, নভেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ এবং ফেব্রুয়ারিতে নিউজিল্যান্ড সফর।
সাব্বিরের অপরাধ এবং শাস্তি
ঘটনা-১: ২০১৬ বিপিএলের চট্টগ্রাম পর্বে হোটেলকক্ষে নারী অতিথি নেওয়া।
শাস্তি: ১৩ লাখ টাকা জরিমানা করে বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল।
ঘটনা-২: গত ডিসেম্বরে রাজশাহীতে জাতীয় লিগের ম্যাচ চলাকালে মাঠে এক কিশোর দর্শককে মারধর।
শাস্তি: ২০ লাখ টাকা জরিমানা ও ছয় মাস ঘরোয়া ক্রিকেটে নিষিদ্ধ হন।
ঘটনা-৩: গত মাসে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের সময় এক ভক্তের ফেসবুক স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে সমর্থককে অকথ্য ভাষায় গালাগাল।
শাস্তি: কোনো আর্থিক জরিমানা নয়, জাতীয় দল থেকে শুধু ছয় মাস নিষিদ্ধ।
নিউজিল্যান্ড সফরের পরপরই শুরু হয়ে যাবে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ প্রস্তুতি। আর ওই বিশ্বকাপের কারণেই নাকি সাব্বিরের শাস্তি কম হয়েছে। শোনা যাচ্ছে, অধিনায়ক মাশরাফিসহ সিনিয়র ক্রিকেটাররা এবং টিম ম্যানেজমেন্ট ২০১৯ সালের বিশ্বকাপ দলে সাব্বিরকে চানই চান। বিশ্বকাপের দলে তাকে নাকি ভীষণ দরকার!
কিন্তু এখানেও চিন্তার বিষয় আছে। ছয় মাস জাতীয় দলের বাইরে থাকার পর বিশ্বকাপের দলে সুযোগ পাওয়া যে খুব সহজ হবে না সেটা বলাই যায়। তখন কেবলই তার ঘরোয়া লিগের পারফরম্যান্স বিবেচনা করতে হবে।
যদিও গত প্রায় চার বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে কার্যত তেমন কিছুই দেখাতে পারেননি সাব্বির! ২০১৪ সালের ২১ নভেম্বর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে ফরম্যাটে অভিষেক। এখন পর্যন্ত ৫৪ ম্যাচ খেলে রান ১০৫৪। পঞ্চাশ পেরোনো ইনিংস মোটে পাঁচটি। সেঞ্চুরির ধারেকাছেও নেই কোন ইনিংস। সর্বোচ্চ ইনিংস ৬৫ রানের। গড় ২৪.৫১।
আরেকটু বিশ্লেষণ করা যাক। ৫৪ ওয়ানডের মধ্যে ৪৮ ইনিংসে ব্যাট হাতে ক্রিজে যান সাব্বির। এর মধ্যে দুই অঙ্কে পৌঁছার আগে চটজলদি প্যাভিলিয়নে ফেরেন ১৬ বার। অর্থাৎ প্রতি তিন ইনিংসে একবার সাব্বির আউট ১০ রানের নিচে। ১০ থেকে ২০ এর মধ্যে আরো ১২ ইনিংসে। তার মানে, ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৪৮ ইনিংসের ভেতর (১৬+১২) ২৮ ইনিংসে ২০ রানও করতে পারেননি সাব্বির।
৪১ টি-২০ তে ২৫.৮৮ গড়ে রান ৯০৬, সর্বোচ্চ ৮০। টেস্টে অবস্থা আরো খারাপ। ১১ টেস্টের ২২ ইনিংসে তার রান মাত্র ৪৮১। গড় ২৪.০৫, সর্বোচ্চ ইনিংস ৬৬।
অভিষেকের পর ওয়ানডে দল থেকে কখনো বাদ পড়েননি সাব্বির রহমান। বাংলাদেশ ক্রিকেটের ‘পঞ্চপাণ্ডব’-এরও এমন ধারাবাহিকতা নেই। এ সময়কালে বিভিন্ন কারণে মাশরাফি, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, তামিম ইকবাল ও মাহমুদ উল্লাহ কিছু ম্যাচ মিস করেছেন। কিন্তু সাব্বির খেলে গেছেন টানা। অথচ ৫৪ ম্যাচে একবারও ম্যাচসেরা হতে পারেননি।
তবু তার শাস্তি কমানোর সুপারিশ!
-সময়ের সংলাপ২৪/ডি-এইচ
Socialize