মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি এ বিষয়ে তাদের পর্যবেক্ষণ প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরবে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পাওয়ার পর সার্কুলার জারি করে কোটা সংস্কারের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পরপরই কমিটি গঠনের কাজ শুরু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন নিয়ে গিগগিরই ওই কমিটি গঠনের প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।”
কমিটির কার্যপরিধি কী হবে সে বিষয়ে কোনো ধারণা দিতে পারেননি ওই কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, “কোটার বিষয়গুলো এখন প্রধানমন্ত্রীর ওপর নির্ভর করছে, তার নির্দেশনা নিয়েই সবকিছু করা হবে।”
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বৃহস্পতিবার সকালে বলেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কমিটি পুরো প্রক্রিয়া শেষ করে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠাবে।
তবে এখনও কমিটি গঠন না হওয়ায় ওই কমিটির কাজের ধরণ ও বিবেচনার বিষয়গুলো সম্পর্কে কিছু বলতে পারেননি তিনি।
শফিউল বলেন, “এই কমিটির দায়িত্ব কী হবে তা কার্যপরিধিতে উল্লেখ থাকবে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করবে, এরপর আমরা কাজ শুরু করব।”
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে প্রধান করে কমিটিতে জনপ্রশাসন সচিব, স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সচিব ছাড়াও কয়েকজন শিক্ষাবিদকে রাখার চিন্তাভাবনা চলছে।
বর্তমানে সরকারি চাকরিতে মোট ৫৬ শতাংশ বিভিন্ন কোটায় সংরক্ষণের যে নিয়ম রয়েছে তা সংস্কার করে কোটার পরিমাণ ১০ শতাংশে নামিয়ে আনতে গত রোববার থেকে লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে আসছিল শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা।
ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে তাদের বিক্ষোভ ও অবরোধে বুধবার রাজধানীর রাজপথ কার্যত অচল হয়ে পড়ে।
তাদের ওই আন্দোলনের সমালোচনা করে সরকারি চাকরিতে নিয়োগের কোটা পদ্ধতি একেবারেই তুলে দেওয়ার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বুধবার জাতীয় সংসদে তিনি বলেন, “বারবার এই আন্দোলন ঝামেলা মেটাবার জন্য কোটা পদ্ধতি বাতিল; পরিষ্কার কথা; আমি এটাই মনে করি, সেটা হল বাতিল।”
বর্তমানে সরকারি চাকরির ৩০ শতাংশ পদ মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য, নারীদের জন্য ১০ শতাংশ, জেলা কোটায় ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য ৫ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য ১ শতাংশ সংরক্ষিত।
কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী ‘ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’ এর দাবি ছিল, কোটার পরিমাণ ১০ শতাংশে নামিয়ে আনতে হবে। আর কোটায় প্রার্থী পাওয়া না গেলে মেধা তালিকা থেকে তা পূরণ করতে হবে।
সরাসরি নিয়োগে কোটায় যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে মেধা তালিকায় থাকা প্রার্থীদের মধ্য থেকে সেসব পদ পূরণ করা হবে বলে গত ৩ মার্চ এক সার্কুলারে জানিয়েছিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
সরাসরি নিয়োগে কোটায় যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে মেধা তালিকায় থাকা প্রার্থীদের মধ্য থেকে কীভাবে তা পূরণ করতে হবে- সেই ব্যাখ্যা দেওয়া হয় গত ৫ এপ্রিল।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, কোটা চালু করার সময় কোনো আইন বা বিধান দিয়ে তা করা হয়নি। সময় সময় সার্কুলার জারি করে বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
“ফলে এখন সার্কুলার দিয়েই কোটা পদ্ধতির সংস্কার, সংযোজন-বিয়োজন বা বাতিল করা যাবে। এজন্য নতুন করে কোনো আইন পরিবর্তনের প্রয়োজন নেই।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আকবর আলী খান বলেন, প্রধানমন্ত্রী যখন নির্দেশ দিয়েছেন, তখন সরকার তা বাস্তবায়ন করবে।
বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, “(কোটা নিয়ে) কোনো আইন আছে? নাকি সংবিধান সংশোধন করতে হয়েছে? এটা (কোটা পদ্ধতি) করাই হয়েছে সার্কুলার দিয়ে। যেটা সার্কুলার দিয়ে করা যায় সেটা সার্কুলার দিয়ে উইথড্রও করা যায়।”
তবে কোটা পদ্ধতির সংস্কারের সার্কুলার আসার আগে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এই উপদেষ্টা।
-সময়ের সংলাপ২৪/ডি-এইচ