গতকাল সোমবার রাতে জনপ্রিয় সংগীত তারকা পড়শী ও তাঁর ব্যান্ড বর্ণমালা নাটোরের বড়াইগ্রামে নব নির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিলারদের আমন্ত্রণে সেখানকার পৌরসভা মাঠে এক কনসার্টে অংশ নিতে গিয়েছিলেন। কণ্ঠশিল্পী। কিন্তু সেখানে তার ব্যবহার ও গায়কীতে অসন্তুষ্ট হয়ে তাকে স্টেজ থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে বর্ণমালা ব্যান্ড ও পড়শীর ভাই ঘটনাটিকে অস্বীকার করে বলেছেন, আয়োজকদের ব্যর্থতার কারণে মঞ্চে থেকে পড়শী নিজেই নেমে গেছেন।
আয়োজরা জানায়, কনসার্ট শুরু হওয়ার কথা ছিল সন্ধ্যা ৭টায়। পড়শী বিকেল ৪টায় সেখানে পৌঁছে গিয়েছিলেন। কিন্তু রাত ৮টায় মঞ্চে ওঠার কথা থাকলেও তিনি স্টেজে ওঠেন রাত ১০টার পর। তাকে স্টেজে দেখেই শ্রোতারা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। কোনো রকমে গান শুরু করলেও দর্শকদের মন রক্ষা করতে পারেন নি।
তবে পড়শীর ভাই সাক্ষর জানান, আয়োজকরা এতোবড় একটা প্রোগ্রাম আয়োজন করেও চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। সেখানে ইলেক্ট্রিসিটি'র সাপ্লাই নিয়মিত পাওয়া যাচ্ছিল না। ফলে ড্রামে একটা আঘাত করতেই ইলেক্ট্রিসিটি ডাউন হয়ে যাচ্ছিল। আমাদের জন্য এই অবস্থায় প্রোগ্রাম কন্টিনিউ করা সম্ভব হচ্ছিল না। কেন না আমাদের ইন্সট্রুমেন্টগুলো নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল। আমরা বারবার অনুরোধ করেও তাদের সহযোগীতা পাই নি, ফলে বাধ্য হয়ে মঞ্চ থেকে নেমে যাই।
এদিকে প্রতক্ষদর্শী অভিযোগ করে জানান, পড়শী তার ‘তোমার চোখে আকাশ আমার’, ‘একা একা লাগে’, ‘খুঁজে খুঁজে’সহ পাঁচটি গান গান। কিন্তু শুরু থেকেই তাঁর অপেক্ষা করতে করতে বিরক্ত শ্রোতারা তাকে নেমে যেতে বলেন। সেইসঙ্গে পড়শীর তাল-সুরের কোনোই মিল ছিল না গানে। ফলে দর্শক-শ্রোতারা ক্ষেপে যায়। পড়শীও তখন উল্টো ক্ষেপে যান। তিনি দর্শকদের উদ্দেশ্যে বলেন- ‘আমি কী নর্তকী না বাঈজি যে নেচে নেচে আপনাদের মন ভরাব। আমি গান করতে এসেছি। শুনতে ভালো না লাগলে চলে যান’! তখন উপস্থিথিরা ভীষণ ক্ষেপে যান। একপর্যায়ে স্থানীয় প্রশাসনের সহয়তায় কোনোরকমে পড়শী স্টেজ ছাড়তে বাধ্য হন।’
তবে পড়শীর ভাই সাক্ষর এহসান কালের কণ্ঠকে বলেন, এই ধরনের কোনো ঘটনাই ঘটেনি। দর্শগকদের আমরা ভালো সাড়া পেয়েছি। দর্শকদের কোনো ভুল ছিল না। আমরা আমাদের প্রোগ্রাম চালিয়ে যেতে পারতাম তবে ইন্সট্রুমেন্ট নষ্ট করার ঝুঁকি নিই নি। সাক্ষর জানান, পড়শী মোট ৭ টা গানই গায় তবে সেখানে সে ৫ টি গান গেয়ে মঞ্চ থেকে নেমে যান।
এদিকে ওই প্রতক্ষদর্শী বলেন, ‘পড়শী মঞ্চ থেকে নেমে গেলেও পরিস্থিতি ছিল নিয়ন্ত্রণের বাইরে। বড়াইগ্রাম পৌরসভার মেয়র বারেক সরদার উত্তেজিত দর্শকদের শান্ত করতে না পেরে নিজেই স্থান ত্যাগ করেন। পরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। তারা দর্শক-শ্রোতাদের কথা দিতে বাধ্য হন- বড়াইগ্রামে আর কখনো পড়শীকে গান গাইতে আনা হবে না।'
এ প্রসঙ্গে মেয়র বারেক সরদার জানান, গতকাল রাতে যা ঘটে গেল সেটি সত্যি দুঃখজনক। পড়শীর অনেক ভুল ছিলো। বিশেষ করে দর্শকদের সঙ্গে তার ব্যবহার ছিলো হতাশাজনক। তারকাদের কাছে কেউ এমন আচরণ আশা করে না।’
এই ঘটনা বিষয়ে গণমাধ্যমকর্মীরা পড়শীর সাথে যোগাযোগ করে ব্যর্থ হয়ে পড়শীর ফেরিভায়েড ফেসবুক আইডি, ফ্যান পেইজের মাধ্যমে খবর নেওয়ার চেষ্টা করলেও ফেরিভায়েড ফেসবুক আইডি, ফ্যান পেইজে ডি-অ্যাক্টিভ পাওয়া যায়। বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা চলছে সংগীতাঙ্গনে। অনুমান করা হচ্ছিল সোমবার রাতের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্যই এসব বন্ধ করে রাখা হয়েছে।
তবে এ প্রসঙ্গে সাক্ষর বলেন, আসলে পড়শীর আইডি ও ফেসবুক পেইজ আমি চালাই। একটা কারণে কয়েকদিন আগে এগুলো ডিএক্টিভ করা হয়েছে। যেহেতু আমরা ঢাকার বাইরে সেহেতু মোবাইলফোন দিয়ে এসব সক্রিয় করা যাচ্ছে না। ঢাকার বাইরে কোথায় আছেন আপনারা? এমন প্রশ্নের জবাবে সাক্ষর বলেন, পড়শীসহ পুরো বর্ণমালা টিম এখন গাজীপুরে অবস্থান করছে।