ধেয়ে আসছে ভূমিকম্প … আপনি প্রস্তুত তো? - সময়ের সংলাপ24
DHAKA WEATHER

Post Bottom Ad

খুব শীগ্রই আমরা Somoyersonglap24.com ওয়েবসাইট নিয়ে আসছি..

ধেয়ে আসছে ভূমিকম্প … আপনি প্রস্তুত তো?

Share This
ভূতাত্ত্বিক কারনে ঢাকা তিনটি টেকটনিক প্লেটের এক মহা ঠেলা ঠেলির মধ্যে আছে। এই তিনটি প্লেটের চাপ বাংলাদেশের ভূতাত্ত্বিক গঠনের উপর বড় ধরনের মোচড় পড়েছে । বাংলাদেশ প্রতি বছর ৬ সেমি করে উত্তর পুর্ব দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, অপরদিকে মিয়ানমারের প্লেট আমাদের দিকে ২ সে.মি করে এগিয়ে আসছে । এই দুই প্লেটের সম্মিলিত চাপ পড়েছে আমাদের এই মাতৃভূমির মধ্যে। এই চাপের কারনে দেশের অনেক জায়গায় ভুমিকম্পের উৎপত্তি স্থল হিসেবে কাজ করেব। এই সব জায়গায় আমাদের ভুমির উপর পৃষ্ট হতে ১২ মাইল গভীরে, যা এক একটি অগভীর ভূমিকম্পের কেন্দ্র হিসেবে সৃষ্টি হবে। ২০০৪ সালে সুমাত্রায় সৃষ্ট ভূমিকম্পের কারনে যে সুনামি তৈরি হয়েছিল তা ঢাকা কে প্রায় দুই ফুট উচু করেছে।

তাহলে বুঝা যায় যদি ঢাকা বা এর আশে পাশে কোন ভূমিকম্পের উৎপত্তি স্থল হয় তাহলে ঢাকর কি অবস্থা হবে? ঢাকা বা এর আশে পাশের বড় ধরনে ভূমিকম্প হলে তা হবে পৃথিবীর জন্য ভয়াবহতম মানবিক বিপর্যয় । শুধু ঢাকা নয় বাংলাদেশের যে সব বড় বড় শহর আছে তার একই পরিনতি হবে। দুর্বল অবকাঠামো গত কারনে ঢাকাকে পৃথিবীর সবচেয়ে ঝুকিপূর্ন্য শহর হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই সব ভুমিকম্পের কারনে যে কোন মুহুর্তে পাল্টে যায় নদীর গতিপথ। যেমনটি হয়েছিল ১৭৬২ সালের ২ এপ্রিল, ৭.৫ মাত্রার ভূমিকম্পের কারনে মাত্র কয়েক ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র নদ এর গতি পথ পরিবর্তন করে বর্তমান যমুনা নদীর গতিপথ ধারন করে। যদি এখন কোন ভূমিকম্পের কারনে যমুনা তার গতিপথ পরিবর্তন করে তাহলে ১০ কি.মি প্রস্থের নদী কি পরিমাণ ধবংশযজ্ঞ চালাতে পারে। প্রতিবছর বর্ষাকালে কয়েক বিলিয়ন টন পলি ও পানি পানি আসে তা আমাদের এই ভুপৃষ্ট কে ২ ইঞ্চি করে সংকুচিত করে।

আমাদের দেশে প্রতিবছর ১.৫ বিলিয়ন টন পলি আসে যা আবাদযোগ্য জমিকে উর্বর করে , সাথে সাথে এই পলিমাটির স্তর দেখিয়ে দেয় কিভাবে বিভিন্ন সময় ভূমিকম্প হয়েছিল এবং এখন কিভাবে ভূস্তর পরিবর্তিত হচ্ছে। এই পলিমাটির স্তর আরোও নির্দেশ করে কি ভাবে বাংলাদেশ একটু একটু করে নিদির্ষ্ট দিকে হেলে যাচ্ছে । বাংলাদেশ যতটুকো না সমুদ্র পৃষ্ট বৃদ্ধির কারনে তলিয়ে যাচ্ছে তার চেয়ে বেশি তলিয়ে যাচ্ছে এর ভূতাত্ত্বিক গঠনের কারনে। যা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কে আরও বেগবান করেছে। যে কারনে আমাদের এই অঞ্চলে গত কয়েক শত বছরে ভয়াবহতম ভূমিকম্প সংগঠিত হয়েছিল ঠিক একই কারনে ভবিষ্যতে হবে।

আমরা ডাউকি ফল্টকে কমবেশি সবাই জানি বা নাম শুনেছি কিন্তু এখনও সঠিক ভাবে এর সম্পুর্ন্য অবস্থান নির্নয় করা যায়নি। ধারনা করা হচ্ছে বাংলাদেশ সীমান্তে জামালপুর হতে সিলেট পর্যন্ত এই ফল্টের অবস্থান। এই ফল্টের পাশেই আছে সিলেট বেসিন যাকে আমরা হাওড় এলাকা হিসেবে চিনি। এই বেসিন প্রাতিবছর নিচের দিকে দেবে যাচ্ছে যা দাউকি ফল্টের শক্তি সঞ্চয়ে সহায়তা করছে । এই শক্তি সৃষ্টি হয় দুটি প্লেট বা একটি ফল্টের দুই অংশের পার্শ্বীয় বা সম্মুখ চাপের কারনে । যখন এই শক্তি সঞ্চয়ের মাত্রা অতিক্রম করে তখনই ভূমিকম্প সৃষ্টি হয়। এই ফল্ট ঢাকার জন্য ভয়াবহ রকম ঝুকির সৃষ্টি করেছে। এছাড়াও ঢাকার আশে পাঁশে অনে ছোট ছোট ফল্ট লাইন আছে। শুধু তাই নয় ঢাকায় খুব নিকটবর্তী জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং চাঁদপুরের তলদেশ দিয়ে কোন একটি ফল্টের অবস্থান আছে । ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ভূতাত্ত্বিক গঠন ও এটি একটি চলমান প্লেটের ধারে অবস্থান করায় এর নিচে ফল্ট লাইনের অবস্থান কে আড়ও জোরালো করেছে। অপরদিকে চাঁদপুরে মাঝে মাঝে ভূমিকম্পের উৎপত্তি স্থল হিসেবে দেখা গেছে। এই সব ফল্ট লাইন বঙ্গপোসাগরের তলদেশ দিয়ে সোজা চলে গেছে আন্দমান নিকোবোর দ্বীপপুঞ্জে ।

ঢাকাশহর ভয়বাহ রকম ভূতাত্ত্বিক ঝুঁকির মধ্যে আছে , ঢাকা শহরে প্রতিনিয়ত কোটি কোটি লিটার পানি উত্তোলন করা হচ্ছে যা ভূমিকম্পের তরঙ্গকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে ফলে ৪ বা ৫ মাত্রার ভূমিকম্প হলে আমাদের অনুভূত হয়। অন্যদিকে ১৫ হাজার, ১২ হাজার বা ৭ হাজার বছর ঢাকার আশে পাঁশে এলাকা বড় বড় জলাভূমি ছিল। ঐ সময় বহু জৈব পদার্থ জমা হয়ে তৈরি করেছিল পিট স্তর। পরে এই সব পিট স্তররের উপর নদী বাহিত পলল জমা হয়ে ভূমি সৃষ্টি । আবার এই সব ভুমিকে ভিত্তিভূমি হিসেবে বিবেচনা করে ভবন ও শিল্পকারখানা তৈরি করা হয়েছে কিন্তু এই সব পিট স্তর ভূকম্পনের তরঙ্গকে আরোও বাড়িয়ে তুলছে । এই সব কারনে কোন শহর করার জন্য আগে ভুপদার্থিক অনুসন্ধান করার পর ঐ অঞ্চলে শহর করার জন্য বিবেচনা করা যেতা পারে।

সবদিক বিবেচনা করে এটা বলা যায় যে ঢাকা একশত ভাগ ভূমিকম্পের ঝুকির মধ্যে আছে , এবং ঢাকায় যে কোন মুহুর্তে ভূমিকম্প হতে পারে যার ফলশ্রুতিতে লাখ লাখ মৃত্যু ঝুকির মধ্যে পড়বে। আমরা ঢাকাকে একটি শহর হিসেবে তৈরি করছি না করছি একটি মৃত্যুকুপ হিসেবে ।

“ একটা কথা মনে রাখবেন কোন স্টিল ভূমিকম্প সহনীয় নয় ।শুধুমাত্র দ্বারা তৈরি নিদির্ষ্ট ফ্রেম ভূমিকম্প প্রতিরোধী হিসেবে বিবেচিত হয় । আপনার ভবনের নিদির্ষ্ট ডিজাইন, সঠিক উপাদান ও সঠিক ফাউন্ডেশন বাঁচিয়ে দিতে পারে আপনার জীবন”