রাজধানীতে ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে বিএনপির সাত জনকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এদের মধ্যে মিরপুর থানা বিএনপির সভাপতি আবুল হোসেনসহ তিন নেতাকে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) পরিচয়ে উঠিয়ে নেওয়ার কথা বলছেন আবুল হোসেনের ছেলে আবদুল্লাহ আল মামুন।
মামুন জানান, আদালতে কাজ শেষ করে বাসার ফেরার সময় সোমবার দুপুর ২টার দিকে জজ কোর্ট এলাকা থেকে ডিবি পুলিশ তার বাবার সঙ্গে মিরপুর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ওয়াইজ উদ্দিন ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মুকুলকে তুলে নিয়ে যান।
এদিকে সোমবারই ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সহসভাপতি মুকিতুল আহসান রঞ্জু ও গুলশান বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবদুল আলীম নকীকে গুলশান থেকে ডিবি পুলিশ তুলে নিয়ে গেছে বলেও খবর পাওয়া গেছে। তবে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ওই পাঁচ জনকে আটক বা গ্রেপ্তারের সত্যতা নিশ্চিত করেনি ডিবি পুলিশ।
অন্যদিকে, ধানের শীষের সমর্থনে কাজ করার অভিযোগে কামরুনাহার নামে এক নারীকর্মীকে তার শিশু সন্তানসহ তাদের মিরপুরের বাসা থেকে সোমবার বিকেলে মিরপুর থানা পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেছেন তার স্বামী লতিফ। এ বিষয়ে মিরপুর থানা পুলিশ বলছে, বিভিন্ন অভিযোগে সোমবার কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। এদের মধ্যে একাধিক নারীও রয়েছেন। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সোমবার বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ বলেন, ‘সবুজবাগ থানাধীন ৭৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি নেতা মিন্নত আলীকে গত রোববার পুলিশ গ্রেপ্তার করার পর তার ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়। মিন্নত আলী বর্তমানে স্থানীয় একটি হাসপাতালে পুলিশ প্রহরায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ ছাড়া একই রাতে দারুস সালাম থানা বিএনপির সভাপতি রহমান হাজীকে বাসায় না পেয়ে তার ছেলে মো. লিটনকে পুলিশ তাদের বাসা থেকে ধরে নিয়ে গেছে।’
রিজভী বলেন, ‘রোববার রাতেই লালমোহন থানা কৃষক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. গিয়াসউদ্দিনসহ পাঁচ নেতাকর্মীকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অবসরপ্রাপ্ত) হাফিজ উদ্দিনের বাসার সামনে থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। নেতাকর্মীরা হাফিজ উদ্দিনের সঙ্গে তার বাসায় সাক্ষাৎ শেষে বের হলে তাদেরকে উঠিয়ে নেওয়া হয়। একই রাতে লাকসাম পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও কুমিল্লা-৯ আসনে বিএনপি মনোনীত ধানের শীষের প্রার্থী কর্নেল (অবসরপ্রাপ্ত) আনোয়ারুল আজিমের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট তাজুল ইসলাম খোকনকে ডিবি পুলিশ রাজধানীর মতিঝিল এলাকা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর অস্বীকার করলেও পরবর্তীতে তাকে আটকের বিষয়টি স্বীকার করে। রাতেই তাকে ভাসানটেক থানায় হস্তান্তর করা হয়। এ ছাড়া কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ থানা বিএনপির প্রচার সম্পাদক ও লক্ষণপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো. শাহীনের বাড়িতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছে। শুধু তাই নয়, একই থানাধীন উত্তর যলম ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. আনিসকে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা বেধরক পিটিয়েছে।’
বিএনপির এ জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, ‘কোনো ধরণের মামলা না থাকলেও টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলাধীন ধোপাকান্দি ইউনিয়ন ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আবুল কালাম এবং সাধারণ সম্পাদক মো. কিবরিয়াকে রোববার গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সে দিনই বগুড়ার শেরপুর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও পৌর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক হাসানুল মারুফ শিমুলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বাগেরহাটের কচুয়া থানা বিএনপি নেতা আল মামুনকে গ্রেপ্তার করা ছাড়াও রোববার গোপালপুর ইউনিয়নে বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে তল্লাশীর নামে ব্যাপক অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। এ ছাড়া রাঢ়ীপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক মেম্বার ও বিএনপি নেতা শাহনাজ সরদারের বাড়িসহ সাত থেকে আটটি বাড়িতে বিএনপি নেতাকর্মীদের আটক করার জন্য রাতভর অভিযান চালায় পুলিশ।’
বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনসহ বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদেরকে গ্রেপ্তার এবং নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে তল্লাশীর নামে পুলিশী তাণ্ডবের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারসহ অবিলম্বে নেতাকর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তির জোর দাবি জানান বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ। আমাদের সময়
-সময়ের সংলাপ২৪/ডি-এইচ