করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিতে সিলেটে সমন্বিত সেবার উদ্যোগে এগিয়ে এসেছে বেসরকারি হাসপাতালগুলোর একটি সংগঠন। নগরীর দুটিসহ মোট পাঁচটি বেসরকারি হাসপাতাল প্রস্তুত রাখা হবে ভাইরাসটিতে আক্রান্ত রোগীদের সেবায়।
আজ শনিবার সিলেট বেসরকারি হাসপাতাল অ্যাসোসিয়েশন নামে সংগঠনটি এ সিদ্ধান্ত নেয়। তার আগে সিলেটের বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে সংগঠনের উদ্যোগে বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, সিটি করপোরেশন ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সমন্বয়ে বেসরকারি হাসপাতাল অ্যাসোসিয়েশনের একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় সংগঠনটির নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো হচ্ছে-
১. সিলেটে পরিস্থিতি বিবেচনায় দুটি বড় বেসরকারি হাসপাতাল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের জন্য প্রস্তুত থাকবে।
২. রোগীদের জন্য ১০টি ‘হটলাইন’ নম্বর খোলা হবে এবং সেখান থেকে ফোনে পরামর্শ দেওয়া হবে।
৩. তিনটি অ্যাম্বুলেন্স রোগীদের বহন করার জন্য রাখা হবে।
৪. সব বেসরকারি হাসপাতালে ‘ফ্লু কর্নার’ খুলে চিকিৎসা নিশ্চিত করা হবে।
৫. করোনাভাইরাস সংক্রমণে রোগীর মৃত্যু হলে একটি নির্ধারিত পিকআপ ভ্যানের ব্যবস্থা থাকবে।
৬. মৃতদের মানিক পীর কবরস্থানে দাফন ও জানাজার ব্যবস্থা করবে সিটি করপোরেশন।
বর্তমান পরিস্থিতিতে সিলেটের শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে (সদর হাসপাতাল) সরকারিভাবে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আইসোলেশন সেন্টার খোলা হয়েছে উপজেলা কমপ্লেক্সগুলোতে।
সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আশঙ্কা করছেন করোনাভাইরাসের বিস্তার অব্যাহত থাকলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে।
করোনা পরিস্থি মোকাবিলায় সিলেট নগরীতে দুটি শাখার মাধ্যমে পরিচালিত একটি বেসরকারি হাসপাতাল পুরোটাই আক্রান্ত ব্যক্তিদের সেবায় উন্মুক্ত থাকবে বলে জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা। তারা আরও জানিয়েছেন, পরিস্থিতি অনুযায়ী দ্বিতীয় পর্যায়ে একটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একটি ইউনিট করোনা রোগীর সেবার জন্য দেওয়া হবে।
গত বৃহস্পতিবার সরকারি হাসপাতালের সঙ্গে সমন্বয় রেখে বেসরকারি হাসপাতালে সেবা দেওয়ার বিষয়ে একমত হয় সংগঠনটি। সিলেটের প্রথম বেসরকারি হাসপাতাল নগরীর দরগাহ গেট এলাকার নুরজাহান হাসপাতালে অ্যাসোসিয়েশনের প্রথম সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। পরে সরকারি স্বাস্থ্যসেবা দপ্তরগুলো ও প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বিত আরেকটি সভা অনুষ্ঠিত হয়।
প্রথম সভার ধারাবাহিকতায় আজ দ্বিতীয় দফা সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো নিয়ে একমত পোষণ করেন উদ্যোক্তারা। সভায় উপস্থিত ছিলেন- সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, বিএমএ সিলেটের সদস্যসচিব আজিজুর রহমান, বেসরকারি মেডিকেল কলেজ জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সিলেট উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, পার্ক ভিউ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ইবনে সিনা হাসপাতাল, মাউন্ট এডোরা হাসপাতাল, ওয়েসিস হাসপাতাল ও আল-হারামাইন হাসপাতালের প্রতিনিধিরা। সভাপতিত্ব করেন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নাসিম আহমদ।
পরে গণমাধ্যমে সিলেট বেসরকারি হাসপাতাল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নাসিম আহমদ বলেন, ‘বেসরকারি হাসপাতালে করোনা রোগীদের সেবা দেওয়ার বিষয়ে আমরা প্রাথমিকভাবে দুটি হাসপাতাল নির্ধারণ করে রেখেছি। এই দুটি হাসপাতালের মধ্যে পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রথম পর্যায়ে একটিকে সেবার জন্য উন্মুক্ত করা হবে। বেসরকারি হাসপাতালে সেবার জন্য সিটি করপোরেশন একটি অ্যাম্বুলেন্স, বিএমএ দুটি অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে সহযোগিতা করবে। আর অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে চিকিৎসকসহ অন্যান্য সেবা দেওয়া হবে।’
নাসিম আরও বলেন, ‘এ উদ্যোগ ইতিমধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়েছে। সিলেটে আমাদের উদ্যোগটি যদি এগিয়ে নেওয়া যায়, তাহলে সারা দেশের মধ্যে প্রথম বেসরকারি হাসপাতালের উদ্যোগ হবে এটি।’
মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘বেসরকারি হাসপাতালে করোনা রোগীর সেবায় একটি অ্যাম্বুলেন্সসহ অন্য সহায়তাও সর্বাত্মকভাবে সিটি করপোরেশন দিতে প্রস্তুত। বেসরকারি হাসপাতালের সেবায় সহায়তার পাশাপাশি সিলেটে করোনা রোগীদের জন্য নির্ধারিত সরকারি হাসপাতাল শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালের কাজেও সহায়তা করছে সিটি করপোরেশন। সেখানে নতুন করে নয়টি ভেন্টিলেশন সংযুক্ত করা হচ্ছে। এ কাজেও সহায়তা করা হচ্ছে। সরকারি হাসপাতালের মতো বেসরকারি হাসপাতালের সেবায়ও একই সহায়তা থাকবে।
-সময়ের সংলাপ২৪/ডি-এইচ
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন