এইডসে আক্রান্ত ৩১৯ রোহিঙ্গা - সময়ের সংলাপ24
DHAKA WEATHER

Post Bottom Ad

খুব শীগ্রই আমরা Somoyersonglap24.com ওয়েবসাইট নিয়ে আসছি..

এইডসে আক্রান্ত ৩১৯ রোহিঙ্গা

Share This

কক্সবাজারের উখিয়া টেকনাফের বিভিন্ন শিবিরে আশ্রয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের মধ্যে এইচআইভি এইডসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। আর আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যা বেশি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ পর্যন্ত এইচআইভি-এইডসে আক্রান্ত ৩১৯ জন রোহিঙ্গাকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৭৭ জন চিকিৎসার আওতায় রয়েছে।

গত ফেব্রুয়ারিতেই এইডসে আক্রান্ত অন্তত ৯ জন রোহিঙ্গার সন্ধান মিলেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে উখিয়া-টেকনাফের শিবিরগুলোয় প্রায় ৯ লাখ ৯ হাজার রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। তাদের মধ্যে গত ফেব্রুয়ারিতে এইডসে আক্রান্ত ৪ পুরুষ ও ৫ নারীকে চিহ্নিত করা হয়। একই সময়ে এ রোগে দুই নারী ও এক পুরুষ মারা যান। তবে ফেব্রুয়ারিতে কক্সবাজারের স্থানীয়দের মধ্যে এইডস আক্রান্ত কাউকে পাওয়া যায়নি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এইডস-এসটিডি কর্মসূচির কর্মকর্তা এসএম আখতারুজ্জামান বলেন, কক্সবাজার, উখিয়া ও টেকনাফ হাসপাতালে এইচআইভি-এইডস শনাক্তকরণ সংক্রান্ত কাউন্সিলিং ও টেস্ট করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। যাদের শরীরে এইচআইভি ভাইরাস পাওয়া যায় তাদের কক্সবাজার হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়। গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এইচআইভি-এইডসে আক্রান্ত ৪৪৮ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩১৯ জন রোহিঙ্গা এবং ১২৯ বাংলাদেশি রয়েছে।

আক্রান্তদের মধ্যে ২৭৭ জন রোহিঙ্গা এবং ৭২ বাংলাদেশিকে চিকিৎসার আওতায় আনা হয়েছে। যারা এইডসে আক্রান্ত হয়েছে তাদের মধ্যে ৬৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ১৯ জন রোহিঙ্গা এবং ৪৪ জন বাংলাদেশি। আক্রান্ত ও মারা যাওয়াদের মধ্যে পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যা বেশি। তিনি আরও বলেন, কক্সবাজারের এলাকার এইচআইভি-এইডসে আক্রান্তদের শনাক্তকরণ ও চিকিৎসা দেওয়া হয় জেলা হাসপাতালের মাধ্যমে। তবে এ রোগে আক্রান্ত রোহিঙ্গাদের ক্যাম্প থেকে হাসপাতালে আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে নানা ধরনের জটিলতার মুখোমুখি হতে হয়। এ কারণে উখিয়া স্বাস্থ্য কেন্দ্রে এইডসে আক্রান্ত রোহিঙ্গাদের শনাক্তকরণ ও চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।

এরই মধ্যে কক্সবাজারে চিকিৎসাসেবা গ্রহণকারী ৮৪ রোহিঙ্গাকে উখিয়া স্বাস্থ্য কেন্দ্রে স্থানান্তর করা হয়েছে। বাকিদের পর্যায়ক্রমে স্থানান্তর করা হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের টিবি-ল্যাপ্রোসি এবং এইডস-এসটিডি প্রোগ্রামের লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. শামিউল ইসলাম বলেন, মিয়ানমারে অন্যান্য জনগোষ্ঠীর তুলনায় রোহিঙ্গাদের এইচআইভি-এইডসে আক্রান্তের হার কম। যদিও তা আমাদের দেশের তুলনায় বেশি। সে জন্য শনাক্ত ও চিকিৎসা কার্যক্রম আরও বিস্তৃত করতে কাজ করছি। রোহিঙ্গা এইডস রোগীদের বেশিরভাগ মিয়ানমারে শনাক্ত হয়েছিল। কিন্তু সেখানে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার কারণে তারা চিকিৎসা পেত না। আমাদের দেশে আসার পর আমরা এইচআইভি আক্রান্তদের শনাক্ত করে চিকিৎসার আওতায় এনেছি। যেন অন্যদের মধ্যে এ ভাইরাস সংক্রমিত না হয়। আমরা প্রিভেশন মাদার টু চাইল্ড নামে একটি প্রোগ্রাম চালু করেছি। যার আওতায় গর্ভবতী নারীদের এইচআইভি পরীক্ষা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে কেউ শারীরিক নির্যাতনের শিকার এলে তখনও এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছি।

এ ছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর কেউ কোনো কারণে চলে এলে তাদের পরীক্ষা করছি। বৈশ্বিক নিয়ম অনুযায়ী এইচআইভি শনাক্তের আগে কাউন্সিলিং করতে হয়। আমরা সেই আলোকে কাজ করছি। জানা গেছে, এশিয়ার মধ্যে যে কটি দেশ এইচআইভির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ তার মধ্যে মিয়ানমার অন্যতম। জাতিসংঘের এইডসবিষয়ক প্রতিষ্ঠান ইউএনএইডসের তথ্য মতে, দেশটিতে বর্তমানে ২ লাখ ৩০ হাজার থেকে ২ লাখ ৬০ হাজার এইচআইভি-এইডস আক্রান্ত মানুষ রয়েছে। দেশটির প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে দশমিক ৮ ভাগ এইডসে আক্রান্ত। এ ছাড়া শিরায় ইনজেকশন গ্রহণকারীদের মধ্যে ২৩ শতাংশ, নারী যৌনকর্মীদের মধ্যে ৬ দশমিক ৩ শতাংশ এবং সমকামীদের মধ্যে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ এই ভাইরাসে আক্রান্ত। সেই হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে ২ থেকে আড়াই হাজার এইডস রোগী থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এইডস-এসটিডি কর্মসূচির কর্মকর্তারা বলেছেন, রোহিঙ্গারা যদি আমাদের দেশের স্থানীয় লোকদের সঙ্গে মেলামেশার সুযোগ পায়, তা হলে এ রোগ ছড়াতে পারে। তাই রোহিঙ্গারা যেন কক্সবাজারে ছড়িয়ে না পড়ে সে জন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তাদের ক্যাম্পে রাখার ব্যবস্থা নিয়েছে। যাদের এইচআইভি শনাক্ত হচ্ছে তাদের একা বা স্বজনের সঙ্গে কক্সবাজার হাসপাতালে আসতে দেওয়া হয় না। এই আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য কক্সবাজার হাসপাতালে নিয়ে যান আইএমও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

-সময়ের সংলাপ২৪/ডি-এইচ