সৌদি আরবের মক্কায় অবস্থিত মুসলিমদের সবচেয়ে পবিত্র স্থান কাবা শরীফ। আর কাবা শরীফের গিলাফও (একধরনের বিশেষ আচ্ছাদন) বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ। এবার এই মহামূল্যবান গিলাফের একটুকরো উপহার হিসেবে পেলেন আর্সেনালের জার্মান মিডফিল্ডার মেসুত ওজিল।
গিলাফের টুকরো উপহার হিসেবে পাওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ইনস্টাগ্রামে তার ছবি পোস্ট করেছেন ওজিল। ছবির ক্যাপশনে তিনি লিখেছেন, ‘মক্কার কাবা শরীফের গিলাফের বিশেষ এক খণ্ড আমার লন্ডনের বাসায় উপহার হিসেবে পেয়ে আমি সম্মানিত বোধ করছি। এমন অমূল্য উপহার পেয়ে আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছি। আমহামদুলিল্লাহ।'
কাবা শরীফের ‘কিসওয়া’ বা গিলাফ শতভাগ রেশমী কাপড়ে নির্মিত যার ওপর স্বর্ণের আবরণ দিয়ে লেখা থাকে "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলাল্লাহ", "আল্লাহু জাল্লা জালালুহু", "সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি, সুবহানাল্লাহিল আজিম" এবং "ইয়া হান্নান, ইয়া মান্নান"।
১৪ মিটার দীর্ঘ এবং ৯৫ সেমি প্রস্থ ৪১ খণ্ড বস্ত্রখণ্ড জোড়া দিয়ে গিলাফ তৈরি করা হয়। গিলাফের চার কোণায় সুরা ইখলাস স্বর্ণসূত্রে বৃত্তাকারে উৎকীর্ণ করা হয়। একটি গিলাফে ব্যবহৃত রেশমী কাপড়ের ওজন ৬৭০ কিলোগ্রাম এবং স্বর্ণের ওজন ১৫ কিলোগ্রাম। বর্তমানে গিলাফ তৈরিতে প্রায় ১৭ মিলিয়ন সৌদি রিয়াল ব্যয় হয়। বর্তমানে দামী কালো রঙের সিল্কের কাপড়ের তৈরি স্বর্ণ-খচিত ক্যালিগ্রাফি মোটা গিলাফ দিয়ে কাবা শরীফ আচ্ছাদন করা হয়। কাপড়টি কিসওয়াহ নামে আখ্যায়িত।
এই কিসওয়াহ তৈরিতে ৬৭০ কেজি রেশমী কাপড় ব্যবহার করা হয় যা ইতালি থেকে বিশেষ ব্যবস্থায় আনা হয় এবং যা দিয়ে ৫০ ফুট উচ্চতা এবং ৩৫-৪০ ফুট লম্বা কাবা শরীফ আচ্ছাদিত করা হয়। এতে ব্যবহৃত রুপা ও স্বর্ণখচিত সুতা আনা হয় জার্মানি থেকে।
প্রতি বছর হজের ঠিক আগে কাবা শরীফের গিলাফ পরিবর্তন করা হয়। এর স্থলে সাদা কাপড় দিয়ে কাবা শরীফ ঢেকে দেয়া হয়। হজ শেষ হওয়ার পর নতুন গিলাফ পরানো হয়। তখন আগের গিলাফটি খণ্ড খণ্ড করে বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তি ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে উপহার হিসেবে পাঠানো হয়। এরই একটা খণ্ড এবার উপহার পেয়েছেন ওজিল।
২০০৬ সালে জার্মানির যুব দলে যুক্ত হওয়ার পর ২০০৯ সাল থেকে জাতীয় দলের নিয়মিত মুখ ছিলেন ওজিল। এই সময়ে ২০১০ সালের ফুটবল বিশ্বকাপ জেতার স্বাদ পেয়েছেন তিনি। এজন্য গোল্ডেন বল পুরস্কারে মনোনয়ন ও টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছিলেন এই মিডফিল্ড তারকা। ২০১৮ সালের বিশ্বকাপে জার্মানির ভরাডুবির পর জাতীয় দল থেকে অবসরে চলে যান এই তুর্কি বংশোদ্ভুত ফুটবলার।
মাঠের ফুটবল ছাপিয়ে তার ধর্মীয় পরিচয় বহুবার আলোচনায় এসেছে। ফুটবল মাঠে সেজদায় লুটিয়ে পড়া, দোয়া করা কিংবা রোজা রেখে মাঠে নামায় মুসলিম বিশ্বে তিনি বিশেষভাবে প্রশংসিত।
-সময়ের সংলাপ২৪/ডি-এইচ