আর্থিক অনটনে প্রায় ৮ বছর ধরে বিনা চিকিৎসায় ধুঁকছিলেন চামেলী খাতুন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সেই খবর ছড়িয়ে পড়তেই জাতীয় দলের সাবেক এই নারী অলরাউন্ডারের পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান ও মুস্তাফিজুর রহমান।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকেও পান সহযোগিতার আশ্বাস। কিন্তু এখন কাউকেই পাশে পাচ্ছেন না এক সময়ের মাঠ কাঁপানো ক্রিকেটার চামেলী। তার চিকিৎসার দায়িত্বও নিচ্ছেন না কেউই!
গত ২ নভেম্বর উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় আনা হয় চামেলী খাতুনকে। রাজশাহীর জেলা প্রশাসনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ঢাকার আনার পর বিসিবির তত্ত্বাবধানেই তাকে ভর্তি করা হয় জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল)। জানানো হয়, দেশেই সম্ভব চামেলীর চিকিৎসা। এরপর পেরিয়ে গেছে ২১ দিন।
এর মধ্যে প্রথম দুদিন চামেলীকে নিয়ে সরগরম ছিল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে শুরু করে বিসিবি সভাপতির কার্যালয়। কিন্তু প্রথম দুদিন ছাড়া বাকি ১৯ দিনের চিকিৎসার সমস্ত ব্যয়ভার বহন করেছেন চামেলী ও তার পরিবার। এই অভিযোগ করেছেন চামেলী নিজেই।
চামেলী বলেন, ‘প্রথম বেশ কিছুদিন অনেকেই আমার খোঁজখবর নিয়েছেন। কিন্তু এখন কারও কোনো খোঁজখবর নেই। আমি জানি না তারা ব্যস্ততার জন্য খোঁজ নিতে পারছেন না, নাকি এমনিতেই নিচ্ছেন না। তবে ট্রেইনাররা নিয়েছেন।’
‘প্রথম দুদিন বাদে ১৯ দিন ধরে আমার চিকিৎসা সকল খরচ আমি নিজে বহন করছি। কেউ আমার খোঁজ নিচ্ছেন না, উল্টো আমি ফোন দিলে আমার ফোন ধরছেন না তারা। এটা খুবই দুঃখজনক ব্যাপার। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমার জন্য যেসব কিছু করেছেন সেটা আমার জন্য যথেষ্ট। তিনি এখন নির্বাচনের কাজে ব্যস্ত আছেন, এজন্যই হয়তো আমার খোঁজ নিতে পারছেন না,’ বলেন চামেলী খাতুন।
এত অভিযোগের মধ্যেও চামেলীর হতাশা বিসিবির কর্মকাণ্ডে। বিসিবির প্রধান নির্বাহী (সিইও) নিজামউদ্দিন চৌধুরী সুজনের সঙ্গে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন বলেও জানান তিনি। এদিকে বিসিবির প্রধান নির্বাহী তার ফোন নম্বর ব্লক করে রেখেছেন অভিযোগ করে চামেলী বলেন, ‘আমি খুবই দুঃখের সাথে জানাচ্ছি, উনি আমার ফোন নম্বর ব্ল্যাকলিস্টে ফেলে দিয়েছেন।’
উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে পাঠানোর আকুতি জানিয়ে চামেলী বলেন, ‘আমাকে খুব দূরে যেতে হবে না। ভারতের বেঙ্গালুরুতে খোঁজ নিয়েছি আমি। সেখানে যাবার জন্য ভিসাও করিয়েছি। এখন শুধু টাকার জন্যই যেতে পারছি না। সম্পূর্ণ চিকিৎসার জন্য ৫ লাখ টাকা লাগবে।’
চামেলী খাতুনের পরিচয়, তিনি নারীদের জাতীয় ক্রিকেট দলের একজন সাবেক ক্রিকেটার। ১৯৯৯ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত মাঠ কাঁপিয়েছেন বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের হয়ে। কেবল ক্রিকেট নয়, সমানতালে খেলেছেন ফুটবল। অ্যাথলেটিক্সেও ছিলেন সমান পারদর্শী।
মাঠের সঙ্গে চামেলীর সম্পর্কের ছেদ পড়েছে লিগামেন্ট ছিঁড়ে যাওয়ায়। এরপর জীবিকার তাগিদে তিনি চাকরি নিয়েছিলেন আনসার-ভিডিপি অফিসে। কিন্তু লিগামেন্ট ছিঁড়ে যাওয়া ছাড়াও মেরুদণ্ডে হাড়ে ব্যথা নিয়ে মুমূর্ষু অবস্থায় জীবন কাটাচ্ছেন তিনি।
-সময়ের সংলাপ২৪/ডি-এইচ