বিচিত্র সব উপায়ে বিসিবিকে বিব্রত করার একটি কঠিন ব্রত ক্রিকেটাররা নিয়েছেন বলেই মনে হচ্ছে। কেউ দর্শক, কেউ বা বৌকে পিটিয়ে সানন্দে শিরোনাম হলেও ভাবমূর্তি নিয়ে ভয়াবহ অবস্থায় বিসিবি। সাব্বির বিতর্কের সমাধান হবার আগেই এবার শিরোনামে সৈকত। হেতু? যথারীতি নারী কেলেঙ্কারি!
বরাবরই আমি বিসিবির কঠোর সমালোচনা করলেও শৃঙ্খলার প্রশ্নে প্রতিষ্ঠানটির প্রশংসা করে এসেছি। পূর্বের ঘটনাগুলোতে বিসিবির কঠোর অবস্থানের কারণে। রুবেল থেকে শুরু করে সাব্বির পর্যন্ত যতজনই বিতর্কিত কারণে গণমাধ্যমে আলোচনায় এসেছেন তাদের যথোপযুক্ত শাস্তি দানে কসুর করেননি কর্তারা। তবু, কোনো ভাবেই থামানো যাচ্ছে না ক্রিকেটারদের। স্লগ ওভারে লাগামহীন ব্যাটিং’র মতনই যেন লাগাম ছাড়া জীবনযাপনে অভ্যস্থ হয়ে উঠছেন কথিত আইডলরা।
সৈকত অভিযোগ করেছেন তার মায়ের গায়ে হাত তোলার দায়ে স্ত্রীকে তালাক দিয়েছেন তিনি। সূর্য সন্তানের সুযোগ্য কর্ম বলে যাকে ইতোমধ্যেই অভিহিত করেছেন অনেকে। অপরদিকে সৈকতের স্ত্রী দাবী করেছেন, যৌতুকের জন্য নির্যাতন এবং বহুগামীতার! সেলেব্রেটি বটে! যেহেতু, বিষয়টি এখনো মীমাংসা হয়নি, এবং দু’পক্ষই আলাদা অবস্থান থেকে নিজেদের বক্তব্য রাখছেন, তাই আপাতত কোনো উপসংহারে না আসাই শ্রেয়। নিশ্চিত বিষয় যেটি, সেটি হচ্ছে স্ত্রীর সাথে সৈকতের সম্পর্ক মধুর বদলে এতোটাই তেতো হয়েছে যে, একই ছাদের নীচে এতটা সময় বসবাস করার পরেও কেউ কারো প্রতি সম্মান দেখানোর সুযোগ দেখছেন না! ভয়াবহই বটে।
এই নারী কেলেঙ্কারির পথ প্রদর্শক বলা যায় রুবেল হোসেনকে। তৎকালীন মডেল হ্যাপির সাথে তার আন হ্যাপি সমাপ্তি শেষ পর্যন্ত গড়িয়েছিল জেল পর্যন্ত। জার্সিতে অভ্যস্ত রুবেলকে কয়েদির পোষাকে দেখে যে আরো কয়েক জন প্রীত হবেন সেটি অবশ্য ভাবা যায়নি। রুবেলের পথ ধরেই বাইশ গজের মায়া ভুলে চৌদ্দ শিক দেখে এসেছেন আরাফাত সানিও। বিস্ময়করই বলা যায়।
একই পথের পথিক হলেও জেল পর্যন্ত যেতে হয়নি শহীদ, সাব্বির, নাসিরকে। নাসিরকে নিয়ে শুভার সুবচন যে কোনো সভ্য মানুষকে অসুস্থ করে তোলার জন্য যথেষ্ট। ‘বিপ্লবী’ শুভার ক্ষেত্রে অবশ্য ব্যতিক্রম ঘটেছে। নাসিরের বদলে জেল খেটেছেন তিনি নিজেই! কিন্তু জাতীয় দলের একজন খেলোয়াড়ের জীবনযাপনের ধরণ বিসিবিকেই শুধু না বিব্রত করেছে সবাইকেই। জেল পর্যন্ত যেতে না হলেও যে রাফতারে সাব্বির এগোচ্ছেন তাতে তিনি বিশেষ পদক প্রত্যাশা করলে অন্যায় হবে না! টিম হোটেলে নারী সমেত ধরা পড়াও তার বিড়াল চোখে সামান্য লজ্জার আভা আনতে পারেনি। পরবর্তীতে বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন চরম বিতর্কিত এক মডেল’র সাথে ফ্রেমবন্দি হয়ে!
উল্লেখিত ‘আদর্শ মানব’রা খেলোয়াড় এবং বয়স বিবেচনায় সৈকতের ঢের সিনিয়র। অনুকরণ প্রিয় বাঙালি জাতির আদর্শ মেনে আদর্শ চরিত্রের সিনিয়রদের বদলে সৈকতের মনে ধরেছে বিতর্কিতদের! এখানে বিসিবি কি করতে পারে সেটি পরিষ্কার নয়। চৌদ্দ শিকের চৌহদ্দি পর্যন্ত টেনে নেয়ার পরেও যদি কারো হ্রী হ্রাস পায় তাহলে কারই বা কি করার থাকে? বিসিবির মিডিয়া উইং’র চেয়ারম্যান অসহায় চেহারায় বিব্রত হবার কথাটুকুই বলতে পারেন। বেবোধের ভিতর বোধ সৃষ্টি করা তার পক্ষে সম্ভব না। পরিতাপের বিষয় হচ্ছে অনুকরনীয় অনেক উদাহারণ বাংলাদেশ দলে থাকলেও উঠতি ক্রিকেটাররা বেছে নিচ্ছেন বিতর্কিতদের।
সৈকত দোষী না নির্দোষ সেটি জানার জন্য অপেক্ষা করতে হবে আরো কিছু দিন। কিন্তু ক্রিকেটারদের ক্রমাগত নারী বিষয়ক নেতিবাচক ঘটনায় শিরোনাম হওয়াটা শুধু বিসিবিকেই না, বিব্রত করছে সকলেই। পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, জাতীয় দলের মোহনীয় জগতে পা রেখেই অনেকেই পথ হারাচ্ছেন সহজেই। এটার সমাধা বিসিবি’র একার পক্ষে অসম্ভব। বরং বলা যায় অবক্ষয়ে জর্জরিত সমাজের নগ্ন সত্যটাই নিজেদের অজান্তে সকলের সামনে তুলে ধরছেন এই ক্রিকেটাররা। এর জন্য যদি সামনে তারা বাহবার বায়নাক্কা ধরে বিস্ময়ের কিছুই থাকবে না। কে না জানে, দুই কান কাটার হায়া বলতে কিছুই নেই! উৎসঃ জবান
-সময়ের সংলাপ২৪/ডি-এইচ