জাতীয়: গত সোমবার দুপুরে কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দরে নামার সময় ইউএস-বাংলার ফ্লাইট বিএস ২১১ রানওয়ে থেকে ছিটকে পড়ে এবং আগুন ধরে যায়। তাতে ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া ৬৭ জন যাত্রীসহ ৭১ জন আরোহী মধ্যে উড়োজাহাজে চার ক্রুসহ ৫১ জন আরোহী নিহত হন।
আহতদের কাঠমান্ডু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাদের একজন আলমুন নাহার অ্যানি। মাত্র কয়েক সেকেন্ডে জীবনের অর্থটাই বদলে গেছে আলমুন নাহার অ্যানির। সোমবারের বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন তার স্বামী আলোকচিত্রী এফএইচ প্রিয়ক আর তাদের কন্যা তামারা প্রিয়ন্ময়ী। সেই ভয়াবহ মুহূর্তের কথা স্মরণ করে বারবার অস্বাভাবিক আচরণ করছেন গুরুতর আহত অ্যানি। মাঝে মাঝে আবার বলে ওঠেন, ‘আমার বাবুরে এনে দেন। ও একা থাকতে পারবে না। আমার প্রিয়ক কোথায়! তিন বছরের তামারাকে দেখার জন্য তার আকুতিতে চোখের পানি ধরে রাখতে পারছেন না কেউই।
অন্যদিকে অ্যানির পাশের শয্যায় শুয়ে কাতরাচ্ছিলেন মেহেদী হাসান মাসুম। তিনি জানান, মেয়েকে বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ হারান গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার জৈনাবাজার এলাকার প্রিয়ক। দুর্ভাগ্য যে তিনি তিন বছর বয়সী মেয়ে তামারাকেও বাঁচাতে পারেননি।
মেহেদী বলেন, পাশাপাশি সিটে বসা ছিলেন প্রিয়ক, তার স্ত্রী ও মেয়ে। বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সহযাত্রী মাসুমের সহযোগিতায় অ্যানি বাইরে বের হয়ে আসেন। আর তামারাকে নিয়ে বের হতে গিয়ে অঙ্গার হয়ে যান প্রিয়ক।
বুধবার কাঠমান্ডু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের বেডে শুয়ে অ্যানি ছটফট করছেন আর প্রিয় সন্তানকে বুকে এনে দেওয়ার জন্য বারবার অনুরোধ করছেন। মাঝে মাঝে আনমনে অন্য দিকে তাকিয়ে থাকছেন আর গাল গড়িয়ে নীরবে অশ্রু ঝরছে।
অ্যানি ডাক্তার ও নার্সকে অনুরোধ করে তাকে হাসপাতালের বাইরে একটু ঘুরিয়ে আনার জন্য। স্বামী আর কন্যাকে খোঁজার জন্য তিনি বাইরে বের হতে চান! অ্যানির অনুরোধেই গতকাল বুধবার দুপুর ২টার দিকে একজন চিকিৎসক ও নার্স হুইলচেয়ারে করে তাকে হাসপাতালের অষ্টমতলার বারান্দায় কিছু সময় ঘুরিয়ে আনেন। এ সময় অ্যানি বারবার ডাক্তারের কাছে তাকে কিছু সময় একা থাকার সুযোগ করে দেওয়ার অনুরোধ করেন।
প্রিয়কের স্বজন সোহানুর রহমান সোহান বলেন, অ্যানি ভাবিকে এখনও বলতে পারিনি তার স্বামী আর সন্তান নেই। তবে তিনি বুঝে গেছেন, তামারা আর প্রিয়ক বেঁচে নেই। মাঝে মাঝে ভাবি ভারসাম্যহীন আচরণ করছেন।
-সময়ের সংলাপ২৪/ডি-এইচ