যে ছবি লজ্জা দেয় - সময়ের সংলাপ24
DHAKA WEATHER

Post Bottom Ad

খুব শীগ্রই আমরা Somoyersonglap24.com ওয়েবসাইট নিয়ে আসছি..

যে ছবি লজ্জা দেয়

Share This
সম্প্রতি একটা ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। সেখানে ১৫ থেকে ১৬ জন লোক মিলে একটা বৃদ্ধ মহিলাকে সামান্য কিছু চাল দিয়ে সেই ছবি তুলছেন! আর মহিলাটা লজ্জায় মাথা নিচু করে আছেন। বিষয়টা দুঃখজনক এবং একই সাথে হৃদয়বিদারকও।

অনেকেই ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে সমালোচনা করেছেন এই ঘটনার, অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন এদের উদ্দেশ্য কী মানুষকে সাহায্য করা, নাকি ফটোশুট করা। শুধু একটু ভুল সিদ্ধান্তের কারণে একটা ভালো কাজ সমালোচিত হলো, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

এবার একটা বিপরীত ঘটনার কথা বলি। দিনাজপুর জেলার কিছু দরিদ্র শ্রমজীবী পরিবার গত বৃহস্পতিবার (৯ এপ্রিল) ভোর রাতে হঠাৎ দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ শুনে বের হয়ে দেখেন জেলা প্রশাসক নিজেই দরজায় ত্রাণের প্যাকেট নিয়ে হাজির। যাতে আছে ১০ কেজি চাল, ৫ কেজি আলু ও এক কেজি ডাল। এই সাহায্যের মাধ্যমে প্রতিটা পরিবারের এক সপ্তাহ ভালোভাবে চলার মতো ব্যবস্থা আছে। ফলে এই এক সপ্তাহ তারা খাবারের চিন্তায় রাস্তায় বেরোনো থেকে বিরত থাকতে পারবে।

এ ব্যাতিক্রমী উদ্যোগের ব্যাখ্যায় জেলা প্রশাসক মাহমুদুল আলম বলেন, ‘প্রচলিত ব্যবস্থায় ত্রাণ নিতে এসে মানুষকে ভোগান্তির শিকার হতে হয়। তাছাড়া, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে যেখানে জনসমাগম এড়িয়ে চলার কথা বলা হচ্ছে, সেখানে ত্রাণ বিতরণের নামে জনসমাগম করা নিতান্তই অমূলক।’ কী অসাধারণ একটা চিন্তা!

উপরের দুটি ঘটনারই আবির্ভাব ঘটেছে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে দেশব্যাপী চলা সাধারণ ছুটিতে খেটে খাওয়া এবং অসহায় মানুষদের সাহায্য করার প্রেক্ষাপটে। এই মহৎ কাজে সরকারসহ প্রশাসনের লোকজন যেমন এগিয়ে এসেছে, তেমনি এগিয়ে এসেছে ধনাঢ্য ব্যবসায়ীরা, আর বরাবরের মতো বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহণ তো আছেই। এদের মধ্যে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের সেচ্ছাসেবীদের কথা বিশেষভাবে বলতে হয়। অনেকেই আবার ব্যক্তিগত উদ্যোগে ত্রাণ বিতরণে এগিয়ে এসেছেন, যা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।

তবে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে যেই সমস্যাটা চোখে পড়ে, তা হলো একসঙ্গে অনেক লোককে অল্প অল্প করে ত্রাণ বিতরণের ব্যাপারটা। প্রকৃত অর্থে এর দ্বারা তেমন একটা উপকার হচ্ছে বলে মনে হয় না। কেননা অনেকগুলো লোককে একসঙ্গে ত্রাণ দিতে গিয়ে জনসমাগম ঘটানো হচ্ছে। এতে করে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে। আবার এই বিতরণকৃত অল্প ত্রাণ নিয়ে একদিন চলার পর পরের দিনই আবার মানুষগুলোকে পথে বের হতে হচ্ছে ত্রাণের আশায়। হয়তো পথে বেরিয়ে আবার একদিন চলার মতো ত্রাণ পাচ্ছে! কিন্তু এই কাজটা যদি একটু ভিন্নভাবে করা হতো, তাহলে হয়তো এই লোকগুলোকে বার বার বাসা থেকে বের হতে হতো না।

ত্রাণ বিতরণের এই সমস্যাটার সবচেয়ে ভালো সমাধান পেতে দিনাজপুরের জেলা প্রশাসকের কাজের দিকে তাকাতে হবে। এক্ষেত্রে একটা তালিকা করে অসহায় প্রতিটি পরিবারে ন্যূনতম একসপ্তাহ চলার মতো ত্রাণ দিলে সেটা হবে সবচেয়ে ভালো উদ্যোগ। হোক না সেটা অল্প কিছু পরিবারের জন্য। কিন্তু যেই অল্প কিছু মানুষদের দেওয়া হলো, তাদের আর আগামী এক সপ্তাহ খাবারের চিন্তায় বেরোতে হবে না। এভাবে সামর্থ্যবান লোকজন কিংবা সংগঠন সবাই যদি অল্প কিছু কিছু মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসে, তাহলেও ত্রাণ বিতরণের বর্তমান চিত্রটা পরিবর্তিত হয়ে যাবে।

অনেক ক্ষেত্রেই আমরা দেখে থাকি, ত্রাণ বিতরণ করতে গিয়ে ছবি তুলে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপলোড দেওয়া হচ্ছে। এতে করে এই ভালো কাজে অনেক মানুষ অনুপ্রাণিত হয়ে তারাও এগিয়ে আসছে। কিন্তু এক্ষেত্রে সাহায্যপ্রার্থীর ছবিও প্রচার হয়ে যাচ্ছে। পরিস্থিতির শিকার হয়ে এই মানুষগুলো সাহায্যের জন্য গেলেও সমাজ তাদের খারাপ/নিচু চোখে দেখছে। এতে করে সমাজে ওই পরিবারের সদস্যদের মাথা নিচু করে চলতে হচ্ছে। কিন্তু আমরা যদি সাহায্যপ্রার্থীর ছবিটা বাদ দিয়ে বাকিগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপলোড দেই, তাহলে অন্য মানুষজন যেমন অনুপ্রাণিত হবে, তেমনিভাবে এই সমস্যাটার সমাধানও হয়ে যাবে।

রাজনৈতিক নেতাদের অবশ্যই মনে রাখা দরকার, বর্তমান প্রতিকূল পরিবেশে যে নেতা এগিয়ে আসবে, জনগণ তাদেরকেই প্রাণ থেকে ভালোবাসবে এবং সময়মতো এর প্রতিদানও দেবে। বিভিন্ন নির্বাচনের সময়ে আমরা দেখেছি নির্বাচনী প্রচারণাগুলো এত সুন্দর ও শক্তিশালীভাবে করা হয় যে, ওই অঞ্চলের সবগুলো এলাকা এতে অন্তর্ভুক্ত থাকে, এমনকি একটা ঘরও বাদ যায় না। ত্রাণ বিতরণের ক্ষেত্রেও এরকম শক্তিশালী ব্যবস্থা করা উচিৎ। সাহায্যপ্রার্থীর ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দিয়ে জনপ্রিয়তা নয়, বরং অসহায়দের পাশে দাঁড়িয়ে জনপ্রিয়তা অর্জন সকচেয়ে জরুরি।

এটা অত্যন্ত দুঃখজনক যে বিভিন্ন স্থানে রাজনৈতিক নেতাদের বাড়ি থেকে সরকারি ত্রাণের বস্তা উদ্ধার করা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই এরকম অনেক খবর আমরা পত্রিকা এবং টেলিভিশনে দেখতে পেয়েছি। আবার কোনো এক জায়গায় এই অনিয়মের খবর প্রকাশ করতে গিয়ে সাংবাদিকে মারধরের শিকারও হতে হয়েছে। বলাবাহুল্য এ রকম আরো অনেক ঘটনা হয়তো গণমাধ্যমে আসেনি। দেশের এই পরিস্থিতিতেও স্থানীয় নেতাকর্মীদের এরকম আচরণ শুধু দুঃখজনকই নয়, লজ্জারও বটে। আমরা এদের কঠোর শাস্তির দাবি জানাই।

কিছুদিন আগে গুজব উঠেছিল ত্রাণ বিতরণের দায়িত্ব সেনাবাহিনীকে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় মনে হচ্ছে সেনাবাহিনীকে ত্রাণ বিতরণের দায়িত্ব দেওয়াটাই হবে সরকারের সঠিক সিদ্ধান্ত। ক্ষুধা মহামারি মানে না, তাই অসহায় জনগণের খাবারের দিকটা লক্ষ্য রাখা উচিৎ। আশা করি সরকার এ ব্যাপারে যথাযথ দৃষ্টি দেবে।

তবে ত্রাণ বিতরণে কিছু ত্রু টি বাদ দিলে এখন পর্যন্ত যত মানুষ কিংবা প্রতিষ্ঠান অসহায় মানুষদের সাহায্যে এগিয়ে এসেছে, তা সত্যিই আশা জাগানোর মতো। পারস্পরিক সহায়তায় মানুষ দূর করুক এই প্রতিকূলতা, দুর্যোগের কালো মেঘ কেটে স্বাভাবিক হোক এই পরিস্থিতি।

লেখক: জাহিদ হাসান, শিক্ষার্থী, ফার্মেসি বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।

-সময়ের সংলাপ২৪/ডি-এইচ

কোন মন্তব্য নেই: