কুমিল্লার দেবীদ্বারে প্রকাশ্যে তিনজনকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় স্তম্ভিত দেশবাসী। স্থানীয়দের কাছে এ ঘটনায় একটি মাত্র বাক্য ছাড়া আর কোনো জবাব নেই।
তারা বলছেন, সম্প্রতি বরগুনায় ঘটে যাওয়া প্রকাশ্যে কুপিয়ে রিফাত শরীফকে হত্যা ঘটনার চেয়েও জঘন্য এ হত্যাকাণ্ড।
কোনো হত্যাকাণ্ডই মেনে নেয়ার নয় জানিয়ে স্থানীয়রা জানান, নয়ন বন্ডকেও হার মানাল মোখলেছ। হয়তো এমন বর্বর হত্যাকাণ্ডের কোনো ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ হয়নি বিধায় দেশব্যাপী আলোড়ন ছড়ায়নি। তবে আজ বুধবার সকালে দেবীদ্বারে যা ঘটল তা যে কোনো পৈশাচিকতা হার মানায়। মানব সমাজে এমন ঘটনা কল্পনাতীত।
এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তিনটি পরিবার নিঃস্ব হয়ে গেল বলে জানান তারা। এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
উল্লেখ্য, বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে দেবীদ্বার উপজেলার ধামতি ইউনিয়নের রাধানগর গ্রামে প্রকাশ্যে তিনজনকে কুপিয়ে হত্যা করে রিকশাচালক মোখলেসুর রহমান (৪০)।
এছাড়াও তার এলোপাতাড়ি কোপে নারী, শিশুসহ অন্তত আরও ৬ জন আহত হয়। আরও প্রাণহানি ঠেকাতে স্থানীয়রা গণপিটুনি দিলে ঘটনাস্থলে ঘাতক মোখলেসের মৃত্যু হয়।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে দেবীদ্বার থানার ওসি জহিরুল আনোয়ার জানান, কুমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নারী, শিশুসহ পাঁচজন সুস্থ আছেন। তবে গুরুতর আহত মাজেদা বেগম ও নুরুল ইসলামের অবস্থা এখনও আশংকাজনক।
এ ঘটনায় নিহতরা হলেন- নাজমা বেগম (৪০), আনু বেগম ও আনোয়ারা বেগম (৪৫) ও আবু হানিফ (১০)।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে ওসি জহিরুল আনোয়ার যুগান্তরকে জানিয়েছিন, ভোরে বাড়িতে ঢুকে তিনজনকে কুপিয়ে হত্যা করে সে। পরে স্থানীয়রা তাকে আটক করেন। এ সময় গণপিটুনিতে তার মৃত্যু হয়।
এ হত্যাকাণ্ডের কোনো ক্লু খুঁজে পাচ্ছে না পুলিশ এখন পর্যন্ত । কি কারণে মোখলেস ভোরে প্রতিবেশীর ওপর এভাবে হামলে পড়েছে সে বিষয়েও কিছুই জানতে পারেনি তারা।
মোখলেস হয়তো মাদকাসক্ত বা মানসিক ভারসাম্যহীন ছিল, এমন প্রশ্ন উঠেছে।
তবে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে নিহত ঘাতক মোখলেসের স্ত্রী রাবেয়া বেগমের দাবি, তার স্বামী মাদকাসক্ত কিংবা মানসিক রোগী ছিল না।
তিনি জানান, মোখলেস মাদকাসক্ত ছিল না, তবে মাঝেমধ্যে মাথা ব্যথার ট্যাবলেট খেত। আমি কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঘর থেকে ধারালো ছুরি নিয়ে বাইরে গিয়ে যাকে সামনে পেয়েছে তাকে কোপায় মোখলেছ। আমি বাধা দিতে গেলে আমাকেও মারতে তেড়ে আসলে দৌড়ে পালিয়ে যাই।
মোখলেছ খুব শান্ত স্বভাবের ছিল জানিয়ে রাবেয়ার ভাষ্য, সে কেন এমন করল, আমি কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না।
একইরকম বক্তব্য জানিয়ে প্রতিবেশীরা জানান, মোখলেসকে ধূমপান করতেও দেখিনি।সে চুপচাপই থাকতো বেশিরভাগ সময়।
যেভাবে রোমহর্ষক তিন হত্যাকাণ্ড চালালো মোখলেস:
সকালে মোখলেসুর বাড়িতে এসে ঘর থেকে দা নিয়ে প্রতিবেশী নুরুল ইসলামের বাসায় ঢোকে। ঘরে থাকা নুরুল ইসলামের স্ত্রী নাজমা বেগমকে আচমকা কোপাতে শুরু করে। নুরুল ইসলাম স্ত্রীকে বাঁচাতে এলে তাকেও কুপিয়ে জখম করে মোখলেস। তাদের আর্তচিৎকারে নুরুল ইসলামের মা মাজেদা বেগম এগিয়ে এলে তাকেও এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে। এ সময় নুরুল ইসলামেকেও কুপিয়ে গুরুতর জখম করে মোখলেস।
এর পর মোখলেস রক্তমাখা দা নিয়ে যায় আরেক প্রতিবেশী শাহ আলমের বাড়িতে। সেখানে শাহ আলমের ছেলে স্কুলছাত্র আবু হানিফকে (১০) জবাই করে হত্যা করে। ছেলেকে বাঁচাতে এলে শাহ আলমের স্ত্রী আনু বেগমকেও জবাই করে মোখলেস।
খবর পেয়ে আশপাশের লোকজন মোখলেসকে আটক করে গণপিটুনি দেন। এতে তার মৃত্যু হয়।
-সময়ের সংলাপ২৪/ডি-এইচ