মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ পিছিয়েছে ৬২ বার। চলতি মাসের ১৭ তারিখ আবারও প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য করেছে
সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারোয়ার ও মেহেরুন রুনী। হত্যার সাত বছর চলে গেলেও এখনও হত্যাকারী গ্রেফতার দূরে থাক, তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ পিছিয়েছে ৬২ বার। পরিবর্তন হয়েছে একের পর এক তদন্ত কর্মকর্তা। এ অবস্থায় বিচারের আশা ছেড়ে দিয়েছে তাদের পরিবার ও একমাত্র সন্তান মেঘ।
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজারের নিজ বাসায় নির্মমভাবে খুন হন সাগর সারোয়ার ও মেহরুন রুনী। ঘটনার সময় ওই বাসায় থাকা তাদের একমাত্র শিশু সন্তান মাহি সরওয়ার মেঘ বেঁচে যায়। পরে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হত্যাকারীদের গ্রেফতারের প্রতিশ্রুতি দেন। অথচ এরপর পেরিয়ে গেছে সাতটি বছর। পুলিশের কাছ থেকে তাদের মামলা পাঠানো হয় র্যাবে, কিন্তু সেখানেও খুব একটা অগ্রগতি চোখে পড়েনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ পিছিয়েছে ৬২ বার। চলতি মাসের ১৭ তারিখ আবারও প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য করেছেন আদালত। তদন্তে ডিবি পুলিশ ব্যর্থ হওয়ার কথা স্বীকার করলে হাইকোর্টের নির্দেশে র্যাব তদন্তের দায়িত্ব পায়। র্যাবের তদন্ত কর্মকর্তা কয়েকবার পরিবর্তন হয়েছে। এখন র্যাবের একজন সহকারী পুলিশ সুপার মহিউদ্দিন আহমেদ তদন্তের মূল দায়িত্বে। তিনি কিছু পয়েন্টে অগ্রগতি দাবি করছেন।
মামলাটি বর্তমানে র্যাব সদর দপ্তরের সহকারী পরিচালক এএসপি শাহিদা রহমান তদন্ত করছেন। এর আগে র্যাব সদর দপ্তরের সহকারী পরিচালক মহিউদ্দিন আহম্মেদ তদন্ত করেছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে শেরেবাংলা নগর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. জহুরুল ইসলাম, ডিবি পুলিশের পরিদর্শক রবিউল আলম, র্যাব সদর দপ্তরের সিনিয়র এএসপি মোহাম্মদ জাফর উল্লাহ ও র্যাব সদর দপ্তরের সিনিয়র সহকারী পরিচালক ওয়ারেছ মিয়া তদন্ত করেছেন।
আদালতের নথি থেকে জানা যায়, এ মামলায় হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরি ও হাত-পা বাঁধার রশিসহ বিভিন্ন আলামত আদালতের নির্দেশে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়। একই সঙ্গে সন্দেহভাজন ২১ জন এবং গ্রেফতার ব্যক্তিদের ডিএনএ নমুনাও পাঠায় র্যাব। সেই আলামত থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ডিএনএ রিপোর্টে দুজন অজ্ঞাত পুরুষের সন্ধান পাওয়া গেছে। কিন্তু তাদের এখনো গ্রেফতার বা সনাক্ত করতে পারেননি তদন্ত কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এএসপি শাহিদা রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। ডিএনএ রিপোর্ট অনুসারে দুজন অজ্ঞাত পুরুষের সন্ধান করা হচ্ছে। শিগগিরিই এ মামলার উল্লেখযোগ্য ফলাফল পাওয়া যাবে।’
তবে গত শুক্রবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে প্রশ্ন এড়িয়ে যেতে দেখা গেছে।
ঘটনার সময় মেঘের বয়স ছিল সাড়ে পাঁচ। এখন সে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ছে। হত্যার বিচার না হলে মেঘ বড় হলে, তাকে কি জবাব দেবেন, সেটি বড় চিন্তার বিষয় তার দাদি-নানির কাছে। পরিবারের জিজ্ঞাসা, হত্যাকাণ্ডের মূলরহস্য জানতে আর কতটা সময় অপেক্ষা করতে হবে?
মেঘের দাদি অর্থাৎ সাগর সরওয়ারের মা সালেহা মনির বলেন, ‘তদন্ত নিয়ে তারা অন্ধকারেই আছেন। নিশ্চয়ই কোথাও কোনো প্রতিবন্ধকতা আছে। আর সেকারণে তদন্ত এগুচ্ছে না।’
তিনি বলেন, ‘র্যাবকে প্রশ্ন করলে একই জবাব পাওয়া যায় যে, তারা দেখছে, তদন্ত করছে।’ এ অবস্থায় নিহতের পরিবারও ছেড়েছেন বিচারের আশা।
এদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সোহেল মাহমুদ জানান, চাইলে দুই সপ্তাহের মধ্যে ডিএনএ প্রতিবেদন দেওয়া সম্ভব।
-সময়ের সংলাপ২৪/ডি-এইচ
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন