ব্যাটসম্যানদের সামনে প্রথমে ছিল ফলো-অন এড়ানোর চ্যালেঞ্জ। এরপর ইনিংস যত বড় করা যায়। বাংলাদেশ ফলো-অনের হাত থেকে বাঁচলেও ১৭৬ রানের বড় লিড পেয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। যদিও শেষ সেশনে পেসাররা দারুণ বোলিং করে দুই উইকেট তুলে নিয়েছে কিছুটা স্বস্তি দিয়েছে বাংলাদেশকে।
শেষ বিকেলে স্বস্তি দিল পেসাররা
পচেফস্ট্রম টেস্টে তৃতীয় দিনের শুরুটা সতর্ক হয়ে খেলছিলেন তামিম ইকবাল ও মুমিনুল হক। দক্ষিণ আফ্রিকার পেসারদের সামলে রান তুলতে কিছুটা সংগ্রাম করতে হয়েছে তাদের। দৃঢ়তার সঙ্গে তাদের মোকাবেলা করেন দুজন। তবে দিনের প্রথম নয় ওভারে মাত্র সাত রান হলেও দশম ওভারে হাত খুলেন দুজন। রান আসে ১৭। অর্ধশতকের জুটি গড়েন তামিম ইকবাল ও মুমিনুল হক।
সকালে মরনে মরকেল আর কাগিসো রাবাদার দারুণ সব রিভার্স সুইং আর বাউন্স মোকাবেলা করেছেন তামিম ইকবাল। খেলেছেন ধৈর্য্যের সাথে। মাঝে মাঝে দারুণ সব শটে বল করছিলেন সীমানা ছাড়া। তবে তামিম আউট হয়েছেন পেসার আন্দিকো ফেলুকাওয়ায়োর নির্বিষ এক ডেলিভারিতে। লেগ স্টাম্পের বাইরের ডেলিভারিকে গ্ল্যান্স করতে চেয়েছিলেন তামিম। লাফ দিয়ে অসাধারণ এক ক্যাচ নেন উইকেটরক্ষক কুইন্টন ডি কক। ৩৯ রান করে আউট হন তামিম।
এরপর মুমিনুল হককে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ৬৯ রানের জুটি গড়েন দুজন। টেস্ট ক্যারিয়ারের দ্বাদশ অর্ধশতক হাঁকান মুমিনুল। কিছুটা দ্রুত গতিতে রান তুলতে থাকেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ২৬ রানের মাথায় জীবন পান রিয়াদ। কেশব মহারাজের বলে ক্যাচ তালুবন্দী করতে পারেননি কুইন্টন ডি কক। প্রথম সেশনে একটির বেশি উইকেট হারায়নি বাংলাদেশ।
ড্বিতীয় সেশনে এসে আবারো ভুগতে থাকে বাংলাদেশ। শতকের সম্ভাবনা জাগালেও ৭৭ রান করে কেশব মহারাজের বলে এডেইন মারক্রামের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান মুমিনুল। ১৫০ বলে ১২ চারে ৭৭ রানে ফিরলেন মুমিনুল। দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানের এটাই সর্বোচ্চ ইনিংস।
২২৭ রানে পঞ্চম উইকেটের পতন ঘটার পর সাব্বির রহমান হাল ধরেন। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও সাব্বির রহমানের ৬৫ রানের জুটিতে ফলো-অনের শঙ্কা দূর হয়। রিয়াদকে দারুণ সঙ্গ দিচ্ছিলেন সাব্বির। বাংলাদেশের রানের চাকাও ছিল সচল। ডুয়ানে অলিভিয়েরের ভেতরে ঢোকা বাউন্সার ডিফেন্স করতে চেয়েছিলেন সাব্বির। বল ব্যাটের কানায় এসে আঘাত হানে স্টাম্পে। থিতু হয়েও গড়তে পারেননি বড় স্কোর। ৩০ রান করে ফিরেন তিনি।
টেস্টে ফেরার ম্যাচে অর্ধশতক পূর্ণ করেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। অফ স্ট্যাম্পের বাইরের বল স্ট্যাম্পে টেনে আনেন রিয়াদ। শেষ হয় তার ৬৬ রানের ইনিংস। এরপর রান আউট হন তাসকিন আহমেদ। ৮ উইকেটে ৩০৮ রান নিয়ে চা বিরতিতে যায় বাংলাদেশ। তৃতীয় সেশনের শুরুতেই বিদায় নেন মেহেদি হাসান মিরাজ। কাগিসো রাবাদার বাউন্সার সামলাতে পারেননি। শেষদিকে মুস্তাফিজুর রহমান করেন অপরাজিত ১০ রান। বাংলাদেশ থামে ৩২০ রান করে। ১৭৬ রানের বড় লিড পায় দক্ষিণ আফ্রিকা।
১৭৬ রানের বড় লিড রয়েছে হাতে। দক্ষিণ আফ্রিকার দুই ওপেনার ডিন এলগার এবং এডেইন মারক্রাম। প্রথম ৭ ওভারে ৩০ রান তুলে ফেলে এ জুটি। তাদের জুটিটা ভাঙেন ডানহাতি পেসার শফিউল ইসলাম। প্রথম ইনিংসে ১৯৯ রান করা ডিন এলগার ফিরে যান ১৮ রান করে। ইনসুইঙ্গিং ডেলিভারির লাইন ধরতে পারেননি এলগার। বল ব্যাট ফাঁকি দিয়ে আঘাত হানে প্যাডে। শফিউলের আবেদনে আম্পায়ার সাড়া দিলেও রিভিউ নেন এলগার। তবে সেই রিভিউ ছিল বিফলা।
আরেক ওপেনার এডেইন মারক্রাম ফিরেন দুই ওভার পরেই। রাউন্ড দ্যা উইকেটে কাটার-মাস্টার মুস্তাফিজুর রহমানের কাটার বলে শট খেলতে প্রলুদ্ধ হন মারক্রাম। বল জমা পড়ে উইকেটরক্ষক লিটন কুমার দাসের হাতে। শুরু হয়ে যায় উদযাপন। আম্পায়ারও সাড়া দেন আবেদনে। যদিও ১৫ রান করা ফিরে যাওয়া মারক্রামের উইকেটের রিপ্লেতে দেখা গিয়েছে ব্যাটে বলে সংযোগ ছিল না। দূর্ভাগ্যই ছিল মারক্রামের। দিনের বাকিটা সময় নিরাপদেই কাটিয়ে দেন টেম্বা বাভুমা ও হাশিম আমলা। তৃতীয় দিন শেষে দ্বিতীয় ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকার রান ২ উইকেটে ৫৪। লিড ২৩০ রানের। হাশিম আমলা ১৭ রানে অপরাজিত ও ৩ রানে অপরাজিত আছেন টেম্বা বাভুমা। আলোক স্বল্পতার কারণে নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই খেলা বন্ধ করে দেওয়া হয়।
সংক্ষিপ্ত স্কোরঃ
দক্ষিণ আফ্রিকা ৪৯৬/৩, প্রথম ইনিংস, ডিক্লেয়ার্ড
এলগার ১৯৯, আমলা ১৩৭, মারক্রাম ৯৭
শফিউল ১/৭৪, মুস্তাফিজুর ১/৯৮
বাংলাদেশ ৩২০/১০, প্রথম ইনিংস
মুমিনুল ৭৭, রিয়াদ ৬৬, মুশফিক ৪৪
মহারাজ ৩/৯২, মরকেল ২/৫১
দক্ষিণ আফ্রিকা ৫৪/২, ১৫.৫ ওভার, দ্বিতীয় ইনিংস
এলগার ১৮, আমলা ১৭*, মারক্রাম ১৫
মুস্তাফিজুর ১/৭, শফিউল ১/১৮
দক্ষিণ আফ্রিকা ২৩০ রানে এগিয়ে।
-সময়ের সংলাপ24/ডি-এইচ