জবাইয়ের আগে গরুটারে একটু আস্তে ফালায়েন স্যার…অনেক আদরের গরু তো - সময়ের সংলাপ24
DHAKA WEATHER

Post Bottom Ad

খুব শীগ্রই আমরা Somoyersonglap24.com ওয়েবসাইট নিয়ে আসছি..

জবাইয়ের আগে গরুটারে একটু আস্তে ফালায়েন স্যার…অনেক আদরের গরু তো

Share This

দামাদামি শেষে গরুর মালিক ১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকায় গরু দিতে রাজি হলেন। রতন সাহেব এবার খুব খুশি। ১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা দিয়ে গরু কিনেছেন। এলাকার সবচে বড় কুরবানিটা উনিই দিচ্ছেন। মনে মনে প্র্যাক্টিস করছেন বারবার, লোকে দাম জিজ্ঞেস করলে কোন স্টাইলে বলবে। হাসিটা কেমন করে দিলে গরুর দামের সাথে মিলবে। এসব ভাবতে ভাবতে গরু নিয়ে বাসার দিকে হাঁটতে শুরু করলেন।

বাড়িতে ফোন করে বউকে বলে দিলেন, – ‌’হ্যালো শুনছো? গরু কেনা শেষ। সবাইকে বলে দিও, এবারে এলাকার সবচে বড় গরু কুরবানি দেয়া হচ্ছে, লোকে যদি না-ই জানলো। তবে আর লাভ কী!

গরু নিয়ে বাড়িতে আসতে আসতে প্রায় রাত হয়ে গেলো। ফলে আশপাশের তেমন কেউ গরু দেখতে এলো না।

হঠাৎ শুনলেন, দরজায় ঠক ঠক শব্দ। একখান অপরিচিত একটা গ্রাম্য মানুষ এসেছে। চোখে-মুখে ঘাম, পায়ে জুতা নেই। একটু পর পর চোখ মুছছে লোকটা। গায়ে ময়লা কাপড়। সাথে ১১/১২ বছরে ছোট একটা ছেলে।

রতন সাহেব খুব বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন,

– কে আপনি?
– স্যার আমি আফনের গ্যারেজে রাখা গরুটার মালিক!
– মালিক মানে! আমি গত সন্ধ্যায় এত দাম দিয়ে কিনে নিয়ে এলাম, আর আপনি বলছেন ‘গরুর মালিক!’
– না স্যার, আসলে আমি গরুটার মালিক আছিলাম, মানে গত সন্ধ্যায় আমিই গরুটা আফনের কাছে বিক্রি করছি।
– ও আচ্ছা, তো এত রাতে কেনো আসছো? ভুল করে টাকা কম দিয়েছিলাম? নাকি জাল নোট পড়েছে?

গ্রাম্যলোকটা চুপ করে আছে। চোখ থেকে পানি পড়ছে অনবরত।
রতন সাহেব বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন,

– আরে কী হয়েছে বলবা তো! কাপড়-চোপড় লাগবে? নাকি আরও টাকা চাও?
– না স্যার, আসলে গরুটারে একটু দেখতে আসছিলাম। আমার পোলাডায় সারা রাইত কিছু খায়নাই। বারবার গরুটারে দেখতে চাইতেছে। তাই এই রাইতে ৯ মাইল হাঁইট্যা আসছি স্যার। যদি কিছু মনে না করেন, আমারে একটু সুযোগ দিলে গরুটারে একটু দেইখ্যা যাইতাম।

রতন সাহেব নিস্তব্ধ হয়ে গেলেন। গ্যারেজ খুলে দিলেন। গ্রাম্য লোকটা ভেতরে ঢুকেই গরুকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করলেন। ছোট ছেলেটাও কাঁদছে আর লোকটাকে জড়িয়ে ধরে বলছে, ‌’বাজান, ওই স্যাররে ট্যাকা ফেরত দিয়া দেও, আমি গরু নিয়া যামু! বাজান! ও বাজান! আমি গরু নিয়া যামু’

গ্রাম্যলোকটা তার ছেলেকে কোনো উত্তর দিতে পারছে না। শুধু কেঁদেই যাচ্ছে। রতন সাহেব দূর থেকে চুপচাপ দেখে যাচ্ছেন সব। বেশ কিছুক্ষণ পরে দুজন বেরিয়ে এলো। চোখ মুছতে মুছতে বললো,

– স্যার, আফনেরে কষ্ট দিলাম, মনে কিছু নিয়েন না।
– ও কি তোমার ছেলে?
– জী স্যার, একটা পোলাই। এইডারে পড়ালেখা করানোর জন্যই আদরের গরুটা বেইচ্যা দিলাম। গেলাম স্যার…দোয়া রাইখেন…।
– একটু দাঁড়াও,

রতন সাহেব ঘর থেকে এক হাজার টাকার একটা নোট জোর করে ছোট ছেলেটার হাতে গুজে দিলেন। বললেন, ঈদের দিন এসে বাসায় খেয়ে যেয়ো। বিদায় দিয়ে রতন সাহেব ভেতরে ঢুকতে গেলেন। লোকটা আবার চিৎকার করতে করতে দৌঁড়ে এলো,

– স্যার স্যার, আরেকটা কথা স্যার,
– হ্যা, বলো,
– জবাইয়ের আগে গরুটারে একটু আস্তে ফালায়েন স্যার…অনেক আদরের গরু তো…।

এতটুকু বলেই লোকটা আবার কেঁদে উঠলো। আবার কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে রতন সাহেবকে সালাম দিয়ে রাস্তার দিকে হাঁটতে শুরু করলো গ্রাম্যলোকটা। রতন সাহেব অনেক দিন পরে অনুভব করলেন, নিজের চোখ দিয়ে টপটপ পানি পড়ছে।

গেইটের গ্রিলে ভর করে নিশ্চুপ তাকিয়ে আছেন,
সত্যিকারের কুরবানি দেয়া খালি পায়ের অচেনা মানুষটার দিকে…

লেখাটি রেডিও১৬ আনার ফেসবুক থেকে সংগৃহীত.

কোন মন্তব্য নেই: